সূত্রের খবর, নির্মাতারা প্রতি ডোজের দাম ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে রাখতে চাইছে। যদিও সরকার মনে করছে ভারতে মতো দেশে এই দাম খুবই বেশি। সূত্রের আরও খবর, জাইকোভ ডি-র প্রথম ডোজের ২৮ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ এবং ৫৬ দিনের মাথায় তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে। আহমেদাবাদের জাইডাস ক্যাডিলার তৈরি এই টিকা অন্যান্য টিকার থেকে আলাদা। কারণ এই টিকা দিতে সূচের ব্যবহার করতে হবে না। ত্বকের নিচে একটি হাই প্রেসার জেট ব্যবহার করেই টিকা দেওয়া যাবে। ফার্মাজেট (PharmaJet) নামে একটি সংস্থার তৈরি ডিভাইজের সাহায্যে এই টিকা দেওয়া হবে। জাইকোভ-ডি ভারতে তৈরি হওয়া প্রথম টিকা যা ১২-১৭ বছর বয়সীদের দেওয়া হতে পারে।
advertisement
জাইকোভ-ডি টিকা কেন অন্যদের থেকে আলাদা?
জাইকোভ-ডি চলতি বছরের ২০ অগাস্ট ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার (Drug Controller General of India) থেকে জরুরি অনুমোদন পেয়েছে। গত ১ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে জাইকোভ-ডি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার কাছে আবেদন করেছিল টিকা নির্মাতা সংস্থা ‘ক্যাডিলা হেল্থকেয়ার লিমিটেড’। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের (Covaxin) পরে এটাই ভারতে তৈরি দ্বিতীয় টিকা। জাইডাস ক্যাডিলা জানিয়েছে, এটি একটি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত টিকা, যা মানুষের ব্যবহারের জন্য প্লাজমিড ডিএনএ প্ল্যাটফর্মে সফলভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি ভারতের প্রথম ভ্যাকসিন যা ১২-১৭ বছর বয়সীদের দেওয়া যেতে পারে। এই টিকার একটি অংশ শিশুদেরও দেওয়া যতে পারে, যাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আরও পড়ুন - Viral Jahnvi! মাথায় আলুলায়িত চুলে গোঁজা ফুল!উত্থিত নিতম্ব, উদ্ভিন্ন যৌবনে ভরা খোলামেলা পোশাক
জাইডাস ক্যাডিলা এই টিকার দ্রুত প্লাগ অ্যান্ড প্লে প্রযুক্তি-র কথাও জানিয়েছে। এই টিকা করোনা ভাইরাসের মিউটেশন মোকাবিলায় নিজেকে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। জার্নাল ‘নেচার’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ দিন ধরে ডিএনএ প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি টিকা নিয়ে কাজ করছেন, কিন্তু তার একটি দুর্বলতা হল প্রতিরোধ ক্ষমতা। এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে আগের ডিএনএ টিকার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও জাইকোভ-ডি প্রচলিত দুই ডোজের টিকার তুলনায় তিন-ডোজের টিকা। যদিও এখন অনেকেই বুস্টার শটের কথা বলছে। তবে, একটি ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দিকে নজর রেখে জাইকোভ-ডি-র একটি ডেলিভারি মেকানিজম আছে, যা অন্য কোভিড টিকার থেকে ভিন্ন। পেশিতে ইনজেকশনের পরিবর্তে এই টিকা চামড়ার নিচে ডিভাইজ ব্যবহার করে পাম্প করা হবে সূচ না ব্যবহার করেই। যা ইনজেকশনের চেয়ে কম যন্ত্রণাদায়ক।
কী ভাবে ইনজেকশন ছাড়া টিকা দেওয়া হবে?
