আরও পড়ুন : দলনেত্রীর নির্দেশ, জাহাঙ্গিরপুরীতে আজ তৃণমূলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি
আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছে, ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ঠিক সময়ই প্রবেশ করবে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর হাত ধরেই ভারতের মূল ভূখণ্ডে বর্ষা প্রবেশ করে ৷ আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, এবছর নির্দিষ্ট সময়েই দেশে বর্ষা নামবে ৷ ১৯৭১ থেকে ২০২০ সালের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আমাদের দেশে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার স্বাভাবিক পরিমাণ ৮৬৮.৬ মিলিমিটার। ভারতের উত্তরাঞ্চল, মধ্য ভারত, হিমালয়ের পাদদেশে এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশে, উত্তর-পশ্চিম ভারতের অংশ বিশেষে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।
advertisement
দীর্ঘ সময়ের গড় কী?
বর্ষার পূর্বাভাস দিতে গিয়ে আবহাওয়া অফিস একটি বেঞ্চমার্ক মেনে চলে। লং পিরিয়ড এভারেজ (Long Period Averag) এক্ষেত্রে 'স্বাভাবিক', 'স্বাভাবিকের নিচে' বা 'স্বাভাবিকের উপরে' হিসেবমাফিক বর্ষার পূর্বাভাস দেয়। হাওয়া অফিসের বক্তব্য অনুসারে, বৃষ্টির এলপিএ (LPA) হল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে (যেমন মাস বা ঋতু) রেকর্ড করা বৃষ্টিপাত। সেটি গড়ে ৩০ বছর, ৫০ বছর ইত্যাদির মতো দীর্ঘ সময়ের জন্যও হতে পারে।
সম্প্রতি আবহাওয়া দফতর ১৯৭১-২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের উপর ভিত্তি করে স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস দিয়েছে। এই সময়ে দেশে গড়ে ৮৭ সেমি বৃষ্টি হয়েছিল। অতীতে ১৯৬১-২০২১ সময়ের জন্য ৮৮ সেমি এবং ১৯৫১-২০০০ সময়ের জন্য ৮৯ সেমি বৃষ্টির এলপিএ গণনা করেছে আইএমডি। যদিও এই পরিমাণগত মানদণ্ড সমগ্র দেশের জন্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড করা গড় বৃষ্টিপাতকে নির্দেশ করে। প্রতি বছর যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তা অঞ্চলভেদে এবং মাসে মাসে পরিবর্তিত হয়। তাই দেশের প্রতিটি আবহাওয়া অঞ্চলের জন্য এলপিএ আলাদা হয়।
দীর্ঘ সময়ের গড় বৃষ্টিপাতের বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে আইএমডি কেরলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বৃষ্টিপাতের এলপিএ-র উদাহরণ দিয়েছে। জুন, জুলাই, অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসের জন্য যথাক্রমে ৫৫৬ মিমি, ৬৫৯ মিমি, ৪২৭ মিমি এবং ২৫২ মিমি। আর দেশব্যাপী এই এলপিএ হল-জুন মাসের জন্য ১৬.৩৬ সেমি, জুলাইয়ের জন্য ২৮.৯২ সেমি, অগাস্টের জন্য ২৬.১৩ সেমি এবং সেপ্টেম্বরের জন্য ১৭.৩৪ সেমি।
কেন এলপিএ প্রয়োজন?
আইএমডি ২,৪০০টিরও বেশি স্থানে এবং সাড়ে ৩ হাজার রেইন-গেজ স্টেশনে বৃষ্টিপাতের তথ্য রেকর্ড করে৷ কারণ বার্ষিক বৃষ্টিপাত শুধুমাত্র অঞ্চলভেদে এবং মাসে মাসে নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা মাসের মধ্যে, বছরে বছরেও পরিবর্তিত হতে পারে। তাই বৃষ্টির প্রবণতাকে জানার জন্য একটি এলপিএ প্রয়োজন, যাতে একটি যুক্তিসঙ্গতভাবে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। একটি ৫০ বছরের এলপিএ অস্বাভাবিকভাবে বেশি বা কম বৃষ্টিপাতের, সেই সঙ্গে পর্যায়ক্রমিক খরার বছর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান সাধারণ চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির কারণে উভয় দিকের বড় পরিবর্তনগুলি কভার করে।
স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিধি:
আবহাওয়া দফতর তার পূর্বাভাসে বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) ঋতুতে সমগ্র দেশে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি (এলপিএ-র ৯৬ থেকে ১০৪ শতাংশ)। এক্ষেত্রে পূর্বাভাসগত ত্রুটির কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫ শতাংশ কম-বেশি হতে পারে। ১৯৭১-২০২০ সময়কালের জন্য সমগ্র দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের এলপিএ হল ৮৭ সেমি।
স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের কাছাকাছি বৃষ্টি:
যখন প্রকৃত বৃষ্টিপাত পূর্বাভাসের ১০ শতাংশ কম বা বেশি হয়। অর্থাৎ এলপিএ-র ৯৬-১০৪ শতাংশের মধ্যে।
স্বাভাবিকের নীচে বৃষ্টি:
যখন প্রকৃত বৃষ্টিপাত ১০ শতাংশ কম হয়, যা এলপিএ-র ৯০-৯৬ শতাংশ হয়।
স্বাভাবিকের উপরে বৃষ্টি:
যখন প্রকৃত বৃষ্টিপাত এলপিএ-র ১০৪-১১০ শতাংশ হয়।
বৃষ্টির ঘাটতি:
যখন প্রকৃত বৃষ্টিপাত এলপিএ-র ৯০ শতাংশের কম হয়।
অতিরিক্ত বৃষ্টি:
যখন প্রকৃত বৃষ্টিপাত এলপিএ-র ১১০ শতাংশে বেশি হয়।