কোন মন্ত্রবলে যেন বয়স থামিয়ে দিয়েছিলেন বলিউডের এই দিভা। সেই সময় থেকেই তিনি নিজের চারপাশে গড়ে তোলেন রহস্যের এক বলয়। যেতেন না বলিউডি কোনও পার্টিতে, কোনও অনুষ্ঠানেও তাঁর দেখা মেলা ছিল ভার। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটা শব্দও খরচ করতেন না সংবাদমাধ্যম, টিভিতে। অথচ সিনেমার পর্দায় তাঁর লাস্যময়ী উপস্থিতি বুকে কাঁপন ধরাত দর্শকদের মনে। তবু, বাস্তবে তাঁকে ছোঁয়া ছিল অসম্ভব।
advertisement
কিন্তু সেটের আলোর বৃত্তের বাইরে এক চরম অন্ধকারে ঢাকা রেখার জীবনে। ক্রমেই নিজেকে একাকীত্বের ঘেরাটোপে বন্দি করে ফেলেছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষত ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টা। উনিশশো তিয়াত্তরে অভিনেতা বিনোদ মেহেরাকে বিয়ে করেন রেখা। কিন্তু তাও টিকল কই? ইয়াসিরের রেখা দ্য আনটোল্ড স্টোরি থেকে জানা যায়, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গেলে বিনোদ মেহরার মা তাঁকে জুতো নিয়ে তেড়ে গিয়েছিলেন। কারণ অজানা, কিন্তু অনুমেয়।
এরকম ঘটনা যে ঘটবে তা রেখাও ভাবতে পারেননি। কলকাতায় বিয়ে করে রেখাকে বম্বে নিয়ে আসেন বিনোদ মেহরা। এই বিয়ে কোনওভাবে মেনে নিতে পারেননি বিনোদের মা। রেখা তাঁর আশীর্বাদ নিতে গেলে, তাঁকে ঠেলে সরিয়ে দেন। একটা সময় তাঁর দিকে জুতো নিয়ে তেড়েও গিয়েছিলেন।
ফের হতাশায় ডুবে যান রেখা। নায়িকা থেকে ঘরণী হয়ে উঠতে আর কত মূল্য চোকাবেন তিনি? এরপর নব্বইয়ে রেখার বিয়ে হয় ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালের সঙ্গে। কিন্তু রেখা-মুকেশ সম্পর্কেও চিড় ধরে কিছুদিনের মধ্যেই। রেখার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় মুকেশের। রেখার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরই অবসাদে ভুগতে থাকা মুকেশ শেষ পর্যন্ত গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সেদিনও তাঁর গলায় জড়িয়ে ছিল রেখার ওড়না।
স্বামী মুকেশের আত্মহত্যার পর চারিদিক থেকে রেখার দিকে উড়ে এসেছিল ঘৃণা আর অভিশাপ। এই ঘটনায় রেখাকেই দায়ি করে তাঁকে রীতিমত আক্রমণ করেন শশী কাপুর, অনুপম খের থেকে সুভাষ ঘাই। আরও একটা চরম খারাপ সময়। রেখাকে মানসিকভাবে আরও শক্ত করেছিল।
রেখা আজও বলিউডের কুইন। যেখানেই তিনি সেখানেই ভিড়। তাঁকে ঘিরে রহস্য এতটুকুও কমেনি। এখনও তিনি এক আগুন, যাতে ঝাঁপ দিতে সবসময় তৈরি পতঙ্গরা। রেখা অফুরান।
ছবি: Youtube Clip