ভারতের উপরে প্রভাব
আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের মৈত্রী তালিবান শাসনের অধীনে ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্বের রাজনৈতিক এবং বিশেষজ্ঞ মহলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (Observer Research Foundation) তরফ থেকে কবীর তনেজা (Kabir Taneja) বলছেন যে দেশের পক্ষে এখনই বড় কোনও সঙ্কটের আশঙ্কা নেই। কেন না, তালিবান শাসন নিয়ে ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত কূটনীতি বজায় রেখে কোনও মন্তব্য করা হয়নি- ভালোও না, মন্দও নয়। যদিও প্রাক্তন পররাষ্ট্রসচি বিবেক কাটজু (Vivek Katju) খুব একটা আশার আলো দেখছেন না। তাঁর দাবি- তালিবানের আফগানিস্তান অধিগ্রহণ প্রেক্ষিতে ভারত বেশ দুর্বল জায়গাতেই অবস্থান করছে। ১২ অগাস্ট দোহায় যে বৈঠক সংঘটিত হয়েছিল, সেখানে সরাসরি কোনও পক্ষ না নেওয়ায় ভারত বিশ্বশক্তির অক্ষে প্রান্তিক হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৌহার্দ্যও তালিবান শাসনের চক্ষুশূল হয়ে উঠতে পারে। ফলে, তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারত কী রকম সম্পর্ক বজায় রাখবে, তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে বই কমছে না!
advertisement
আফগানিস্তানে ভারতীয় বিনিয়োগ
কবীর তনেজা অবশ্য বিষয়টাকে আদপেই বিনিয়োগ বলতে নারাজ! তাঁর মতে, ভারত আফগানিস্তানকে বিগত কয়েক বছর ধরে অর্থসাহায্য করেছে বলা যেতে পারে, তার অঙ্কটা যদিও নেহাত ফেলনা নয়, সাকুল্যে ৩ বিলিয়ন! বিগত ২০ বছরে আফগানিস্তানের ৫০০টি ছোট-বড় প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভারত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট হাউজ, সলমা বাঁধ, জারঞ্জ-দেলমা হাইওয়ে তৈরির মতো প্রকল্প, পাশাপাশি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাখাতে সাহায্যও রয়েছে। বলা মুশকিল, এই সব নির্মাণ তালিবান শাসনের হাতে কতটা সুরক্ষিত থাকবে! তালিবানদের ক্ষমতা অধিগ্রহণের পরেও এই সব প্রকল্প দেশের মানুষের উপকারে আসবে, কিন্তু তা বজায় থাকলেও এর জন্য ভারতে প্রতি তালিবানরা কৃতজ্ঞতা পোষণ করবে কি না, সেটা সন্দেহের বিষয়। এই প্রসঙ্গেই উঠে আসে চিন এবং পাকিস্তানের কথা, ভারতবিরোধী এই দুই দেশ এবার আফগানিস্তানে লগ্নি করতে চাইবে। ফলে, এদিক থেকে আর্থিক ক্ষতির মুখ দেখতে পারে ভারত!
চাবাহার পোর্ট (Chabahar Port)
এত দিন পর্যন্ত ইরানের এই বন্দরের মাধ্যমে ভারত এবং আফগানিস্তানের যোগাযোগ ছিল, এই বন্দর ছিল দুই দেশের বাণিজ্যিক যোগসূত্রেরও মাধ্যম। কিন্তু তালিবান শাসন জারি হওয়ার পর আফগানিস্তানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগের মূল মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে করাচি বন্দর। সেক্ষেত্রে বাণিজ্যবিস্তারের দিক থেকে ভারত নিঃসন্দেহেই একটা বড় ধাক্কা খাবে, দেশের অর্থনীতিও সামান্য হলেও হবে প্রভাবিত।
সন্ত্রাসবাদী হামলা
সব শেষে, ঘুরে-ফিরে সেই জঙ্গি হানার বিষয়ে পৌঁছতেই হয়। তালিবান এখনও খাতায়-কলমে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী। তাদের একটি দেশ দখল বিশ্বের অন্য উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর কাছে নজির হয়ে উঠতে পারে, মাথাচাড়া দিতে পারে জইশ-এ-মহম্মদ (Jaish-e-Mohammed), লস্কর-ই-তৈবার (Lashkar-e-Taiba) মতো মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাদের প্রশিক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তান। এক্ষেত্রে কাশ্মীর সমস্যা যে তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।