আসলে, সৌমিক সেনের ‘মহলয়া’ ছবির মূল সমস্যাই হল গল্প ৷ ছবিতে দেখানো গল্প অনুযায়ী, ওপর ওয়ালার চাপে ১৯৭৬ সালে আকাশবাণীতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র ও পঙ্কজ মল্লিকের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বন্ধ করে, সেই জায়গায় চলে আসেন উত্তম কুমার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ৷ এই হঠাৎ ‘পরিবর্তন’, এর নেপথ্যে রাজনীতি ও বাঙালির নস্ট্যালজিয়া আঁকড়ে ধরাই মূলত ছবির মূল উপপাদ্য বিষয় হয়ে ওঠে ৷ আর এই জায়গা থেকেই শুরু হয় সমস্যা ৷ আসলে, এতো ছোট্ট একটি ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে একটা তথ্যচিত্র কিংবা শর্টফিল্ম হলে ক্ষতি ছিল না ৷ কিন্তু এটাকে ফিচারফিল্মের রূপ দিতে গিয়েই ঘটে গণ্ডগোল ৷ সংলাপ ও অভিনেতাদের আসা-যাওয়া দিয়ে কতক্ষণ আর ছবিকে ধরা যায় ? ধরতেও পারেননি পরিচালক ৷ আর সেই কারণেই হয়তো বার বার একই দৃশ্য, একই রকমভাবে চলে আসে ৷ নতুন কিছু আর বলতে পারে না ৷
advertisement
পরিচালক সৌমিক সেন, বাঙালির ‘মহালয়া’ প্রেমকে আনতে চেয়েছিলেন ছবি জুড়ে ৷ আনতে চেয়েছিলেন নস্ট্যালজিক হয়ে ওঠার অভ্যাস ৷ ভেবেছিলেন একেই হাতিয়ার করে হয়তো ছবিটা উতরে দেবেন ! কিন্তু সেই নস্ট্যালজিয়াটাকে দেখাতে গিয়ে অতিনাটকীয়তা নিয়ে এসেছেন তিনি ৷ নিয়ে এসেছেন অযথা কিছু চরিত্রও ৷ যা কিনা না থাকলেও হতো ৷
অভিনয়ের দিক থেকে শুভাশিস মুখোপাধ্যায় নিজের সেরাটা দিয়েছেন ৷ বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের আদব-কায়দায় নিজেরে একেবারে নিংড়ে দিয়েছেন শুভাশিস ৷ যিশু সেনগুপ্ত এই ছবিতে উত্তম কুমার হলেও, যিশুর মতনই ছিলেন ৷ আর এখানেই তিনি দক্ষ অভিনেতার প্রমাণ দিয়েছেন ৷ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ৷ তবে ঠিক কেন ছিলেন, তার ছবিতে থাকাটা কতটা জরুরী ছিল, তা তর্কের বিষয় হয়ে উঠতে পারে৷ তবে সেটা করে বিশেষ লাভ হবে না ৷ অন্যদিকে, শুভময় চট্টোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক এবং সহঅভিনেতারা আলাদা করে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি ৷
সবশেষে বলতে গেলে, সৌমিক সেনের ‘মহালয়া’ ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার মতো ছবি৷ এই ছবি কোথাও কোনওরকম ছাপ ফেলতে পারে না ৷ এমনকী, এই ছবিতে এমন কিছু নেই যা হল থেকে বেরিয়ে এসেও মনে থাকে ৷ তবে হ্যাঁ, ছবি শেষে মাল্টিপ্লেক্সের ডলবি ডিজিট্যাল সাউন্ডে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্রপাঠ ও ‘জাগো তুমি জাগো...’ শুনতে খারাপ লাগে না !