TRENDING:

Sreela Majumdar on Mrinal Sen: ‘তুমি ভুরু প্লাক করেছো? আমি অল্পবয়সি হলে কোনও দিন তোমার প্রেমে পড়তাম না!’ মৃণালের প্রথম তিরস্কার ভুলতে পারেননি শ্রীলা

Last Updated:

Sreela Majumdar on Mrinal Sen: জ্ঞান হওয়ার আগে পিতৃহীন শ্রীলার মাঝে মাঝেই মনে হত মৃণাল সেন তাঁর বাবা৷ আবার কখনও মনে হত বৃদ্ধ পরিচালক তাঁরই সমবয়সি৷

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
নাটকের মহড়ায় নির্ধারিত সময়ের তুলনায় দেরিতে এসে মিষ্টি করে হাত তুলে কিশোরী বলল, ‘আই অ্যাম সরি!’ এ বার সকলে রে রে করে উঠলেন৷ কোনও সময়জ্ঞান নেই? তিরস্কারে অনভ্যস্ত কিশোরী তো অবাক৷ তিনি তো দলের সকলের প্রিয়পাত্রী৷ হঠাৎ কী হল? অন্যদিন এইটুকু বিলম্বে তো কিছু হয় না৷ এর পরই খেয়াল হল এক পক্বকেশ প্রৌঢ় তাঁকে স্মিতমুখে দেখছেন৷ কথায় কথায় আলাপ হল দুই অসমবয়সির৷
পিতৃহীন শ্রীলার মাঝে মাঝেই মনে হত মৃণাল সেন তাঁর বাবা
পিতৃহীন শ্রীলার মাঝে মাঝেই মনে হত মৃণাল সেন তাঁর বাবা
advertisement

প্রৌঢ় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি সিনেমা দেখো? কিশোরী জানাল, তাঁর মা ছবি দেখার অনুমতি দেন না৷ তাই ছবি দেখা হয় না৷ পরের প্রশ্ন, তুমি আমাকে চেনো? উপস্থিত সকলের অস্বস্তিতে সামান্য বিহ্বল হলেও কিশোরীর সটান উত্তর ‘না, আমি উত্তরকুমারকে চিনি, আপনাকে চিনি না৷’ এ বার সকলে প্রায় সমস্বরে বলে উঠলেন, ‘না, না মৃণালদা, ও আপনাকে চেনে৷’ তত ক্ষণে সকলে নিশ্চিত, যাও বা একটা সুযোগ এসেছিল, সেটাও গেল! একেই দেরি করে এসেছে, তার পর মুখের উপর সোজা বলে দিল পরিচালক মৃণাল সেনকে চেনে না!

advertisement

এত হতাশার কারণ বিন্দুমাত্র বুঝতে পারছিলেন না কিশোরী শ্রীলা৷ সে তো জানেই না তত দিনে বেতার নাটকে, বিজ্ঞাপনে তাঁর কণ্ঠাভিনয় শুনে মুগ্ধ হয়েছেন পরিচালক মৃণাল সেন৷ তিনি নাটকের মহড়ায় এসেছিলেন স্বচক্ষে অভিনেত্রীকে দেখতে৷ তাঁর কল্পনার সঙ্গে মিলছে কিনা অভিনেত্রীর চেহারা, দেখতে চেয়েছিলেন মৃণাল৷ দেখলেন এবং বুঝলেন এই কিশোরীই তাঁর ‘একদিন প্রতিদিন’-এর মিনু৷ এরকমই রোগা, শ্যামবর্ণা, বাঙ্ময় চোখের কিশোরী খুঁজছিলেন তিনি৷ তার সঙ্গে কিশোরীর অভিনয় এবং ইংরেজি উচ্চারণও অনবদ্য৷ শ্রীলার সহজ সরল অকপট উত্তরও তাঁর ভাল লেগেছিল৷ সেদিনের মহড়ায় যে মৃণাল সেন আসবেন, সেটা শ্রীলা ছাড়া সকলে জানতেন৷ পরিচালকই বলেছিলেন শ্রীলাকে না জানাতে৷ আর সেদিনই কিনা দেরিতে পৌঁছলেন তিনি!

advertisement

আরও পড়ুন : মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই পছন্দ করেছিলেন মৃণাল, চেনা ছক খারিজ করে প্রতিভার খণ্ডহরে উজ্জ্বল শ্রীলা

