অ্যান্তোনিয়াকে প্রথম জাকির দেখেছিলেন গত শতকের সাতের দশকে। ক্যালিফোর্নিয়া বে-তে সে সময় তাঁরা দু’জনেই শিল্পকলার শিক্ষার্থী। জাকির শিখছিলেন তবলা। অ্যান্তোনিয়ার বিষয় ছিল কত্থকনাচ। প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হন জাকির। তবে প্রেমের পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না।
প্রেমের পথে জাকিরও ছিলেন লড়াকু যাত্রী। প্রেয়সীর নামের ক্লাসের বাইরে রোজ অপেক্ষা করতেন জাকির। শুধু একবার তাঁকে দেখবেন বলে। তাঁর হৃদয়ে নিজের আসন চিরস্থায়ী করবেন বলে। অবশেষে বরফ গলল। জাকিরের প্রতি আকৃষ্ট হলেন অ্যান্তোনিয়াও। ভাললাগা থেকে ভালবাসা এল অল্প সময়েই। এক বছর পরিচয় পর্বের পর তাঁরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
advertisement
বাধা এসেছিল দুই পরিবারের তরফেই। স্ত্রীকে তাঁর ডাকনাম টোনি বলেই ডাকতেন জাকির। সিমি গারেওয়ালের টেলিভিশন শো-এ এসে কিংবদন্তি শিল্পী বলেছিলেন, ‘‘কিছু কারণে আমি বুঝতে পেরেছিলাম টোনিই সেই মেয়ে যার প্রতি আমার মনোযোগ থাকবে বাকি জীবনভর। পরিচয়ের এক বছর পর আমরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করি।’’
আরও পড়ুন : প্রহরশেষে ভুবনজুড়ে হৃদমাঝারে অঙ্গবিহীন আলিঙ্গনে ছড়িয়ে থাকে তালবৈশাখীর বাদ্য
প্রথম আলাপের ৮ বছর পর বিয়ে করেন জাকির-অ্যান্তোনিয়া। দুই পরিবারের সাংস্কৃতিক ফারাকের জন্য বাধা এসেছিল বিস্তর। বিশেষ করে জাকিরের মা বাভী বেগম একদমই চাননি তাঁর ছেলে কোনও বিদেশিনীকে বিয়ে করুক। শেষ পর্যন্ত মায়ের কাছে গোপন রেখেই টোনিকে বিয়ে করেছিলেন জাকির। প্রথমে সিভিল ম্যারেজ। পরে ইসলামিক রীতিতে তাঁদের বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন উস্তাদ আল্লা রাখা। তত দিনে মা জেনে গিয়েছেন ছেলের বিয়ের কথা। কিন্তু তার পরও তিনি বিয়েতে গরহাজির ছিলেন। দাম্পত্যের বেশ কিছু বছর পর ইউরোপীয় টোনিকে পুত্রবধূ বলে মেনে নেন জাকিরের মা।
জাকিরের সঙ্গে দাম্পত্যের জন্য নিজের কেরিয়ারকে সংক্ষিপ্ত করেছেন নামী কত্থকশিল্পী অ্যান্তোনিয়া। দুই মেয়ে আনিসা ও ইসাবেলাকে নিয়ে আমেরিকায় দিনের পর দিন একা কাটিয়েছেন আমেরিকায়। অন্যদিকে জাকির হুসেন বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এই একাকিত্ব কষ্ট দিয়েছে অ্যান্তোনিয়াকে। কিন্তু সে সব ছাপিয়ে জয় হয়েছে ভালবাসারই। তাঁদের িববাহিত জীবন হয়তো খাতায় কলমে থেমে গেল অর্ধশতক আগেই। কিন্তু ভালবাসা সময়হীন কালজয়ী।