জানানো হয়েছে, এই কার্ডে (Digital Health ID Card) থাকবে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আওতায় ‘ন্যাশনাল হেল্থ অথরিটি’-র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবে এই স্বাস্থ্য কার্ড। ১৫ অগস্ট দেশের ছ’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শুরু হয়েছে এই প্রকল্প। প্রথমে এক লক্ষের বেশি নাগরিককে দেওয়া হয়েছে এই কার্ড। তার পরে ধীরে ধীরে দেশের বাকি রাজ্যগুলিতে চালু হবে এই প্রকল্প। কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন’-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন নাগরিকরা।
advertisement
আরও পড়ুন: আঁচ পায়নি কেউ, হঠাৎই নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে হাজির প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ডিজিটাল কার্ডে (Digital Health ID Card) প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য থাকবে। অর্থাৎ তাঁর কী কী শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তিনি কবে কবে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন, তাঁর কী কী শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে, চিকিৎসক তাঁকে কী কী ওষুধ খেতে বলেছেন, সেই সব তথ্য এই কার্ডের মধ্যে থাকবে। কেউ যদি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে বাস করতে শুরু করেন, বা চিকিৎসক বদলান, সে ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা হবে না। কারও প্রয়োজন পড়লে অন্য কোনও নাগরিকের তথ্য জানতে পারবেন। তবে অবশ্যই তার জন্য সংশ্লিষ্ট নাগরিকের অনুমতির প্রয়োজন।
কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কার্ডে (Digital Health ID Card) নাম নথিভুক্ত করতে কোনও খরচ হবে না বলেই জানানো হয়েছে। নাগরিকদের তথ্য নথিভুক্ত থাকলে সেই তথ্য অনুযায়ী রাজ্যগুলির জন্য স্বাস্থ্য খাতে আর্থিক বরাদ্দ করতে সুবিধা হবে বলেই জানিয়েছে কেন্দ্র।
কী ভাবে একটি ইউনিক হেলথ আইডি কাজ করবে?
এই স্কিমটি চারটি অপরিহার্য অংশ নিয়ে গঠিত - অনন্য ডিজিটাল হেলথ আইডি, স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার রেজিস্ট্রি, স্বাস্থ্য সুবিধা রেজিস্ট্রি এবং ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড।
এই চারটি ব্লকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার জন্য ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করাই এই স্কিমের প্রথম উদ্দেশ্য। পরবর্তী পর্যায়ে, সরকার টেলিমেডিসিন এবং ই-ফার্মেসিকে একীভূত করার পরিকল্পনা করছে।
আরও পড়ুন: ১৯ রাজ্য়ে কোভিড-মৃত্যু শূন্য! স্বস্তির মধ্যে গলার কাঁটা শুধুই কেরল
সরকারের মতে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে একজন ব্যক্তির শনাক্তকরণের প্রক্রিয়াকে মানসম্মত করার জন্য একটি অনন্য স্বাস্থ্য আইডি গুরুত্বপূর্ণ। "স্বাস্থ্য আইডি-টি ব্যবহার করা হবে অনন্যভাবে ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা, তাদের প্রমাণীকরণ করা এবং তাদের স্বাস্থ্য রেকর্ড (শুধুমাত্র রোগীর অবহিত সম্মতিতে) একাধিক সিস্টেম এবং স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে থ্রেডিং করার জন্য।"
স্বাস্থ্য রেকর্ড তৈরি করা হবে কী পদ্ধতিতে?
প্রথম ধাপে, একটি স্বাস্থ্য আইডি তৈরি করা হবে যার পরে একজন ব্যক্তির কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য নেওয়া হবে। এই তথ্যগুলি সেই ব্যক্তির সম্মতি নেওয়ার পরে, স্বাস্থ্য আইডির সাথে সংযুক্ত করা হবে। এনডিএইচএম এর ওয়েবসাইট অনুসারে, 'পার্সোনাল হেলথ রেকর্ড-সিস্টেম (পিএইচআর)' নামে পরিচিত তথ্য একজন ব্যক্তিকে তার স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে তথ্য পরিচালনা করতে সক্ষম করবে। এর মধ্যে একটি অনুদৈর্ঘ্য রেকর্ড দেখা, সমস্ত স্বাস্থ্য তথ্য, ল্যাব রিপোর্ট, চিকিত্সার বিবরণ, এক বা একাধিক স্বাস্থ্য সুবিধা জুড়ে ডিসচার্জ সারসংক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশন বা জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনের ঘোষণা গত বছরই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে লালকেল্লা থেকে তিনি এই নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। এত দিন পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই প্রকল্প চালু থাকলেও এদিন থেকে দেশজুড়ে এই প্রকল্পের সূচনা হল।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে দেশবাসী বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। এই প্রকল্প স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। দেশের প্রত্যেক নাগরিককে ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হবে। যেখানে নাগরিকদের ডিজিটাল হেল্থ রেকর্ড থাকবে। আর এতে চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয়ে সুবিধা হবে। চিকিৎসা নিয়ে গরিব-মধ্যবিত্তদের যাবতীয় হয়রানি দূর হয়েছে। হাসপাতালে ভরতি প্রক্রিয়াও সহজ হবে। গরিবরা সুবিধাও পাবেন। আয়ুস্মান ভারতে গোটা দেশের সুবিধা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে তৈরি হয়েছে নয়া স্বাস্থ্য নীতি। দেশে এমন এক হেল্থ মডেল কাজ করছে, যাতে চিকিৎসার খরচ কমে। অত্যাবশকীয় ওষুধের দাম কম করা হয়েছে। প্রতি তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে একটি করে মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা হবে। এছাড়া হাসপাতালে বেড়েছে চিকিৎসক এবং প্যারামেডিকদের সংখ্যাও।” এছাড়া দেশে যে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার গুরুত্ব বেড়েছে, আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশনের উদ্বোধনে সেকথাও বললেন প্রধানমন্ত্রী।