অবশেষে মৃণাল সেনের প্রস্তাব পৌঁছল শ্রীলা মজুমদারের মায়ের কাছে৷ তিনি ছোট থেকে মেয়ের সব ইচ্ছে পূর্ণ করেছেন৷ বাধা দেননি অভিনয়ের শখে৷ তাঁর উৎসাহেই নিয়মিত বেতারে নাটক করেছে কন্যা৷ কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ছবির শ্যুটিং কী করে করবে শ্রীলা? জানালেন পরিচালককে৷ তিনি তাতেও রাজি৷ বললেন, শ্রীলার পরীক্ষার পরই শ্যুটিং হবে৷ নতুন আবিষ্কারের জন্য শ্যুটিংও পিছিয়ে দিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু এত সবকিছুর আগেই আরও এক কারণে ভেস্তে যেতে বসেছিল সব কিছু৷

advertisement

নাটকের মহড়াতেই শ্রীলাকে দেখে মৃণাল সেন আচমকাই গম্ভীর হয়ে বলেছিলেন, ‘এ কী! তুমি আইব্রোজ প্লাক করেছো? আমি অল্পবয়সি হলে কোনও দিন তোমার প্রেমে পড়তাম না৷’ এ সব স্মৃতি উজাড় করে দিয়েছিলেন শ্রীলা, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে৷ মৃণাল সেনের পরিচালনায় ‘পরশুরাম’, ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘খারিজ’, ‘খণ্ডহর’, ‘আকালের সন্ধানে’-এর মতো রত্নের আকর উপহার দিয়েছেন৷ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যদি সত্যজিৎ রায়ের মানসপুত্র হন, মৃণাল সেনের মানসকন্যা শ্রীলা মজুমদার৷ জ্ঞান হওয়ার আগে পিতৃহীন শ্রীলার মাঝে মাঝেই মনে হত মৃণাল সেন তাঁর বাবা৷ আবার কখনও মনে হত বৃদ্ধ পরিচালক তাঁরই সমবয়সি৷ মৃণাল সেন কখনও পছন্দ করতেন না তাঁকে কেউ জেঠু বা কাকু বলে ডাকুক৷ তাঁর ছেলে কুণালও তাঁকে ‘বন্ধু’ বলে ডাকতেন৷ তিনি সকলেরই বন্ধু হয়ে উঠতে ভালবাসতেন৷ তাই অসমবয়সিরাও নির্দ্বিধায় তাঁর সঙ্গে মেতে উঠতেন তর্কে৷

advertisement

আরও পড়ুন : প্রেমে বাধা হয়নি বেড়াজাল, রাশিদের ছন্দের দোসর স্ত্রী জয়িতাই, তাঁদের আনন্দ মুহূর্ত এখন স্মৃতির জলছবি

অথচ মৃণাল সেনের ব্যক্তিত্ব প্রথম দিকে বেশ কিছু বছর অনুভবই করতে পারেননি শ্রীলা৷ সেকথাও জানিয়েছেন তিনি৷ কৈশোরে বুঝতে পারেননি কার সঙ্গে, কার পরিচালনায় অভিনয় করছেন৷ এমনকী, অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার কথাও ভাবেননি৷ আন্তর্জাতিক মানের প্রায় ৫-৬ টি ছবি হয়ে যাওয়ার পর শ্রীলা ঠিক করেন তিনি অভিনয়ই করবেন৷ নিজের অজান্তেই ভালবেসেছিলেন অভিনয়কে৷ সেই ভালবাসা, উৎসর্গ থেকেই নাটকে অভিনয়ের জন্য ভুরু প্লাক করেছিলেন চরিত্রের প্রয়োজনে৷ সেই ভ্রুচর্চা বন্ধও সাময়িক করেছিলেন মৃণাল সেনের ছবিতে আত্মপ্রকাশ করবেন বলে৷

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
কৃষিকাজে বিপ্লব ঘটাতে চাষিদের পাশে দুর্গাপুরের সিএমইআরআই কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা
আরও দেখুন

আত্মপ্রকাশ থেকে বিদায়-শ্রীলার অকৃত্রিম অভিনয়জীবনের সম্পূর্ণই জুড়ে থাকলেন মৃণাল সেন৷ ‘পরশুরাম’, ‘একদিন প্রতিদিন’-এ যাঁর হাতেখড়ি, তাঁর শেষ কাজ হয়ে থাকল মৃণাল সেনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘পালান’৷ মৃণালের জহুরি চোখ যে রত্নকে চিনেছিলেন, তাঁকে দিয়ে অলঙ্কার গাঁথলেন কতজন, বা আদৌ সেই রত্নের প্রয়োগ যথার্থ হল কিনা, সে প্রশ্ন রয়েই গেল৷

বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
Sreela Majumdar on Mrinal Sen: ‘তুমি ভুরু প্লাক করেছো? আমি অল্পবয়সি হলে কোনও দিন তোমার প্রেমে পড়তাম না!’ মৃণালের প্রথম তিরস্কার ভুলতে পারেননি শ্রীলা
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল