এই ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে, বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা নতুন ভ্যারিয়ান্টটিকে (Omicron Symptoms) ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এর যে কোনও নতুন মিউটেশনের ওপর সক্রিয় নজর রাখছেন। যদিও নতুন কোভিড (Coronavirus) ভ্যারিয়ান্টের সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ উপসর্গ আগের ভ্যারিয়ান্টগুলির মতোই সক্রিয় রয়েছে। ফলে কোনও পজিটিভ ব্যক্তির শরীরে এই নতুন ভ্যারিয়ান্টের খোঁজ পাওয়া এত দিন বেশ কঠিনই মনে হচ্ছিল। অতি সম্প্রতি ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিতদের মধ্যে কিছু নতুন উপসর্গ (Omicron New Symptoms) লক্ষ করা গিয়েছে। এমনকী সম্পূর্ণ টিকাকরণ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এতে আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিডের নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনের উপসর্গগুলিকে (Omicron New Symptoms) কিছু দিন আগে পর্যন্তও বেশ ‘মাইল্ড’ বলা গেলেও এখন পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অন্য রকম।
advertisement
আরও পড়ুন - Weather Update: হুড়মুড়িয়ে নামছে তাপমাত্রার পারদ, ‘এই’ এলাকায় জারি অরেঞ্জ অ্যালার্ট
কোভিডের নতুন ভ্যারিয়ান্টটি জ্বর-সর্দি ইত্যাদি উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে
এখনও পর্যন্ত, ওমিক্রনে (Omicron New Symptoms) আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে হালকা সংক্রমণের লক্ষণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যার ফলে সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই এটিকে মাইল্ড পজিটিভ কেস বলা হচ্ছে।
মাথায় ব্যথা, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, ক্লান্তি বোধ করা এবং ঘন ঘন হাঁচি ইত্যাদি উপসর্গগুলি সাধারণত যে কোনও ফ্লুতেই বিদ্যমান থাকে। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। তবে যুক্তরাজ্যের ZOE কোভিড স্টাডি অ্যাপের প্রধান প্রফেসর টিম স্পেক্টরের (Tim Spector) মতে, সর্দি- কাশি ইত্যাদি উপসর্গ লক্ষিত হচ্ছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির অবিলম্বে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত, তিনি তার জন্য অনুরোধও জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন - Panchang 4 January: পঞ্জিকা ৪ জানুয়ারি: দেখে নিন নক্ষত্রযোগ, শুভ মুহূর্ত, রাহুকাল এবং দিনের অন্য লগ্ন!
উপরন্তু, তিনি বিশেষ ভাবে বলেছেন যে জ্বর, কাশি এবং গন্ধ হ্রাসের বা না পাওয়ার মতো লক্ষণগুলি এখন কোভিডের ক্ষেত্রে প্রায় না হওয়ার কোঠায় এসে পৌঁছেছে। বেশিরভাগ ব্যক্তির দেহেই এখন আর কোভিডের পুরনো লক্ষণগুলি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়াও তিনি আরও জানিয়েছেন, ওমিক্রন-সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত রিপোর্ট করা কিছু সাধারণ লক্ষণ হল হালকা জ্বর, ক্লান্তি, গলায় ঘা, শরীরে ব্যথা এবং রাতের দিক অধিক ঘাম হওয়া, গন্ধ এবং স্বাদ না পাওয়া ইত্যাদি।
সম্পূর্ণ টিকা দেওয়া ব্যক্তিরাও ওমিক্রন সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে, তাদেরও উপসর্গ দেখা দিতে পারে
যদিও বা করোনর দু’টি ভ্যাকসিন এবং বুস্টার শট ভাইরাস এবং এর ভ্যারিয়ান্টগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার একমাত্র পথ, তার পরেও আমাদের মনে রাখতে হবে, সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে এমন অনেকেই কিন্তু নতুন এই ভ্যারিয়ান্টটিতে আক্রান্ত হয়েছে- হলেই বা সে সংখ্যা নেহাতই নগণ্য।
কোভিড-১৯-এর (coronavirus) দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়, টিকা না দেওয়া ব্যক্তি ছাড়াও, অনেক সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিও সংক্রমিত হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গও বিকাশ করেছিল। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, যদিও টিকা দেওয়া জনসংখ্যা তুলনামূলক ভাবে গুরুতর সংক্রমণ থেকে নিরাপদ, তবুও তারা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।
প্রফেসর স্পেক্টরের মতে, ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্ট টিকা দেওয়া বা না দেওয়া উভয় ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রেই সমান ভাবে সক্রিয়। যদিও বা টিকা দেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সংক্রমনের হার অনেকটাই কম। সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজনের বমি বমি ভাব, সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি, গলা ব্যথা এবং মাথা ব্যথার মতো সামান্য উপসর্গ রয়েছে।
নতুন উপসর্গ তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে (Omicron New Symptoms)
ZOE কোভিড স্টাডি অ্যাপটি সম্প্রতি সবচেয়ে অস্বাভাবিক ওমিক্রন লক্ষণগুলির মধ্যে দু'টি লক্ষণকে তালিকাভুক্ত করেছে যা হয় তো এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি। ওই অ্যাপ অনুযায়ী ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বমি এবং ক্ষুধামান্দ্য বা খিদে না থাকা এই দু’টি লক্ষণ ধরা পড়েছে।
স্টাডি অ্যাপের প্রধান, স্পেক্টর বলেছেন যে এই দু'টি উপসর্গ ডাল ভ্যাকসিনেটেড লোকেদের মধ্যে এবং যারা ইতিমধ্যে তাদের বুস্টার শট পেয়েছে তাদের মধ্যেও নজরে পড়ছে।
উপসর্গ দেখা দিলেই অবিলম্বে পরীক্ষা করানো এবং নিজেকে আইসোলেট করা
হাজার হাজার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কেস বিশ্লেষণ করার পরে, অ্যাপটি এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, সর্দি, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, হাঁচি এবং গলা ব্যথা এই সব সাধারণ উপসর্গই ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিশেষ করে আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিকে এই প্রবণতাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর হতে শুরু করে।
ওই অ্যাপ অনুযায়ী, আমাদের পরিজন বা চেনাজানা ব্যক্তিরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলির মধ্যে কোনও একটি যদি বিকাশের পর্যায়ে থাকে তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে পরীক্ষা করাতে হবে। ফলাফল 'নেতিবাচক' না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আইসোলেট থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলি উপসর্গ শুরু হওয়ার পরে কমপক্ষে ১০ দিনের জন্য আলাদা করার পরামর্শ দেয়।
আমরা যদি অতীতে কোভিড পজিটিভ হয়ে থাকি তা সত্ত্বেও পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
আমরা যারা ইতিমধ্যেই কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি তাদেরও অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এমনকী, যদি আমাদের পূর্ববর্তী সংক্রমণ থেকে কিছুটা প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা আয়ত্ত হয়ে থাকে তাহলেও সাবধানে থাকতে হবে। কেন না, WHO-এর রিপোর্ট অনুসারে ওমিক্রনে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ওমিক্রন অন্যান্য ভ্যারিয়ান্টের তুলনায় অধিক সংক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে। তবে এই বিষয়ে প্রমাণ সাপেক্ষে তথ্য সীমিত।
এই কোভিড পরিস্থিতিতে উপযুক্ত আচরণ অনুসরণ করা, নিয়মিত মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, এবং সামাজিক দূরত্ব বজার রেখে প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে যাওয়াই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ
এই ধরনের সঙ্কটময় সময়ে, যখন ওমিক্রন সারা বিশ্ব জুড়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধে মনোযোগ দেওয়া উচিত। সাবধানে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করতে হবে। নিয়মিত মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, ভিড় স্থানে না যাওয়া এবং উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলির বিষয়ে সতর্ক থাকাই এখন দায়িত্ববান নাগরিকের কর্তব্য।