গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে এসে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়। গর্ভেই সন্তানের মৃত্যু হয়। এরপরই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলে পরিবার। চিকিৎসকের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয় একটি ভিডিওর মাধ্যমে। সেই ভিডিও ঘটনার পরেরদিনই ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে অবশ্য সেই ভিডিও ডিলিট করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিতর্ক থামেনি। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আসরে নামেন চিকিৎসকও। একটি ভিডিও শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘২২ তারিখ খুব সকালে সোহিনীর স্বামীর ফোন পাই বাচ্চা নড়ছে না জানিয়ে। রোগীর ব্লাড প্রেশার বেশি ছিল, বাচ্চার মাপ খুব ছোট, বয়সও খানিকটা বেশি ছিল বলে দেরি না করে বাড়িতে আসতে বলি। সকাল আট’টা নাগাদ তাঁরা আসেন, পরীক্ষা করে দেখি বাচ্চার হার্ট সাউন্ড নেই। মায়ের প্রেশারও বেশি ছিল। সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলি।’
advertisement
চিকিৎসক জানান, ‘সোহিনী প্রেশারের ওষুধ খান। প্রেশার বেশি থাকায় বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছিল। সোহিনীর বাড়ির লোক সকালে ফোন করে জানান, বাইরে কোথাও একটা আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়েছে এবং দেখা গিয়েছে সব ঠিক আছে। তিনি তাও হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। কিন্তু ওঁরা তাঁর কাছে একবার যেতে চেয়েছিলেন।’ চিকিৎসকের দাবি, ওই রিপোর্ট নিয়ে ওঁরা হাসপাতালে ফিরে ভাঙচুরের চেষ্টা করেন, গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেন এবং রোগীকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যান। এরপর তাঁর কাঁচড়াপাড়ার বাড়িতে কিছু দুষ্কৃতী গিয়ে তাঁকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেন, চলে অশ্রাব্য গালিগালাজ। ওদের বক্তব্য তখনই সিজার করা হল না কেন?’
আরও পড়ুনঃ শিয়ালদহ থেকে কখন ছাড়বে কৃষ্ণনগর এসি লোকাল? ফিরতি ট্রেন কৃষ্ণনগর ছাড়বে কখন? জানুন ভাড়া, সময়সূচি
সব শেষে চিকিৎসকের যুক্তি, ‘ক্লিনিক্যালি সবসময় বোঝা যায় না, আল্ট্রাসাউন্ড লাগে। আমি বুঝে ডায়াগনসিস করেছি। আমি যা বলছি, সেটা কিন্তু মন থেকে বলছি না। সবকিছুর রিপোর্ট আছে, ব্লাড ক্লট ছিল, ওভেলিয়ার ইউট্রাস বলে একটা কথা আছে, সেটার রিপোর্টও আছে।’ তাঁর দাবি, অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তিনি দেখেন ‘কনসিল্ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ’-র কারণেই সোহিনীর গর্ভপাত হয়েছে। সহজ ভাষায় বললে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়ের দেহে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে শিশুর। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ বা কাজকর্ম করলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
চিকিৎসকের বয়ান প্রকাশ্যে আসতেই নেটদুনিয়া উত্তাল হয়। সোহিনীর প্রতি সমবেদনা, বদলে যেতে থাকে কটাক্ষে। নেটিজেনদের একাংশ কটাক্ষ করে মতামত দেন, অতিরিক্ত ভিউ পাওয়ার জন্য ভিডিও করতে গিয়েই নিজের সন্তানের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন সোহিনী। এবার গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন সোহিনী ও তাঁর স্বামী অনির্বাণ দে রায়। তিনি লেখেন, “ঘটনার সত্যতা না জেনেও এই দুঃসময় যারা পাশে ছিলেন তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এই বিষয়ে আমাদের আর কোন বক্তব্য থাকবে না।”
প্রায় ঘণ্টাখানেক লম্বা সেই ভিডিওতে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তাঁরা। একাধিক প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে দম্পতি বলেন, “শুরু থেকেই চিকিৎসকের সব পরামর্শ মেনেই এগিয়েছেন তাঁরা। এমনকি চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁদের খুবই সুসম্পর্ক ছিল। চিকিৎসক নিজেও তাঁদের ভিডিও দেখতেন বলে জানাতেন চেক-আপে গেলেই। সোহিনীর স্বামী অনির্বাণ বিভিন্ন তারিখে স্ত্রীর রক্তচাপ কেমন ছিল, সেই সব তথ্য তুলে ধরেন। চিকিৎসক কখনওই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে তাঁদের কোনও রকম সতর্কবার্তা দেননি বলেও জানান। গর্ভাবস্থার একেবারে শেষের দিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দেওয়া হয় তাঁকে। পাশাপশি ঘটনার দিন ঠিক কী কী হয়েছিল তার বর্ণনা দেন।
চিকিৎসকের সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ এদিন করেছেন তাঁরা। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই সোহিনীকে একাধিক বেসরকারি এবং সরকারি হাসপাতালে ছুটে যেতে হয় বলেও অভিযোগ। দম্পতির আরও অভিযোগ, ঘটনার দিন ভোর ৫’টা থেকে সকাল ৮’টা পর্যন্ত গর্ভস্থ শিশুর হৃদস্পন্দন শোনা গিয়েছিল। চিকিৎসক নিজেও সে কথা নিশ্চিত করেন। কিন্তু ক্রমশ সোহিনীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। একাধিক হাসপাতাল ঘুরে সোহিনী যখন সেই চিকিৎসকের কাছেই আবার ফিরে আসেন তখন রক্তপাত শুরু হয়েছে তাঁর। সেই অবস্থায় চিকিৎসক জানান, তাঁদের সন্তান মারা গিয়েছে। চিকিৎসকের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এমন দু’রকম কথায় দিশেহারা দম্পতি, যা নিয়ে প্রশ্ন করেও কোনও সদুত্তর পাননি।