২০০৪ সালে, তখনও স্টার থিয়েটার নতুন ভাবে সেজে ওঠেনি। মঞ্চে অভিনয় করার মতোও পরিস্থিতি হয়নি। কিন্তু স্টার থিয়েটারেই একটি নাটক মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুদীপ্তা। অভিনেত্রী লিখছেন, "২০০৪ সাল, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাস। দুজন যুবক আমার সঙ্গে কথা বলতে এলো একটা নাটক নিয়ে। তাদেরই একজনের লেখা নাটক টা। নাটকে তিন টে চরিত্র। ওদের আবদার, তিনটে তেই আমাকে অভিনয় করতে হবে। ওদের সঙ্গে ছিল দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলের আরো কিছু তরতাজা ছেলেমেয়ে। তারা মিলে দল বেঁধেছে। মঞ্চ আমাকে বরাবরই টানে।"
advertisement
এর পরেই মঞ্চ খোঁজা শুরু হল অভিনেত্রীর। সুদীপ্তা (Sudipta Chakraborty) লিখছেন, "স্টার থিয়েটার তখন ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ধাক্কা সামলে সবে নতুন করে সেজে উঠছে। দর্শক নিয়ে অভিনয় শুরু হবার মত অবস্থা তখনও হয়নি। কাজ চলছে। নাট্যকার/পরিচালক যুবকের র মাথায় আইডিয়া এলো, ওখানে আমাদের প্রথম অভিনয় হলে কেমন হয়? নববর্ষের সন্ধ্যেয় যদি করা যায় প্রিমিয়ার? হয় তো ভালই। কিন্তু হবে কি করে? হল তো খোলেনি। ওখানকার ডেটই বা পাওয়া যাবে কী করে? তাও আবার আমাদের পছন্দমত ডেট? সাহস করে ফোন করলাম সুব্রতদাকে (Subrata Mukherjee)। তিনি তখন কলকাতার মহানাগরিক / মেয়র।"
আরও পড়ুন- ‘‘খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেন’’- সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দিলীপ ঘোষ
সেই সময়ে সুদীপ্তার থেকে সব শুনে প্রয়াত নেতা (Subrata Mukherjee) প্রথমে বলেন, "হল্ তো রেডি হতে সময় লাগবে সুদীপ্তা। পেশাদার ভাবে অভিনয় হবার যোগ্য এখনও হয়নি। টেকনিক্যাল বেশ কিছু সমস্যা এখনও আছে। মেকআপ রুমগুলোও রেডি নয়।" কিন্তু এখানেই হাল ছাড়েননি সুদীপ্তা। তিনি বলেন, "নটি বিনোদিনী যে মঞ্চে লাগাতার অভিনয় করে গিয়েছেন, সেই মঞ্চ নতুন সাজে সেজে ওঠার পর আমি যদি প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পাই? সে তো ইতিহাস হবে। এ সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়?"
সুদীপ্তা (Sudipta Chakraborty) লিখছেন, "সব শুনে আমাকে অফিসে আসতে বললেন সুব্রত দা। চলে গেলাম এসপ্ল্যানেডে কর্পোরেশন অফিসে। সেই বড় ঘর টায় বসে অনেক কথা হল। চা বিস্কুট সহযোগে নাটকের গল্প, আমার বাবার কথা, বাবার সঙ্গে বিধানসভায় ওঁর আড্ডার কথা (বাবা তখন বিধানসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ছিলেন), ওঁর নিজের অভিনয়ের অভিজ্ঞতার গল্প, শুটিংয়ের গল্প (সুব্রত দা বাংলা টেলিভিশনে এবং মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন যুবক বয়সে), আরো কত কি !!!"
আর এই দীর্ঘ আলোচনার ফলাফল স্বরূপই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে, হল খোলা হবে। অভিনেত্রী লিখছেন, আড্ডার ফলাফল দাঁড়ালো এই যে.... হল্ তো খুলতেই হবে, উনি চেষ্টা করবেন আমার তাড়ায় যদি সেটা তাড়াতাড়ি করে ফেলা যায়। তাতে সবারই উপকার।উনি চেষ্টা করলেন। তাড়া লাগলো। স্টার থিয়েটার খুললো। আমার স্বপ্নপূরণ হলো। ১৭ই এপ্রিল,২০০৪ অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী স্টারের মঞ্চে আমি প্রথম অভিনয় করলাম।"
অ্যাডিকশন নামক দলের সেই নাটকের নাম ছিল ইনা মিনা ডিকা। সেই নাটকের পরিচালক ছিলেন রাজর্ষি দে। সুদীপ্তা আরও লিখছেন, "ইতিহাসের অংশ হয়ে রইলাম আমরা সবাই, সুব্রত দার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং কিছু টা প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতায়। পরবর্তীকালে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজনে ডিনার পার্টিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শুনেছি তাঁর 'সুব্রত দা'র যুবক বয়সের মজার মজার ঘটনার গল্পও। সুব্রতদা নিজেও সেই আড্ডায় বসে হাসিমুখে তারিয়ে তারিয়ে শুনেছেন সেই গল্প। আমরা হেসে গড়িয়ে পড়েছি। উনি বিব্রত না হয়ে নিজেই কিছু অ্যানেকডোটস যোগ করেছেন সেই সব গল্পে।"
সব শেষে অভিনেত্রী লিখছেন, "কাল রাত থেকে বারবার মনে পড়ছে ঘটনাগুলো।তাই লিখে ফেললাম। সক্রিয় রাজনীতি আমি করি না। সক্রিয় রাজনীতিক দের সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগ ও নেই। কিন্তু একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে হয়, কিছু মানুষের রাজনীতি তে থাকা ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতির জন্য ভাল। সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে একজন। এমন কড়া রাজনীতিক, এমন মিষ্টি মানুষ,এমন ভোজনরসিক বাঙালি, সঙ্গীতপ্রেমী, শ্রমিক নেতা ও তুখোড় বাগ্মী ….... এমন দারুণ কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাঙালি ও বাংলা তথা ভারতের রাজনীতি আপনার অভাব অনুভব করবে সুব্রতদা।"