ঐন্দ্রিলার এই লড়াইয়ে বাবা-মা এবং বোনের পাশাপাশি, যে মানুষটি ছায়ার মতো তাঁকে আগলে রাখে, তিনি অভিনেতা সব্যসাচী। কেমন আছেন ঐন্দ্রিলা, মাসে একবার বা দু'বার সেই খবর সকলের কাছে পৌঁছে দেন তিনিই। যেমন আজ দিলেন। সব্যসাচী এ দিন তাঁর ফেসবুকে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে দীর্ঘ পোস্ট করেন। একটি ছবিও শেয়ার করেন দু'জনের, যেখানে সন্তানের মতো অভিনেত্রীকে আগলে রয়েছেন তিনি। সব্যসাচী লিখেছেন, "আরও একটা মাস শেষ হল। আমরা মাঝেমাঝেই মাস গুনি, একটা মাস শেষ হলেই আবার দিন গুনি পরের মাস শেষ হওয়ার। কখনও ডানায় চোট লাগা পাখি দেখেছ? আমি প্রতিনিয়ত দেখি। টিভিতে যখনই কোনও সিরিয়াল চলে, আমি দেখি ওকে ছটফট করতে। বন্ধ করে দেয়। চেনাশোনা বন্ধুরা চুটিয়ে অভিনয় করছে। আর এ দিকে ওকে শুয়ে থাকতে হচ্ছে, এটা মন থেকে মেনেই নিতে পারে না। নিজের পুরোনো কাজগুলোই ফের দেখে শুয়ে শুয়ে। তবে হ্যাঁ, আজকাল একটা সিরিয়াল রোজ নিয়ম করে দেখে, সেটা ‘ধূলোকণা’। লালন আর মিমিদিদি হল পছন্দের চরিত্র, মাঝেমধ্যেই শুয়ে শুয়ে মিমিদিদির নকল করে দেখায় আমাকে। আমার অভিনয় অবশ্য খুব কমই দেখে, ওর ধারণা দীর্ঘকাল আমি বামদেবের চরিত্রে অভিনয় করার ফলে বাস্তব জীবনেও ওরকম ক্ষ্যাপা হয়ে উঠতে পারি কখনও।"
advertisement
সব্যসাচী আরও লিখেছেন, "আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম সার্জারিটাই আসল, সেটা সামলে উঠলে বাকি ট্রিটমেন্টটুকু খুব একটা সমস্যার হবে না। তবে বিষয়টা একেবারেই উল্টে গেছে। সার্জারির পরে যে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে সেটা অনেকটাই বেশি কষ্টের। কিছু কিছু দিন বড়ই কষ্ট পায়, মাঝেমধ্যেই ব্লাড প্রেসার অস্বাভাবিক ভাবে কমে যায়, বিছানা থেকে মাথাই তুলতে পারে না। রক্তের মধ্যেও বিস্তর গোলযোগ দেখা যায় তখন। ব্রহ্মতালু থেকে শুরু করে পায়ের পাতা অবধি মারাত্মক যন্ত্রনা থাকে, বিস্তর ব্যাথার ওষুধেও যা কমতে চায় না। হাত-পা টিপে দিলে বা গরম সেঁক দিলে সাময়িক আরাম পায় ঠিকই, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। হাই ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কোনওমতে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়। যে কটা দিন ভালো থাকে, সেই দিনগুলো শুয়ে শুয়ে সিনেমা দেখে আর মোমো খায়। একটু শরীর ভালো থাকলেই বিরিয়ানি খাওয়ার বায়না করে। সারা ঘরে এতো ওষুধপত্র ছড়িয়ে আছে যা দিয়ে ছোটোখাটো একটা ডিসপেনসারি হয়ে যায়। আসলে অসুখটা এতটাই দীর্ঘায়িত যে শুরুতে যে মানুষগুলি উৎকণ্ঠিত থাকেন, তারাও আসতে আসতে উপেক্ষা করতে শুরু করেন। আর জগতের নিয়ম অনুযায়ী সেটাই খুব স্বাভাবিক বিষয়, সেটা ও নিজেও বোঝে। শরীরটা খারাপ থাকলে মাঝেমধ্যে শিশুর মতন আচরণ করে। মাঝেমাঝে ঘুমানোর আগে, বই পড়ে ভূতের গল্প শোনাতে হয়। একদিন ওকে ফিনিক্সের গল্প পড়ে শোনালাম, আমি জানি ছয় বছর আগে যেমন ফিরে এসেছিল, ঠিক সেইভাবেই আবার ফিরবে। সেই জন্যই তো আমরা দিন গুনি।" ঐন্দ্রিলাও জানিয়েছেন সব্যসাচী পাশে আছেন বলেই এখনও ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন।