সিনেমার পর্দায় তাঁর ভাবমূর্তির সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর৷ বললেন তাঁর নাতি৷ ১৯৮৮ সালে অভিনেতার প্রয়াণের সময় পি রাজের বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর৷ তবুও ফিকে হয়নি দাদুর স্মৃতি৷ বললেন, ‘‘দাদু ছিলেন খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং সময়ানুবর্তী৷ ঘড়ির কাঁটা ধরে চলতেন৷ সময় নষ্ট হলে বা কেউ করলে খুব রেগে যেতেন৷’’ অভিনেতার তুলনায় ক্রিমিনাল ল’ ইয়ার হিসেবে দাদুর স্মৃতিই নাতির মনে বেশি উজ্জ্বল৷
advertisement
মগনলালের প্রাইভেট সার্কাসে অর্জুনের নিশানা হওয়ার আগে শরবত পান করার জন্য ১ মিনিট সময় চেয়ে নেওয়া লালমোহন গাঙ্গুলি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যন্ত খাদ্যরসিক৷ কিন্তু কাজের চাপ এলে খাওয়াদাওয়ার কথা মনে থাকত না৷ এমনিতে মিশুকে৷ কিন্তু কাজের দিকে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করতে পারতেন না৷ ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়ে বললেন তাঁর নাতি৷ দাদুর অভিনীত সব সিনেমাই দেখেছেন৷ তবে সবথেকে প্রিয় ‘জয় বাবা ফেলুনাথ৷’
দাদু সন্তোষ দত্তর সঙ্গে ছোটবেলায় স্টুডিওপাড়ায় যেতেন পি রাজ৷ তখন থেকেই তাঁর গানবাজনার দিকে ঝোঁক৷ নাতির শখের সমঝদার ছিলেন সন্তোষ৷ কিন্তু বলেছিলেন আগে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে হবে৷ তার পর বাকি সব৷ পর্দায় সেই কাঠিন্যকে তাঁর সহজাত রসবোধের আড়ালে রেখে কয়েক প্রজন্মের শৈশব ও কৈশোরকে লালনপালন করে গিয়েছেন সন্তোষ দত্ত৷ তিনি না থাকলে বোধহয় সবুজ অ্যাম্বাসাডারে বেড়াতে পারতাম না| জানতাম না ডালমুটের স্বাদ| আফ্রিকায় নেকড়ে নেই‚ তাঁর অভিনয় না থাকলে কে শেখাত? তাঁর জন্যই জীবনটা হাইলি সা-স-পি-শা-স! না হলে হয়তো সবই জং বাহাদুর রানার ৫০.৭৫-এর জং ধরা ভোজালি ভোজালি হয়ে যেত| তাঁর জন্যই আমাদের স্বপ্নের শরবতে বিষ থাকে না| কোনও এক দুনিয়ায় নিশ্চয়ই এখনও সওয়াল জবাব করেন আইনজীবী সন্তোষ দত্ত| বেস্ট সেলার লিখে চলেন লালমোহন গাঙ্গুলি৷ উটের কুঁজে বসে আরব বেদুইন হওয়ার সাধপূরণ করেন জটায়ু৷ দিনের শেষে নিশাচরকে হারিয়ে তিনিই রক্তবরণ মুগ্ধকরণ নদীতীরে যাহা বিঁধিলে মরণ৷
আরও পড়ুন : রাখী গুলজার ফের বাংলা ছবিতে, পরিচালনায় শিবপ্রসাদ-নন্দিতা
সন্তোষ দত্তর একমাত্র কন্যা লাবণ্যর মৃত্যু হয়েছে ২০১৪ সালে৷ তার আগের বছর চলে গিয়েছেন অভিনেতার স্ত্রী৷ ফেলে আসা দিনের সোনালি মুহূর্তগুলিই এখন দৌহিত্রের নস্টালজিয়া৷ আর অনুরাগীদের মনের খাতায় রয়ে গিয়েছে তাঁর অটোগ্রাফ৷ নতুন ঝরনা কলম থেকে পড়া এক ফোঁটা কালি-সহ৷