গোয়ায় গিয়ে এমন পোশাক পরা কোনও নতুন বিষয় নয়। কিন্তু এই নিয়ে নানা রকমের তির্যক মন্তব্য শুরু করেন কিছু মানুষ। কেউ ছবির তলায় কমেন্ট করেন, "কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর মেয়ে হয়ে আপনার থেকে এমন পোশাক আশা করা যায় না"। আবার কেউ লিখেছেন, "মনে রাখবেন আপনার আলাদা একটা পরিচিতি আছে। এই পোশাক না পরেও জন্মদিন মানানো যেত। এই ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রে আর ও যত্নবান হওয়ার দরকার ছিল।"
advertisement
এই সব তির্যক মন্তব্যের স্পষ্ট জবাব দিলেন উষসী (Ushasie Chakraborty) নিজেই। মঙ্গলবার ছিল প্রয়াত বামনেতা শ্যামল চক্রবর্তীর জন্মদিন। বাবার জন্মদিনেই বামপন্থার পাঠ পড়ালেন উষসী। অভিনেত্রী লিখছেন, "অনেক দিন ধরে কয়েকটা কথা বলব ভাবছিলাম আজ বাবার জন্মদিন উপলক্ষে বলেই দিই। বামপন্থী পরিবারে বড় হওয়ার সুবাদে এবং প্রায় সাত বছর বামপন্থী রাজনীতি ও লিঙ্গরাজনীতি নিয়ে গবেষণা করার সুবাদে ( এম ফিল ও পি এইচডি করার সূত্রে) আমি এটাই বুঝেছি ও শিখেছি যে মেয়েদের পোষাক নিয়ে অযথা খাপ পঞ্চায়েত খোলা আর যাই হোক বাম রাজনৈতিক ঘরানার সংস্কৃতির মধ্যে পড়েনা।"
শ্যামল চক্রবর্তীও খুব উদারমনস্ক মানুষ ছিলেন। এমনই জানান উষসী (Ushasie Chakraborty)। অভিনেত্রী তাঁর পোস্টে লিখছেন, "আমার বাবা কে যাঁরা ঘনিষ্ট ভাবে চিনতেন তাঁরা অবশ্যই জানেন যে উনি কতটা উদার মনের মানুষ ছিলেন আর এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সাথে কতটা সহজ ভাবে মিশতে পারতেন। সে কারণেই বোধহয় ওঁর বন্ধু তালিকা ছিল দীর্ঘ এবং তাঁদের মধ্যে অনেকের বয়স এমনকি আমার চেয়েও কম ছিল ।আমার বাবা কোনোদিন আমার জীবনকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন নি এবং আমি কি পোষাক পরব এই নিয়ে কোনো মতামত ও দেন নি। তাই বামপন্থী পরিবারের মেয়েরা হাফপ্যান্ট পরতে পারবেন না বা সমুদ্র স্নানে গিয়ে সাঁতারেব পোষাক পরতে পারবেন না এ-হেন হাসির কথা আমার বাবা তো দূরস্থান কোন আন্তর্জাতিক বা জাতীয় বামপন্থার বইতেও আমি কস্মিনকালে শুনিনি বা পড়িনি।"
উষসী এই পোস্টে ট্রোলারদের একহাত নিয়ে লিখছেন, "বামপন্থা সমাজতন্ত্রের কথা বলে,খেটে খাওয়া মানুষের দাবী আদায়ের কথা বলে, লিঙ্গ সাম্যের কথা বলে এবং সমাজের রক্তচক্ষু বা অঙ্গুলি হেলনকে তোয়াক্কা না করে মেয়েদের নিজের শর্তে বেঁচে থাকার কথা বলে এবং আমিও আমার বাবার কাছে তাই-ই শিখেছি। শিখেছি স্বাধীনভাবে পোশাক নির্বাচন করতে এবং রবীন্দ্রজয়ন্তীতে, শিক্ষাঙ্গনে, আইন সভায় বা সমুদ্র তটে পরিবশের সাথে মানানসই ভাবে সাজতে। আর হ্যাঁ, সেই সঙ্গে ঘৃণা করতে শিখেছি সেই সব সিউডো বামপন্থার ধবজাধারীদের যাঁরা নিজেদের ভিতরে পিতৃতন্ত্রের বীজ বহন করে মেয়েদের চালচলন পোষাক আষাক নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে যেখানে সেখানে খাপ পঞ্চায়েত খোলেন। এই জাতীয় চিন্তাভাবনা দক্ষিণপন্থীদের শোভা পায়, বামপন্থীদের নয়।"
আরও পড়ুন- বাস্তবে সম্পর্কে প্রতারণাকে সমর্থন করেন দীপিকা? প্রেমের সমীকরণ নিয়ে কী বললেন অভিনেত্রী
উষসীর এই পোস্টেও তাঁর অনুরাগীরা শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দেয়। এই পোস্ট যে বহু নিন্দুকেরও মুখ বন্ধ করে দিয়েছে তাও বলাই বাহুল্য।
