অনেকেই দাবি করে থাকেন, স্পটলাইটে নিজেকে নিয়মিত ভাবে রাখতে বিতর্কই পুনমের তুরুপের তাস। এবারও তাই হয়েছে। পরে অবশ্য জীবিত থাকার প্রমাণও তিনি দিয়েছেন, আকস্মিক মৃত্যুর খবরটা যে মিথ্যা, তাও প্রমাণিত হয়েছে।
কথা হল, এরকম একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এবার এই কাণ্ডটা কি না ঘটালেই চলছিল না? কঙ্গনা রানাউত, করণ কুন্দ্রার মতো বি-টাউনের অনেক ব্যক্তিত্বই পুনমের এই অতিনাটকীয়তার নিন্দায় সরব হয়েছেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ জাকির হুসেন, শঙ্কর মহাদেবন…! গ্র্যামি পুরস্কারের মঞ্চে ভারতেরই জয়গান, ঘরে এল ৩টি গ্র্যামি
সম্ভবত, এই সবের জেরে যাতে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না হয়, সে কথা মাথায় রেখে Schbang নামের এক এজেন্সি, যারা পুনম পাণ্ডের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল দেখভাল করে, একটি বিবৃতি সম্প্রতি জারি করেছে। পুনমের জাল মৃত্যুসংবাদও তারাই ছড়িয়েছিল, অতএব, এবার সত্যিটা সামনে নিয়ে আসার পালা। কেন এরকমটা করা হয়েছিল, সে কথা LinkedIN-এ নিজেগের হ্যান্ডেল থেকে জানিয়েছে সংস্থা, ক্ষমাও চেয়েছে।
কী লেখা আছে সেই বিবৃতিতে?
Schbang সবার প্রথমে সেই সব মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে যাঁরা সার্ভিক্যাল বা অন্য কোনও ক্যানসারে তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। পুনমের মিথ্যা মৃত্যুসংবাদ তাঁদের সেই কষ্টের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে, এর জন্যই ক্ষমা চাওয়া। এতে লেখা ছিল, “স্বীকার করে নিতে বাধা নেই, আমরা Hauterfly-এর সহযোগিতায় সার্ভিক্যাল ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পুনম পাণ্ডের উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। বক্তব্য শুরু করার আগে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে চাই- বিশেষ করে তাঁদের প্রতি যাঁরা যে কোনও ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত প্রিয়জনের কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন, খবর যেহেতু তাঁদের বিচলিত করেছে”।
সংস্থা সাফ জানিয়েছে যে তাদের এবং পুনমের উদ্দেশ্য ছিল সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে জনমানসে সচেতনতার প্রচার। “আমাদের এই কাজ আসলে এক মিশন দ্বারা চালিত হয়েছিল– সার্ভিকাল ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। ২০২২ সালে ভারতে ১২৩,৯০৭ সার্ভিকাল ক্যানসারের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে এবং ৭৭,৩৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্তন ক্যানসারের পরে এই জরায়ুমুখের ক্যানসারই মহিলাদের সর্বাধিক প্রভাবিত করছে”, একটি সংক্ষিপ্ত হলেও পরিসংখ্যান পেশ করেছে তারা।
অনেকে এও বলেছেন, পুনমের কোনও প্রিয়জন যদি ক্যানসারে আক্রান্ত হতেন, তাহলে তিনি এই ধরনের চমকের আশ্রয় নিতেন না। এই দাবিকে খর্ব করে সংস্থা জানিয়েছে, যে পুনম পাণ্ডের মা ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন, এই রোগের সঙ্গে তিনি লড়াই করেছিলেন, ফলে পুনম ক্যানসারের প্রভাব সম্পর্কে যথেষ্টই সচেতন। সংস্থার সেই পোস্টে বলা হয়েছে, “আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না কিন্তু পুনমের মা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন। এই রকম ঘনিষ্ঠ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই ধরনের রোগের সঙ্গে লড়াই করার চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরে, পুনম এর প্রতিরোধের গুরুত্ব এবং সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা ভালই বোঝেন, বিশেষ করে যখন একটি ভ্যাকসিনও রয়েছে”।
তাদের এই পদক্ষেপ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সবাই বিচার করলেও আদতে যে তারা সার্থক, সংস্থা তাও উল্লেখ করেছে। জানিয়েছে, “সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে মানুষের সচেতনতার কোনও পরিবর্তন হয়নি যখন আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রীয় বাজেটের সময় এর উল্লেখ করেছিলেন। অথচ, পুনমের এই কাজ সার্ভিক্যাল ক্যানসার এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্যগুলিকে গুগলে সর্বাধিক সার্চ হওয়া বিষয়ে পরিণত করেছে৷ এই দেশের ইতিহাসে এই প্রথম সার্ভিক্যাল ক্যানসার শব্দটি এক হাজারেরও বেশি শিরোনামে এসেছে।”
“তবুও আমাদের এই উদ্যোগের কারণে যাঁরা আঘাত পেয়েছেন তাঁদের কাছে আমরা গভীরভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা বুঝতে পেরেছি যে আমাদের পদ্ধতি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যদিও আমরা যে কারও খারাপ লাগার জন্য দুঃখিত, কিন্তু অস্বীকার করারও উপায় নেই যে যদি এই পদক্ষেপের ফলে প্রয়োজনীয় স্তরে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃত্যু রোধ হয়, তাহলে সেটাই হবে তার প্রকৃত প্রভাব”, বলছে সংস্থা।
“আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে এটি একটি প্রো-বোনো কার্যকলাপ এবং বাণিজ্যিকভাবে কোনও ক্লায়েন্টের সঙ্গে এর কোনও যোগসূত্র নেই। এটি এমন একটি ক্যানসার যা ইউএসসিডিসি অনুসারে ৯৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই একটি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য এবং আমরা সেই সচেতনতা প্রসারের অংশ হিসাবে নিজেদের কাজটুকু শুধু করেছি। আমরা আশা করি যে এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র সার্ভিক্যাল ক্যানসার নয়, সমস্ত প্রতিরোধযোগ্য রোগ সম্পর্কে জীবন রক্ষার সচেতনতা বাড়াতে একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে”, এই বলে শেষ করা হয়েছে বিবৃতিটি।
বিতর্কে কি এবার তাহলে ইতি পড়বে?