অসমের শিলচরের ভট্টাচার্য পরিবারের সবাই ছিলেন কোনো না কোনোভাবে গানের সঙ্গে যুক্ত। তাই এই পরিবারের ছেলে গানকেই করবেন জীবনের ধ্যান-জ্ঞান, এ ঘটনা বিস্ময় জাগায়নি কারও মনে। তবে কালিকা প্রসাদের বাবা রামচন্দ্র ভট্টাচার্য’র দেখানো ধ্রুপদী সংগীতচর্চার পথে না এগিয়ে কালিকা ঝুঁকেছিলেন কাকার লোকগানের আধ্যাত্মিক দর্শনেই। আর সেই সূত্রেই বাঁধলেন নিজের বাংলা গানের ব্যান্ড দোহার ৷ তবে কালিকাপ্রসাদ তাঁর এই গানের দলকে কখনই ব্যান্ড বলতে চাননি ৷ বরং ফোক কালচারের এক অংশ বিশেষ বা বলা যায় ফোক গানকে এগিয়ে নিয়ে চলার কাণ্ডারি হিসেবেই দোহারকে নিয়ে ভেবেছেন ৷
advertisement
একদিকে সবাই যখন ঝুঁকেছিল পশ্চিমা সুর-লয়ের দিকে, ছাত্রদের ব্যান্ড মানেই যেখানে সফট, অল্টারনেটিভ থেকে শুরু করে হার্ড ও প্রগ্রেসিভ রক ঘরানার গান, সেখানে দোহার যেন ছিল এক ব্যতিক্রমী নাম। নিজেদের মৌলিক গান দিয়ে নয়, দোহার পরিচিত পেয়েছিল আবহমান বাংলার বাউল, কীর্তন, ঝুমুর, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, চটকার মতো ভুলতে বসা লোকগান নতুন করে তুলে এনে। কালিকা প্রসাদের আকস্মিক মৃত্যুতে সেই ফোক গানের জগত যেন আজ তারকাহীন, মাস্টারহীন ৷
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দোহারের প্রধান শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের। হুগলির গুড়াপের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন দোহার ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য কালিকাপ্রসাদ ৷ অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার পথেই ঘটেছিল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ৷
ঘণ্টায় একশোরও বেশি কিলোমিটার গতিবেগ। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ছুটছিল কালিকার গাড়ি। চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন কালিকাপ্রসাদ। গুড়াপ থানার কাছে মালঞ্চে বাঁদিকে রাস্তার পাশে প্রথম ছোট পোস্টে ধাক্কা খায় গাড়ি । কার্যত গার্ড রেলের উপর উঠে গিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে গাড়ি । চালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর কালভার্টে ওঠার মুখে সিমেন্টের পাঁচিলে ধাক্কা খায়। পাঁচিল ভেঙে গাড়ি উলটে গিয়ে প্রায় পনের থেকে কুড়ি ফুট নীচে নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে আহতদের উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