জাইকোভ-ডি হল একটি 'ইন্ট্রাডার্মাল ভ্যাকসিন' যা একটি নিডল-ফ্রি সিস্টেম ব্যবহার করে প্রয়োগ করা হয়। যাতে কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়। সূচ আতঙ্কে অনেকেই টিকা নিতে চাইছে না, এই প্রক্রিয়া তাদের উদ্বেগ কাটাবে। মার্কিন সংস্থা ফার্মাজেট, যার ট্রপিজ নিডল-ফ্রি-ইনজেক্টর ব্যবহার করে জাইকোভ-ডি টিকা দেওয়া হবে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে তাদের ডিভাইজটি একটি সংকীর্ণ, সুনির্দিষ্ট তরল প্রবাহ সৃষ্টি করে, যা ওষুধ বা টিকাকে ত্বকে পৌঁছে দেয়। এই প্রযুক্তি চল্লিশের দশক থেকে চলে এসেছে। সংস্থাটি বলেছে যে এটির ব্যবহার নিরাপদ এবং তাকে কার্যকর করতে আরও উন্নত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন - IPL 2021: ব্যাট হাতে হতশ্রী MS Dhoni, এখনও অবধি আইপিএলে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স মাহির
এই টিকার কার্যকারিতা হার কী?
তৃতীয় ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলাফল দেখিয়েছে যে এই টিকা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ৬৬.৬ শতাংশ কার্যকার। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে যে ট্রায়ালে টিকা নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের কেউই গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়নি বা মারা যায়নি। তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল সারা দেশে ৫০টি সাইটে চালানো হয়। ২৮ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক ট্রায়ালে (Clinical Trials) অংশ নিয়েছিলেন। দেশে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যখন শিখরে ছিল, সেই সময়ে ট্রায়াল চলেছিল। তাই জাইডাস ক্যাডিলা আত্মবিশ্বাসী ছিল যে তাদের এই টিকা করোনার নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেন, বিশেষ করে ডেল্টার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা দেখাবে। যদিও জাইকোভ-ডি-র কার্যকারিতার হার অন্যান্য নিউক্লিক অ্যাসিড টিকার তুলনায় যথেষ্ট কম।
জাইকোড-ডি কী ধরনের টিকা?
জাইডাস ক্যাডিলার এই শট একটি শ্রেণীর অন্তর্গত, যা জেনেটিক বা নিউক্লিক অ্যাসিড টিকা নামে পরিচিত। এই টিকা ভাইরাসের জিনগত তথ্যের একটি অংশ শরীরে ঢুকিয়ে দিয়ে কোষগুলিকে ভাইরাসের একটি মূল উপাদান স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে প্ররোচিত করে। যা নভেল করোনাভাইরাস মানব কোষ আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করে। ইমিউনো সিস্টেম অ্যান্টিবডি তৈরি করে এই স্পাইক প্রোটিনকে চিনে নেয় এবং আক্রমণ করে। জেনেটিক টিকা আরএনএ-র উপর ভিত্তি করে তৈরি করা যেতে পারে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত ফাইজার (Pfizer) এবং মডার্নার (Moderna) টিকা।
ডোজ, স্টোরেজ এবং ডেলিভারি সম্পর্কে তথ্য:
বেশিরভাগ দুই ডোজের টিকা চার সপ্তাহের ব্যবধানে দেওয়া হয়। কিন্তু জাইকোভ-ডি তিন ডোজের টিকা। যদিও নির্মাতা সংস্থা জাইডাস ক্যাডিলা বলেছে যে তারা জন্য দুই ডোজ টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে, যাতে ৩ মিলিগ্রাম করে দু'টি ডোজ দেওয়া হবে। কার্যকারিতা তিনটি ডোজ নেওয়ার মতোই হবে। এই টিকাটি ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কিন্তু কম্পানি বলেছে যে এই টিকা কমপক্ষে তিন মাসের জন্য ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যায়। প্রতি বছর এই টিকার ১০-১২ কোটি ডোজ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে জাইডাস ক্যাডিলা।
জেনেটিক টিকা কি নিরাপদ? এর উৎপাদনও কি কঠিন?
ভাইরাসের কোনও জীবন্ত উপাদান ব্যবহার না করার জন্য এই ধরনের টিকা ব্যবহারে সংক্রমণ ঝুঁকি থাকে না। এই টিকা এনকোড করা কিছু জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করে মাত্র। একবার ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্স করা হলে, এটি বেশ সহজেই উৎপাদন করা যেতে পারে। সার্স-কোভ-২-র জিনোম সিকোয়েন্সড হওয়ার দু'মাসের মধ্যে মডার্নার আরএনএ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়। জাইডাস ক্যাডিলা বলেছে যে তাদের টিকা ভবিষ্যতের যে কোনও ভাইরাস মিউটেশনকে টার্গেট করতে পারে।