প্রথমে বয়স্কদের টিকা দেওয়া হলেও বর্তমানে ১৮ বছরের উর্ধ্বে সকলকে করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দিয়েও করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮০ কোটির বেশি ভারতবাসীর করোনা টিকাকরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- কী কী খেলে কোভিড থেকে মুক্তি পেতে সমস্যা হতে পারে? জানুন বিশেষজ্ঞের মত
advertisement
তবে, করোনা টিকা নেওয়ার পরেও অনেকে বেশ কিছু সমস্যায় ভুগছেন। সেগুলি মূলত পাশ্বপ্রতিক্রিয়া। তার মধ্যে সকলের মধ্যেই জ্বর আসার প্রবণতা রয়েছে। অনেকের টিকা নেওয়ার দিনেই, আবার অনেকের পরের দিন জ্বর আসছে। পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। টিকা গ্রহণ কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসকরাও এই বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন টিকা গ্রাহকদের। টিকা নেওয়ার পর কী কী সমস্যা হতে পারে সেই বিষয়ে জানানোর পাশাপাশি তার মোকাবিলায় কোন কোন ওষুধ খাওয়া দরকার সেই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু এতেও চিন্তা কাটছে না অনেকের। কেন্দ্রের তরফেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বিশদে জানানো হয়েছে এবং কী পদক্ষেপ নিতে হবে সেই বিষয়েও জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয সরকারের তরফে কী কী জানানো হয়েছে?
প্রথমত- ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কোনও শারীরিক সমস্যা হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে-
প্রতি মুহূর্তে রূপ বদল করছে করোনা। তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে শুধুমাত্র যে মারাত্মক পরিস্থিতি হওয়া রোধ করা সম্ভব তা-ই নয়, ভাইরাস সংক্রমিত হওয়াটাও রোধ করা সম্ভব। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও করোনা আক্রান্ত হলে তার ক্ষেত্রে প্রভাব অনেকটাই কম হয়। তাই কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত- করোনা ভ্যাকসিনের সাইড এফেক্ট বা পাশ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি খুবই সাধারণ এবং ক্ষতিকারক নয়-
যাঁরা করোনা টিকা নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। করোনা টিকা নেওয়ার একদিন বা দুই দিনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং এক-দু' দিনের মধ্যে তা ফের স্বাভাবিক হয়ে যায়।
কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
জ্বর আসতে পারে। ক্লান্তি দেখা দিতে পারে, অথবা ভ্যাকসিন নেওয়া জায়গায় ব্যথা অনুভব হতে পারে। এমন অনেকেই আছেন যাঁদের এই সমস্যাগুলির কোনওটাই দেখা দেয়নি।
তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া মানে এটা নয় যে শরীরে কোনও ইনফেকশন বাড়ছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার অর্থ শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে এবং কোনও ভাইরাসকে চিহ্নিত করে শরীরে রোগ প্রতিরোধে নিজের কাজ শুরু করছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে জানিয়েছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অর্থ অ্যান্ডিবডির পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে অযথা চিন্তা করার কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তৃতীয়ত- কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কখন চিন্তার কারণ হতে পারে?
যাঁরা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ জনের একই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানানো হয়েছে এবং তা সচরাচর কারও মধ্যে দেখা যায় না। তবে সেই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তবে এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভ্যাকসিন নেওয়ার ২০ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে।
চতুর্থত- কোন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে?
সাধারণ জ্বর, হাতে ব্যথা, ক্লান্তি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। যেগুলির জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি হল-
১) শ্বাসকষ্ট। অথবা শ্বাসের অন্য সমস্যা হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে।
২) কারও যদি টিকা নেওয়ার পর বুকে যন্ত্রণা শুরু হয় তাহলে তার ক্ষেত্রেও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩) টিকা গ্রহণের পর থেকে কারোর যদি পেটে নিয়মিত ব্যথা শুরু হয় অথবা বমি শুরু হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যেতে হবে তাঁকে।
৪) কারও যদি খিঁচুনি শুরু হয় তাহলে তাঁকেও চিকিৎসা করাতে হবে।
৫) শরীরের কোনও অঙ্গ যদি আচমকা ফুলে যায় তাহলে তাঁর ক্ষেত্রেও চিকিৎসা প্রয়োজন। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে।
৬) টিকা নেওয়ার পর যদি কেউ সঠিকভাবে না দেখতে পান তাহলে সেক্ষেত্রে তাঁর চিকিৎসা প্রয়োজন।
৭) টিকা নেওয়ার পর টিকা নেওয়ার স্থানে ব্যথা হতে পারে। কিন্তু তা যদি অসহনীয় হয়ে ওঠে তাহলে সেই ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। কারণ ব্যথা হলে সাধারণ ওষুধ খেলে তা নিরাময় সম্ভব। কিন্তু অসহনীয় ব্যথা হলে তা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার।
৮) টিকা নেওয়ার পর দুর্বলতা আসতে পারে। কিন্তু শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়লে চিকিৎসার প্রয়োজন।
করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা থেকে শারীরিক কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কষ্ট সাময়িক। সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে একদিন বা দুই দিনের মধ্যে সেরে ওঠা সম্ভব। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই প্রত্যেকে যাতে ভ্যাকসিন নেয় সেই বিষয়ে আর্জি জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Disease Control and Prevention)-এর তরফে জানানো হয়েছে যাঁরা টিকা নেননি তাঁদের ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা বেশি। তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু নিজের জন্য নয়, প্রিয়জনকেও ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আর্জি জানানো হয়েছে।