লিঙ্গ অনুপাতের উন্নতি কি আদৌ হয়েছে?
২০১৯-২০২১ সালের মধ্যে করা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-তে এটা জানানো হয়েছে যে পূর্ববর্তী বছরগুলির থেকে লিঙ্গ অনুপাতের উন্নতি হয়েছে ভারতে। প্রথমবারের মতো ভারতে পুরুষদের তুলনায় মহিলার সংখ্যা বেশি হয়েছে। যদিও তথ্য থেকে বোঝা যায় যে পুত্র সন্তান পাওয়ার বাসনা রয়েই গেছে ভারতীয়দের মনে। ১৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৪ শতাংশ মহিলা বলেছে যে তারা কন্যার চেয়ে বেশি পুত্র চায়।
advertisement
মেঘালয় কতটা জোর দেয় কন্যা সন্তানের উপরে?
ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে মিজোরামের পুরুষ (৩৭ শতাংশ), লাক্ষাদ্বীপ (৩৪ শতাংশ), মণিপুর (৩৩ শতাংশ) এবং বিহারের মহিলারা (৩১ শতাংশ) কন্যার চেয়ে অতিরিক্ত পুত্রের জন্য সবচেয়ে চরম আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। পুত্রের তুলনায় অতিরিক্ত কন্যার অনুরূপ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে যে বিহারের (Bihar) মহিলাদের মধ্যে পার্থক্যটি সবচেয়ে তীক্ষ্ণ। ১৬ শতাংশ মহিলা জানিয়েছে যে তাদের অতিরিক্ত পুত্রের প্রয়োজন, মাত্র ২ শতাংশ মহিলার অতিরিক্ত কন্যার প্রয়োজন। দেশের মধ্যে মেঘালয়ের মহিলারা হলেন একমাত্র, যাঁরা পুত্রের চেয়ে অতিরিক্ত কন্যা পছন্দ করেন। মেঘালয়ের প্রধান উপজাতিরা উত্তরাধিকারের একটি মাতৃসূত্রীয় ব্যবস্থা (Matrilineal System Of Inheritance) পালন করেন, সেখানে ২১ শতাংশ মহিলার অতিরিক্ত কন্যার প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে পুত্র না সন্তান থাকা দম্পতিদের তুলনায় যাদের ইতিমধ্যেই একটি পুত্র সন্তান আছে, তাঁদের আরও একটি সন্তানের প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। এছাড়াও মেঘালয়ে যে কোনও রাজ্যে তুলনায় পুরুষদের সবচেয়ে ভাল অনুপাত রয়েছে (১১ শতাংশ), যাঁদের পুত্রের চেয়ে অতিরিক্ত কন্যার প্রয়োজন। তবে বিভিন্ন রাজ্যের মতো মেঘালয়েও পরবর্তী প্রজন্ম (১৮ শতাংশ) কন্যার চেয়ে অতিরিক্ত পুত্র কামনা করে।
মেঘালয়কে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বলা কি যুক্তিযুক্ত?
মেঘালয়ের মহিলাদের কন্যা সন্তানের আকাঙ্ক্ষার কারণটিও স্পষ্ট। শিলং-ভিত্তিক সামাজিক কর্মী অ্যাঞ্জেলা রাঙ্গদ বলেন, "আমরা একটি মাতৃতান্ত্রিক সমাজ।" দ্য শিলং অকেশন্সের সম্পাদক প্যাট্রিসিয়া মুখিম জানিয়েছেন যে স্বাস্থ্য সমীক্ষায় মেঘালয়কে 'মাতৃতান্ত্রিক সমাজ' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, "মেঘালয় একটি মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। যেখানে লিঙ্গ সমতা এবং ন্যায্যতার উপর গভীর গবেষণা প্রচলিত। যদিও এখানে লিঙ্গ পক্ষপাত রয়েছে। মহিলাদের সাধারণত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র বংশই মায়ের বংশ থেকে আসে। আর মেয়েরা বংশের চিরস্থায়ী সলতে। যা আরও বোঝায় যে যখন একটি মেয়ে স্বামী বা সঙ্গীর দ্বারা পরিত্যক্ত হয়, তখন সন্তানদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব কেবল তারই। তাই মেঘালয় সমাজকে মাতৃতান্ত্রিক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার অর্থ হতে পারে যে সমীক্ষাটি আসলেই ত্রুটিপূর্ণ।"
মেঘালয়ের মাতৃতান্ত্রিক সমাজের ঐতিহ্যগত স্বরূপ কেমন?
খাসি (Khasi), গারো (Garo)-সহ মেঘালয়ের অন্য অন্য উপগোষ্ঠী সমূহের মধ্যে মাতৃবংশীয় সমাজ ব্যবস্থা চলে আসছে। খাসিদের মাতৃবংশীয় প্রথা পৃথিবীর বৃহৎ মাতৃবংশীয় সংস্কৃতিসমূহের অন্যতম। নারীর উত্তরপুরুষের মাধ্যমে বংশের আভাস পাওয়াকে মাতৃবংশ বলে। এই সমাজ ব্যবস্থায় কোনও একজন ব্যক্তির মাধ্যমে তাঁর মায়ের বংশের সূচনা হয় এবং সম্পত্তির বা উপাধির উত্তরাধিকার জড়িত থাকে। মেঘালয়ের মাতৃপ্রধান সমাজে নারীর ভূমিকা প্রধান। পরিবারের ছোট মেয়ে সাধারণত সম্পত্তির অধিকার পান। বিয়ের পর জামাই শ্বাশুড়ির গৃহে থাকেন। সন্তানরা মায়ের উপাধি নেন। কন্যা সন্তানের জন্ম না হলে কোনও দম্পতি কন্যা সন্তান দত্তক নিতে পারেন এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার তাকে হস্তান্তর করেন। মেঘালয়ের কয়েকটি এলাকায় পুত্র সন্তান জন্মের বিপরীতে কন্যা সন্তানের জন্ম উদযাপন করা হয়। এখানে নারীদের একের অধিক বিয়ের অধিকার রয়েছে।