রাজস্থান বিধানসভায় যে বিলটি পাশ হয়েছে তাতে কী রয়েছে?
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে রাজস্থান বিধানসভায় বিলটি পাস হয়। মূলত এই বিলটি ২০০৯ সালে একবার পাস হয়েছিল অন্য নামে। ওই বিলটি নাম পরিবর্তন করে ফের গত মাসে পাস হয়। ওই বিলের ৮ নম্বর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, যদি ২১ বছরের কমবয়সী কোনও ছেলের এবং ১৮ বছরের কম বয়সী কোনও মেয়ের বিয়ে হয় সেক্ষেত্রে বিবাহ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য অভিভাবককে জমা করতে হবে রাজ্য সরকারের কাছে। এবং বিয়ের ৩০ দিনের মধ্যে তথ্য জমা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। এর পরেই বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ করা হয়, এই বিল পাস হওয়ার অর্থ ঘুরিয়ে বাল্য বিবাহকে সমর্থন করা। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, শীর্ষ কোর্টের এক নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিল পাস করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামেনি।
advertisement
আরও পড়ুন - T20 World Cup 2021: India vs Pakistan: পাকিস্তানকে পুঁতে দিয়ে বিরাটের উচ্ছ্বাস, ভাইরাল পুরনো ভিডিও
এর পরেই রাজ্য সরকারের তরফে উদ্যোগ নিয়ে রাজস্থানের রাজ্যপাল কালরাজ মিশ্রর (Kalraj Mishra) কাছে একটি আবেদন করা হয়। সে প্রসঙ্গে অশোক গেহলট রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন, “যদি কেউ কোনও নাবালক বা নাবালিকাকে বিবাহ করে এবং তার পর তারা যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় ও সন্তান ধারণ করে তাহলে তার মধ্যে কোনও সমস্যা তৈরি হওয়ার কথা নয়। সে কারণে দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, যাঁরা যাঁরা বিয়ে করবেন এবং তা যে কোনও বয়সেরই হোক না কেন তাঁদের সকলের বিবাহ সংক্রান্ত তথ্য রেজিস্ট্রেশন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখানেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে এই আইনের ফলে বাল্য বিবাহের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।” এই বিষয়টি জানিয়েই বিলটি স্থগিত করার আর্জি জানিয়েছেন অশোক গেহলট।
এই বিলটি রাজস্থান বিধানসভায় পাস হওয়ার পর চরম বিক্ষোভ দেখায় সেখানকার প্রধান বিরোধী দল BJP। তারা ওয়াক আউট করে। BJP-র তরফে সরাসরি অভিযোগ করা হয়, রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার বাল্যবিবাহে উৎসাহ দিচ্ছে। এবিষয়ে বিল পাসের দিন BJP বিধায়ক অশোক লাহোটি বলেছিলেন, “রাজস্থান বিধানসভায় আজ কালো দিন। বিল পাস করে গেহলট সরকার কী করতে চাইছে? তারা কি বাল্যবিবাহকে স্বীকৃতি দিতে চাইছে?” এদিকে রাজস্থানেও বাল্য বিবাহ চালু রয়েছে। যা কমাতে দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাবালিকাদের অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন - ICC T20 World Cup 2021: Shakib Al Hasan-কে কুর্নিশ, মালিঙ্গাকে সরিয়ে দিয়ে গড়লেন এই নজির
কিন্তু ভারতে কি বাল্য বিবাহ বৈধ?
বাল্য বিবাহ নিয়ে দেশের আইনে বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট ২০০৬ এর ৯ নম্বর সেকশনে বলা হয়েছে, যদি ১৮ বছরের বেশি বয়সী কোনও পুরুষ ১৮ বছর বয়সের কম কোনও মেয়েকে বিয়ে করে তাহলে ওই যুবক বা ব্যক্তিকে আইনত শাস্তি পেত হবে। তাকে সর্বাধিক ২ বছর জেল অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। এমনকী, যাঁরা বিয়ের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাঁদেরও শাস্তি দেওয়া হতে পারে। যদি কোনও যুবকের বাবা ও মা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে তাদেরও শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। জেল ও জরিমানা করা হতে পারে তাঁদের।
রাজস্থান সরকার এবিষয়ে কী জানিয়েছে?
দ্য ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইট (The National Commission for Protection of Child Right) এবিষয়ে রাজস্থান সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে তারা জানিয়েছে, এই আইন পাস হলে নাবালক ও নাবালিকাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক ধারণার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। যদিও রাজস্থান সরকার জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করতেই এই বিল আনা হয়েছে। কারণ সব ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছে দেশের শীর্ষ আদালত। রাজস্থান সরকারের তরফে এবিষয়ে বলা হয়েছে, বাল্য বিবাহ রোধে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে নতুন এই আইন আইন আনা হচ্ছে না। বরং আরও বেশি পরিমাণে বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে। কারণ যেহেতু বিবাহের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাই সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন করানোর সময়ই ধরা পড়ে যাবে যাঁরা বিয়ে করছেন তাঁরা নাবালক বা নাবালিকা কিনা। যদিও এবিষয়ে অনেকে বলেছেন বাল্য বিবাহ রোধ করার জন্য এই ধরনের যুক্তি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যদিও বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন ২০০৯ অনুসারে সমস্ত বিবাহের ক্ষেত্রেই রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বাল্য বিবাহ নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য প্রকাশ করেছিল Unicef। ২০১৭ সালে তাদের প্রকাশ করা ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বিশ্বে যত নাবালিকার বিয়ে হয় তার মধ্যে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন ভারতীয়। এছাড়াও প্রতি চার ভারতীয় মহিলার মধ্যে ১ জন মহিলার বিয়ে হয়েছিল ১৮ বছরের কম বয়সে। তবে ওই রিপোর্টে এটাও বলা হয়েছে, অতীতে যে পরিমাণ বাল্য বিবাহ হয়েছে বর্তমানে তার থেকে অনেক কম সংখ্যক বাল্য বিবাহ হচ্ছে। এবং সাউথ এশিয়ার অন্য দেশগুলির তুলনায় ভারতে বাল্য বিবাহের হার অনেক কম।
ওই রিপোর্টে আরও একটি তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে ভারতে যে ৫টি রাজ্যে বাল্য বিবাহ সবথেকে বেশি হয় তার মধ্যে সব থেকে প্রথমে রয়েছে উত্তর প্রদেশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ। এছাড়াও ওই তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ। উত্তর প্রদেশের ক্ষেত্রে প্রায় ৩৬ মিলিয়ন নাবালিকার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাদের ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে।