শর্বরী দত্তের প্রয়াণে গভীর ভাবে শোকাহত পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। তাঁর মতে, বাংলার ফ্যাশন সমৃদ্ধি হয়েছে শর্বরী দত্তের হাত ধরে। তাঁর সঙ্গে কাজ করায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন রাজ। আত্মার শান্তি কামনা করেছেন পরিচালক।
জনপ্রিয় কবি অজিত দত্তের মেয়ে শর্বরী। সাহিত্য চর্চা, বই, থিয়েটার, পেন্টিং এইসবের মধ্যে বড় হয়েছেন। সৃজনশীল সব কিছুই তাঁর ভাল লাগতো। কিন্তু নিজেকে প্রকাশ করার মাধ্যম কোনটা বুঝে উঠতে পারতেন না। পড়াশোনার পাঠ চুকে গেলে, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় শর্বরীর। একেবারে যৌথ পরিবারের গিন্নি হয়ে ওঠেন তিনি। পরিবার, সন্তান নিয়ে বেশ ছিলেন। কিন্তু মনে ঘুরপাক খেত নানা রকম ডিজাইন। পোশাক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসতেন শর্বরী। ১৯৯১ সালে শখ করে একটি ঘরোয়া প্রদর্শনী করেন তিনি। মোটামুটি সব বিক্রি হয়ে যায়। প্রথম থেকেই শর্বরী পুরুষদের জন্য পোশাক বানান। ভারতীয় পোশাককে নতুন ভাবে আবিষ্কার করেন তিনি। একেবারে ইউথদের কাছে পৌঁছে দেন ঐতিহ্যবাহী পুরাতনি বেশ। তবে নতুন মলাটে।
প্রথম প্রদর্শনীর পর অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন শর্বরী। পরের বছর আবার একটি প্রদর্শনী করেন। তবে এবারে প্রচার পান তিনি। কলকাতার সমস্ত দৈনিকে বেরোয় শর্বরীর নাম। ফ্যাশন কিংবা পোশাক সম্পর্কে কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি হয়ে ওঠেন ট্রেন্ড সেটার।
শর্বরী দত্তের প্রয়াণে শোকাহত অভিনেতা সুদীপ্তা। অসম্ভব হাসিখুশি, প্রাণবন্ত মানুষের হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পাচ্ছেনা অভিনেতা। শর্বরী দত্তের প্রয়াণে ফ্যাশন জগৎ-এ একযুগের অবসান মত সুদীপ্তার।
বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে ভারতের সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে তাঁর কাজের ইন্সপিরেশন। মূলত raw সিল্ক ও তসরের ওপর কাজ করতেন শর্বরী। বাংলার সেলেবরা তো বটেই, এম এফ হুসেন, সুনীল গাভাস্কর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, কপিল দেব-সহ বিভিন্ন তারকাদের জন্য ডিজাইন করেছেন শর্বরী। অভিষেক বচ্চনের বিয়ের পোশাক তাঁর করা। ঐশ্বর্যের মা বৃন্দা রাই কলকাতায় এসেছিলেন, 'চোখের বালি'-র শ্যুটিং-এর সময়। তখন একবার আসেন শর্বরী স্টোরে। সেইবার অনেক পোশাক কেনেন। মেয়ের বিয়ের আগে তিনি শর্বরীকে ফোন করেন। হবু জামাই, বেয়াই, বর, ছেলের ও কিছু বন্ধুবান্ধবের পোশাক বানানোর দায়িত্ব দেন তাঁকে। তাছাড়া কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের অতিথিদের জন্য পোশাক বানিয়েছেন শর্বরী। ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি 'অন্তরমহল'-এ জ্যাকি শ্রফ ও অভিষেক বচ্চনের পোশাক তাঁর করা।
পেশাগত জীবনে তেমন কখনও সমস্যায় পড়েননি শর্বরী। ব্যবসা করেছেন নিজের শর্তে। তবে ভাগ্যের এমনই পরিহাস, বিবাদ বাধে নিজের ছেলে অমলিনের সঙ্গে। স্টোর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। অপর এক পার্টনারের সঙ্গে শুরু করেন নিজের স্টোর ‘শূন্য’। বৃহস্পতিবার রাতে কেমন যেন সব কিছু শূন্য করে দিয়েই চলে গেলেন শর্বরী। কথায় বলে, সমস্ত সফল পুরুষের পিছনে কোনও মহিলার হাত থাকে। এই ক্ষেত্রে বলা যায়, সমস্ত সুসজ্জিত পুরুষের পিছনে শর্বরীর ভাবনা ছিল।