সোনার কেল্লার ভুঁইয়ে একেনবাবু রহস্যের সমাধান তো করলেনই। সেইসঙ্গে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘দ্য একেন, রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান’ নিঃসন্দেহে হয়ে থাকল সত্যজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য৷ এই অভিযানের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ এবং ‘সোনার কেল্লা’৷ কিন্তু একবারও মনে হবে না অন্ধ অনুকরণ৷ পরিবর্তে এই ছবি উপহার দেয় মৌলিক রহস্যগল্পের প্লট৷
advertisement
জয়সলমীরে আসার আগে একেন তাঁর দুই ফ্রেন্ড ফিলোজফার গাইড প্রমথ এবং বাপিকে নিয়ে বাঙালির ‘তীর্থক্ষেত্র’ যোধপুর সার্কিট হাউসেও তাঁরা যান৷ সেখানেই তাঁদের অজান্তে ছিলেন গল্পের একজন ‘দুষ্টু লোক’৷ যিনি নাকি সার্কিট হাউসের বারান্দায় এক পায়ের উপর আর এক পা তুলে অবিকল বসে থাকেন ভূপর্যটক মন্দার বোসের মতোই৷ তাহলে কি রাজস্থানে শ্বাস রুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য আছেন কোনও নকল ডক্টর হাজরাও? নিজেকে অক্সফোর্ডের পুরাতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে দাবি করা শতদ্রু ঘোষই কি নকল ডক্টর হাজরা? রহস্যের ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকাতে থাকে একেনবাবুর মগজাস্ত্রে৷ তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে পাকস্থলি শান্ত না হলে টাকস্থলি কাজ করে না৷ তাই জামবাটি ভর্তি ভুজিয়া খেতে খেতেই হাড়কেপ্পন গোয়েন্দা বুঝতে পারেন নিশ্চিন্ত আর থাকা গেল না৷
আরও পড়ুন : গোয়েন্দা প্রজ্ঞাপারমিতা হয়ে ফের বড় পর্দায় ফিরছেন কোয়েল, এ বার পুজোয় মুক্তি পাবে ‘জঙ্গলে মিতিনমাসি’
এই শতদ্রু ঘোষের সঙ্গে তাঁদের আচমকা আলাপ সোনার কেল্লার পাথুরে পথে সেলফি তোলার সময়৷ দুবৃত্তদের হামলা থেকে শতদ্রুকে বাঁচান একেনবাবুরা৷ এর পর তাঁর সূত্রেই আলাপ জয়সলমীর জাদুঘরের কিউরেটর রাজ্যশ্রীর সঙ্গে৷ তাঁর উপরেও রহস্যের স্পটলাইট যথেষ্ট তীব্র৷ কারণ এই সংগ্রহশালা থেকেই উধাও সিন্ধু সভ্যতার অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ‘দ্য অক্স অব কলিবঙ্গান’ অর্থাৎ কলিবঙ্গান থেকে পাওয়া ষাঁড়ের মূর্তি৷ কেউ আসলটা সরিয়ে তার বদলে রেখে দিয়েছে নকল মূর্তি৷ বেনারসের ঘোষালবাড়িতে ক্যাপ্টেন স্পার্কের ঠাকুরদার ‘ওয়ার্ক অব আর্ট’ গণেশমূর্তি কীভাবে যেন মিশে যায় কলিবঙ্গানের রাগী ষণ্ডমূর্তিতে৷
মূর্তি বদল এখানেই শেষ নয়৷ একেনবাবুর চোখে ধরা পড়ল পরিত্যক্ত শহর কুলধরায় প্রাচীন মন্দির থেকে উধাও নটেশা বা নটরাজের আসল মূর্তিও৷ পরিবর্তে সে জায়গায় বসানো আছে নকল নটেশার মূর্তি৷ যার পায়ের নীচে উঁকি দিচ্ছে সেফ্টিপিনের মাথা৷ যেমন নিয়োগী পরিবারের সম্পদ নবজাগরণের শিল্পী তিনতোরেত্তোর আঁকা যিশুর তৈলচিত্রে আটকে ছিল শ্যামাপোকা৷
আরও পড়ুন : দিনের অধিপতি স্বয়ং সূর্যদেব! জানুন জীবনে সফল হতে রবিবার কী কী জ্যোতিষটোটকা পালন করবেন
‘দ্য একেন, রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান’-এ ঘুরে ফিরে এসেছে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘টিনটোরেটোর যিশু’, ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’ এবং অবশ্যই ‘সোনার কেল্লা’৷ তবে রাওয়াল জয়সওয়ালের তৈরি এই কেল্লার জৈন মন্দির, চামুণ্ডা মন্দির, কামানের মতো দ্রষ্টব্যগুলি খুব যত্ন করে দেখানো হলেও প্রশংসনীয় ভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে মুকুলের বাড়ি৷ কেল্লা ছাড়াও গাদিসর হ্রদ, বড়া বাগ, লঙ্গেওয়ালা যাওয়ার মরুপথ, থর মরুভূমি, উটের সারি-সহ জয়সলমীরের অন্যান্য দর্শনীয় জায়গাগুলির উপস্থিতি এ ছবিতে সদর্প ও গুরুত্বপূর্ণ৷
অভিনয় ও পরিচালনার মুন্সিয়ানায় দর্শকও ছবির প্রতি মুহূর্তে তদন্ত করতে করতে এগিয়ে চলেন৷ যে কোনও রহস্যগল্প বা ছবি সার্থকতা এখানেই৷ এবং সেদিক দিয়ে দ্য একেন সিরিজের দ্বিতীয় ছবি সফল৷ পদ্মনাভ দাশগুপ্তর চৌখস সংলাপ ও বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য এখানে ভাললাগার সেরা অনুঘটক৷ একেনবাবুর চরিত্রে রসবোধ থেকে অ্যাকশনদৃশ্যে অনির্বাণ চক্রবর্তী একাই একশো৷ চিত্রনাট্য অনুযায়ী নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন রজতাভ দত্ত, রাজেশ শর্মা, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, সোমক ঘোষ, সুহোত্র মুখোপাধ্যায় এবং সন্দীপ্তা সেন৷ তাই রাজস্থানে রক্তপাত সত্ত্বেও একেনবাবু কী করে দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ চোরাচালান হওয়া আটকালেন, সেই অভিযানের শরিক হওয়া যায় সপরিবারেই৷ শুধু আক্ষেপ, এই অভিযানে শামিল হতে পারলেন না একেনস্রষ্টা প্রয়াত লেখক সুজন দাশগুপ্ত।