মর্ণিং ওয়াক?
বলতে পারেন! তবে একটু আলাদা রকমের!
মানে?
আমি ট্র্যাক, স্নিকার পরে বাড়ি থেকে বেরই! তারপর যেটা করি, সেটা বাকিদের থেকে একটু আলাদা! সবাই যখন রাস্তা দিয়ে জগিং করছে, আমি তাদের পাশে পাশে গাড়ি করে ঘুরি...! এবার এতটা ঘুরতে অনেক ক্যালরি পোড়ে! তাই ঘাটতি মেটাতে সোজা কচুরির দোকানে ঢুঁ মারি!
advertisement
দরাজ গলায় হাসলেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! সাফল্যের চূড়ায় উঠেও যাঁর পা মাটি ছুঁয়ে! আগামী ছবি 'বাঘ বন্দি খেলা'র প্রচারে এই মুহূর্তে তিনি কলকাতায়!
কেমন আছেন বলুন!
বেশ চলছে!
খুশি?
কী নিয়ে বলুন?
এই, এখনকার গান..
দেখুন, ইদানীং একটা কথা মাঝেমাঝেই শুনি, ' সেরকম গান হচ্ছে না!'
এই কথাটা না অ্যালার্জিক! 'সেরকম ' মানেটা কী ? এরকম কোনও সময়ই হতে পারে না, যখন সব গানই 'কাল্ট' হয়ে থেকে যাবে ! যে সময় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, সুধেন দাসগুপ্ত, শলীল চৌধুরী-র গাওয়া এক-একটা মাস্টারপিস জন্ম নিয়েছে, সেইসময় কি কোনও মধ্যমাণের গান তৈরি হয়নি ? হয়েছে! কাজেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এখন যে গান হচ্ছে, তারমধ্যে ভাল-খারাপ দুই-ই আছে এবং এমন কিছু গান তো রয়েছেই যা আজ থেকে ২০ বছর বাদেও থেকে যাবে!
এই সময়ের কাদের কাজ ভাল লাগে ?
অনুপম (রায়) ভাল! ততোধিক ভাল রূপম (ইসলাম)! ওর মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে, নিজেকে ভাঙতে-গড়তে জানে! আর প্রবুদ্ধ দা (বন্দ্যোপাধ্যায়)! হিন্দিতে রেহমান (এ আর রেহমান), বিশাল ভরদ্বাজ!
ইদানীং প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫-৬টা ছবি মুক্তি পাচ্ছে! প্রতিটা ছবিতে গড়ে ৫টা করে গান থাকলেও, সপ্তাহে ৩০টা নতুন গান...! একটা গান মনে ছাপ ফেলতে না ফেলতেই আরেকটা গান চলে আসছে...
এটা সমস্যা বৈকি! তবে, এখকার দিনে গান হিট করানো একটা বড় স্ট্রাগল! আগে খালি রেডিওতে গান শোনা যেত! শ্রোতা একটা গান শুনে, পছন্দ হলে দোকানে ছুটত ক্যাসেট বা সিডি কিনতে! এখন তো হাতের মুঠোয় বিশ্ব! ইউটিউব, এতগুলো মিউজিক অ্যাপ...!
কিন্তু ক্লাসিক গান কি তৈরি হচ্ছে?
২০০৪-এ আমি যখন প্রথম কাজ শুরু করি, অদ্ভুতভাবে একটা পরিবর্তণ এসেছিল!'প্রেমী', 'বন্ধন', 'শুভদৃষ্টি', 'মন মানে না'... একের পর এক সুপার ডুপার হিট অ্যালবাম! মানুষ এখনও গানগুলো শুনছে! হিন্দিতেও 'আশিকি ২'-র হাত ধরে একটা বিপ্লব ঘটল! তারপর একে একে 'সিটি লাইটস', 'খামোশিয়াঁ', 'হমারি আধুরি কহানি',' রুস্তম'...! যদি এই মুহূর্তে 'ক্লাসিক' গান তৈরির কথা বলেন, বলব-- না, তৈরি হচ্ছে না! তবে এই সময়টা কেটে যাবে! আবার ভাল সময় অাসবে !
কিন্তু এরম সময়টা এল কেন ?
অনেকগুলো কারণ রয়েছে! প্রধান যে কারণটা আমার মনে হয়, সেটা অডিও কোম্পানিগুলোর দূরদর্শিতার অভাব! একটা ছবিতে মিউজিকের ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত ! বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিচালকের মতামতও গ্রাহ্য করা হয় না! কাজেই প্রচুর নতুন ট্যালেন্ট নষ্ট হচ্ছে! শচিন দেব বর্মন, মনমোহন স্যার (সিং)-এর মতো গান বানানোর প্রতিভা বসে রয়েছে, খালি সুযোগ পাচ্ছে না!
মেসোমশাই...
একই সঙ্গে অভিভাবক, গুরু এবং সবথেকে প্রিয় বন্ধুকে হারালাম। এটা যে কতবড় অভাব, বলত পারব না! বাবার আশীর্বাদেই এখনও কাজ করে যেতে পারছি!
বাবার কোন জিনিসটা সবসময় নিজের কাছে রাখেন ?
বাবার মিউজিক! বাবা যখন আসুস্থ , হাপাতালে ভর্তি, আমি সারাদিন বাবার সঙ্গে থাকতাম! ওই সময়েও বাবা আমার হাতে ওঁর অ্যাকোর্ডিয়ানটা বাজিয়েছিলেন। ওই মিউজিকটা আমার মননে গেঁথে রয়েছে, সেটা বাঁচিয়ে রাখাটাই আমার সবেকে বড় দায়িত্ব!
জীবনে কোনও আফসোস?
একসময় ফুটবল খেলতাম ! খেলা ছেড়ে গানে এলাম! তবে এই নিয়ে কোনও আফসোস নেই! ওটা আমারই সিদ্ধান্ত ছিল! আর গান নিয়ে যতবারই সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছি, সেটাকে হেলদিভাবে নিয়ে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করেছি। কাজেই, সেইভাবে দেখতে গেলে, এখনও পর্যন্ত কোনও আফসোস নেই!