কলকাতা থেকে বলছি শুনেই, ইংরেজি, হিন্দি ছেড়ে সোজা বাংলায় গড়গড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলেন, " আমি প্রবাসী বাঙালি। বাংলা শুনলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে। আমি বাংলা ভাষাকে খুব ভালোবাসি। ১২ ক্লাসের আগেই আমার দিদা আমায় বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাই কেউ কলকাতা থেকে ফোন করলেই মনে একটা অদ্ভুত আনন্দ হয়। ছোটবেলার স্মৃতি ফিরে আসে যেন।" কথা গুলো বলেই একরাশ আনন্দ ছড়িয়ে দিলেন তিনি।
advertisement
কিন্তু বাংলা ছেড়ে মুম্বই কেন?
একটু হেসে বললেন, " আসলে আমি দিল্লিতে বড় হয়েছি। তারপর মুম্বইতে চলে আসা। এখানেই কাজের চেষ্টা। আজ প্রায় সাত - আট বছরের বেশি হয়ে গেল এখানেই কাজ করছি। সিনেমার স্ক্রিন প্লে, গল্প থেকে বিজ্ঞাপন একের পর এক কাজ। "
পরিচালনায় কেন এলেন?
আমি অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞাপন পরিচালনা, লেখার কাজ করছি। সেই সঙ্গে সুধীর মিশ্রা, অনুরাগ কাশ্যপের মতো পরিচালকের সঙ্গে সহকারি হিসেবে কাজ করেছি অনেক দিন। তাই গল্প এবং স্ক্রিন প্লের সঙ্গে পরিচালনাও আমার একটা ভালোবাসার জায়গা। "
নেটফ্লিক্সে প্রথমবার আপনার পরিচালিত ছবি মুক্তি পেল। কেমন ছিল এই জার্নি?
ছবিটা নিয়ে ভাবনা চলছিলই। এর পর করোনা ও নানা কিছুতে কিছুটা কাজ আটকালেও। আমরা আবার কাজটা নিয়ে এগোই। আমার এই ছবি শুধু ভালোবাসার কথা বলে না, বলে একটা লড়াইয়ের কথাও। আজকের ছেলে মেয়েরা শুধু যে প্রেম ভালোবাসায় মগ্ন, তা নয়। তাঁদের লড়াইতে একটা প্রতিবাদ আছে। কতকিছু করছে আজকের ছেলে মেয়েরা। গোটা বিশ্বে যা ঘটছে, সেখানে যুব সমাজ একটা বড় অংশ। নতুন প্রতিবাদের ভাযা বলে তাঁরা। তাঁদের গল্প তো বলতেই হবে। যাতে আজ থেকে ২০ বছর পর সকলের মনে হয় ছবিটা দেখে, যে এই সময় এমন হত আমার দেশে। আমার দেশের ছেলে মেয়েরা এভাবে প্রতিবাদ করতেও জানত।
কিভাবে এল এই ভাবনা আপনার?
"আমাদের যুব সমাজকে দেখেই এল। আমি ৯০-এর দশকে বড় হওয়া ছেলে। সে সময় জীবন একটা অন্য রকম গতিতে এগোতে। বড় টিভি, কেবল লাইন, চিঠি, টেলিফোন। সে এক অন্য রকম জীবন। তখন এমন প্রতিবাদ আমি দেখিনিখ। কিন্তু আজকের ছেলে মেয়েরা কোথাও যেন অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। তাঁদের ভাবনা-চিন্তা, ভালোবাসা, প্রতিবাদ, লড়াই, সমাজ সচেতনতা সব কিছুই একেবারে অন্য ছকে কথা বলে। ওরা যেন ম্যাজিক জানে। ঠিক যেভাবে ভিড়ের মধ্যে, লড়াইয়ের মাঠে হঠাৎ যখন কোনও প্রেমিক , পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়। তখন একটা ম্যাজিক হয়। আমার সেই ম্যাজিকটাকেও তুলে ধরার ইচ্ছে ছিল। ভালোবাসা যখন প্রতিবাদে মিশে যায় তা শুধু নিজের নয় গোটা দেশের হয়ে কথা বলে।"
গল্প, ভাবনা, লেখা সবটাই কি আপনার নিজের?
উত্তর: "হ্যাঁ, আমি এবং আমার কো রাইটার শুভ্রা চট্টোপাধ্যায় দু'জনে লিখেছি। ডায়ালগ লিখেছেন ইরা।"
বাংলা ছবি দেখেন?
"ভীষণভাবে দেখি। কলকাতার পরিচালকদের ছবি যে দেখতেই হয়। আমি বেশ অনেক বছর অপর্ণা সেনকে অ্যাসিস্ট করি। অনেক কিছু শিখেছি আমি অপর্ণা মাসির থেকে। এখনও যখন কথা হয়, অনেক কিছু শিখতে পারি। ওঁর ছবি তো আমার সব সময় প্রিয়।"
ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি কতটা ছুঁয়ে যায়?
"ঋতুপর্ণ ঘোষের কোন ছবি বাদ দিয়ে কোনটা বলি। সবই তো মন ছুঁয়ে যায়। 'দহন' আমার প্রিয় ছবির একটি।"
সুধীর মিশ্রা, অনুরাগ কাশ্যপকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আপনাকে কতটা প্রভাবিত করে?
"খোয়া খোয়া চান্দ' আমার লেখা। সে সময় স্ক্রিন প্লে লেখা থেকে পরিচালনা সব কিছুতেই আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন সুধীর মিশ্রাজি। আজ যতটুকু করছি তার জন্য সুধীর মিশ্রার সঙ্গে কাজ করাটা আমায় অনেক সাহায্য করছে। অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে কাজ করাটাও আমায় ততটাই সমৃদ্ধ করেছে। বলতে গেলে বলিউডে এসে এ ধরণের কাজ করতে পারাটা আমার সৌভাগ্য।"
কলকাতার এখনকার পরিচালকদের ছবি দেখেন?
" কয়েক দিন আগেই 'রে'-তে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'বহুরুপিয়া' দেখলাম। কি অসাধারণ কাজ। আমি দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। তাছাড়া কেকে মেননের মতো অভিনেতা। কেকে মেননের সঙ্গে আমার আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। অসাধারণ।"
ভবিষ্যতে বাংলায় ছবি বানাবেন?
" নিশ্চয় বানাতে চাই। বাংলার দুর্গা পুজো থেকে সব অনুষ্ঠান আমার মধ্যে ছোট থেকেই গেঁথে আছে। আমি মন থেকে ভালোবাসি বাংলাকে। তাই বাংলায় কাজ করতে পারাটা আমার জন্য গর্বের হবে। পরিকল্পনা রয়েছে। দেখা যাক। ভবিষ্যৎ কি বলে...."