এ বার দেখে নেওয়া যাক, কোন রাজ্য বাজি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে!
দিল্লি:
দূষণের কথা উঠলে প্রথমেই নাম আসবে দিল্লির। প্রতি বছর দীপাবলির পরেই মারাত্মক দূষণের সম্মুখীন হয় দেশের রাজধানী শহর। তাই এ বার বাজি বিক্রি এবং বাজি পোড়ানোর উপর পুরোপুরি ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দিল্লি পলিউশন কন্ট্রোল কমিটি। আর আগামী ১ জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। ওই কমিটির তরফে একটি লিখিত নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “আগামী বছরের পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত গোটা দিল্লিতে যে কোনও রকম বাজি বিক্রি এবং বাজি পোড়ানো সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধি করা হচ্ছে।”
advertisement
হরিয়ানা:
ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন (NCR)-এর অন্তর্গত ১৪টা জেলায় যে কোনও রকম বাজি বিক্রি এবং ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করেছে হরিয়ানা সরকার। আর অন্যান্য অংশেও বেশ বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (State Disaster Management Authority)-এর নির্দেশ অনুসারে যে জেলাগুলি পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে, সেগুলি হল- ভিওয়ানি, চরখি দাদরি, ফরিদাবাদ, গুরুগ্রাম, ঝজ্জর, জিন্দ, করনাল, মহেন্দ্রগড়, নুহ, পলবল, পানিপত, রেবাড়ি, রোহতক, সোনিপত। সেই নির্দেশে আরও জানানো হয়েছে, যে সব এলাকায় বায়ুর মান মাঝারি রকম অথবা ভালো, সেই সব এলাকায় শুধুমাত্র সবুজ বাজি (Green Crackers) বা পরিবেশ বান্ধব বাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে অনুমতি রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে অনেকে জড়ো হয়ে খোলা জায়গায় বাজি পোড়ানো যাবে। শুধু দীপাবলীতেই নয়, বিয়েবাড়ি-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষেও এই সবুজ বাজিই পোড়ানো যাবে। আর যে সমস্ত বিক্রেতার কাছে লাইসেন্স রয়েছে, তাঁরাই শুধুমাত্র বাজি বিক্রি করতে পারবেন। এ দিকে, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ডের তরফেও কিছু শহরের তালিকা প্রকাশ করা হবে, যেখানে আতসবাজি পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে।
কর্নাটক:
দীপাবলী উপলক্ষে শুধুমাত্র সবুজ বাজি বা পরিবেশবান্ধব বাজি বিক্রি এবং পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছে কর্নাটক সরকার। শুধু তা-ই নয়, রাজ্যের মানুষকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়ম এবং বিধিনিষেধ মেনে চলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব পি রবিকুমারের স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে যে, “সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সবুজ বাজি ছাড়া অন্য কোনও রকম বাজি বিক্রি করা এবং পোড়ানো যাবে না।” সংশ্লিষ্ট দফতর এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে সব বাজি বিক্রেতা প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছেন, তাঁরাই শুধুমাত্র সবুজ বাজি বিক্রি করতে পারবেন। আর সবুজ বাজি বিক্রির দোকান খোলা থাকবে ১ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত।
পশ্চিমবঙ্গ:
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (WBPCB) প্রথমে জানিয়েছিল যে, শুধুমাত্র কালী পুজো এবং দীপাবলীর সন্ধেবেলা দু’ঘণ্টা মানে রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবুজ বাজি বা পরিবেশ বান্ধব বাজি পোড়ানো যাবে। আবার ছট পুজোর দিন সকালে দু’ঘণ্টার জন্য মানে সকাল ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সবুজ বাজি পোড়ানো যাবে। আর বড়দিনের আগের রাত বা ক্রিসমাস ইভ-এ এবং বর্ষশেষের রাতে বা নিউ ইয়ার্স ইভ-এ শুধুমাত্র ৩৫ মিনিটের জন্য সবুজ বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল বোর্ড। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সবুজ বাজি পোড়ানোর বিষয়ে বোর্ডের যে নির্দেশ, তা নাকচ করে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সম্প্রতি কালী পুজো, দিওয়ালি এবং অন্যান্য উৎসব উপলক্ষে বাজির বিকিকিনি এবং ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। মূলত বায়ুদূষণে রাশ টানতেই এই সিদ্ধান্ত কোর্টের। আদালত জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় সব রকম আতসবাজিই পড়বে আর আতসবাজি বলতে সব ধরনের বাজিকেই বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ শব্দবাজিও এবং আলোর বাজিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
পুণে:
সংবাদমাধ্যমের কাছে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পুণের কর্তৃপক্ষ ‘সুতলি’ বা ‘অ্যাটম’ বম্ব নামে এক ধরনের বাজি তৈরি, বিক্রি নিষিদ্ধ করেছেন। সেই সঙ্গে এই ধরনের বাজি নিজের কাছেও রাখা যাবে না বলেই জানানো হয়েছে। শহরে ২৭ অক্টোবর থেকে বাজি বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেটা চলবে আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু যে সব শব্দবাজির আওয়াজ ১২৫ ডেসিবেলের বেশি, সেই সব বাজি ফাটাতে নিষেধ করেছে দফতর। আর ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন যে, রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনও রকম শব্দবাজি ফাটাতে নিষেধ করা হয়েছে মানুষকে।
ছত্তিসগঢ়:
ছত্তিসগঢ় সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী, দীপাবলী এবং গুরুপরবে রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা, ছট পুজোয় সকাল ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ক্রিসমাস এবং নিউ ইয়ার উপলক্ষে রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে। এমনিতে নির্ধারিত শব্দসীমার বেশি শব্দ উৎপন্ন করে, এমন বাজি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর যদি আতসবাজিতে লিথিয়াম, আর্সেনিক, অ্যান্টিমনি, সীসা, পারদের মতো বিষাক্ত উপাদান পাওয়া যায়, তা হলে সেই বাজি প্রস্তুতকারী সংস্থার লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। আর অনলাইনেও বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পুদুচেরি:
দীপাবলির প্রাক্কালে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে খুবই সস্তায় বাজি বিক্রির অনুমতি মিলেছিল। সরকারি এজেন্সি প্যাপস্কো (Papsco) এই অঞ্চলে ভর্তুকি দামে বাজি বিক্রির জন্য বেশ কিছু দোকান গড়েছে। সাধারণ মানুষকে ৭৫ শতাংশ ভর্তুকিতে আতসবাজি দিচ্ছে এই এজেন্সি।
রাজস্থান:
এই বছর দীপাবলীতে শুধুমাত্র সবুজ বাজি বা পরিবেশবান্ধব বিক্রি এবং পোড়ানোর ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছে রাজস্থান সরকার। তবে আসন্ন উৎসবের মরসুমে বাজি পোড়ানোর সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফে প্রকাশ করা সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দিওয়ালি ও গুরুপরবের অনুষ্ঠানে রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, ছট পুজোয় সকাল ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারে রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে।
সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, যে সব এলাকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) খুবই খারাপ বা নিম্নগামী, সেই সব এলাকায় আতসবাজির ব্যবহার বরাবরের জন্যই নিষিদ্ধ থাকবে।