গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে সমীর মন্ডলের জীবনসংগ্রাম। এক ছাত্রী নন্দিনী গুপ্তকে খুনের অভিযোগে সাত বছর জেল খাটার পর সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে মুক্তি পেলেও সমাজ এবং পরিবার তাঁকে গ্রহণ করতে চায় না। ইতিমধ্যেই সমীরের স্ত্রী সুষমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাঁরই বন্ধু অশোক, আর সমীরের মেয়ে তুলি অশোককেই নিজের বাবা বলে জেনে এসেছে।
advertisement
এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিক রাকা ও তাঁর সহকর্মী টিনটিন সমীরের নির্দোষিতায় বিশ্বাস রেখে সমান্তরাল তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের সূত্রে তাঁরা সুন্দরবনের হাজিডিঙ্গা গ্রামে এক কিশোরী বিন্তির পুরনো খুনের মামলার সন্ধান পান। বিন্তি ও নন্দিনী—দু’জনেই বাঁ-হাতি শিল্পী ছিলেন এবং পায়ে রুপোর মল পরতেন, যা দুই খুনের মধ্যে অদ্ভুত মিল তৈরি করে।
তদন্ত এগোতে থাকলে উঠে আসে ধ্রুবজ্যোতি মিত্র ওরফে রঙিন-এর নাম। পেশায় আর্ট টিচার ধ্রুবের শৈশব কেটেছে বুল্টি নামের এক নারীর হাতে চরম নির্যাতনের মধ্যে। সেই গভীর ট্রমা থেকেই সে তরুণী শিল্পীদের টার্গেট করতে শুরু করে, যাদের মধ্যে সে নিজের অতীতের নির্যাতকের ছায়া দেখতে পায়।
গল্পের চূড়ান্ত মুহূর্তে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলে ধ্রুব সমীরের মেয়ে তুলিকে পরবর্তী শিকার হিসেবে ফাঁদে ফেলে। শেষ মুহূর্তে সেখানে পৌঁছে সমীর মেয়েকে বাঁচালেও ধ্রুবকে থামাতে গিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে সমীর মৃত্যুবরণ করেন, তবে মেয়ের চোখে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। গল্পের শেষে আরও এক ভয়াবহ মোড়—অন্য কোথাও সেই বুল্টিকেই এক শিশুর ওপর নির্যাতন চালাতে দেখা যায়, যা ইঙ্গিত দেয় ট্রমার এই চক্র এখনও শেষ হয়নি।
এই সিরিজে অভিনয় করেছেন সুব্রত দত্ত, অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, শাওন চক্রবর্তী, শুভ্রজিত দত্ত, শ্রীজা ভট্টাচার্য, পূষান দাশগুপ্ত, রানা বসু ঠাকুর, জয়তী চক্রবর্তী, অর্পিতা সরকার, আলকারিয়া হাশমী ও অলকানন্দা রায়। কাটাকুটি ২ ইতিমধ্যেই তার বিষয়বস্তু ও প্রথম ঝলকে দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে।
বুধবার, বছরের শেষ দিনে শুটিং ফ্লোর লোকে লোকারণ্য। চলল কেক কাটা। উদযাপন। তার মধ্যেই এক ফাঁকে ধরা দিলেন অভিনেতা সুব্রত দত্ত। সমীর মণ্ডলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর মতে, কাটাকুটি ২ একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং স্তরবহুল সিরিজ। কন্যাসন্তানের বাবা হওয়ার কারণে তিনি সমীর মণ্ডল চরিত্রটির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে গভীর সংযোগ অনুভব করেছেন। তাঁর কথায়, “দেশে নারীদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অপরাধ ও লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে, তার প্রেক্ষিতে এই সিরিজ আজকের সময়ের সঙ্গে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। এখানে ভিকটিম-জাস্টিস প্রসঙ্গ, তদন্তমূলক সাংবাদিকতা, বিভিন্ন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি—সব মিলিয়ে একাধিক আকর্ষণীয় ট্র্যাক রয়েছে।”
অন্য দিকে, রাকার চরিত্রে অমৃতা চট্টোপাধ্যায়। প্রথমবার পরিচালক রাজা চন্দের সঙ্গে কাজ করে দারুণ খুশি তিনি। তাঁর মতে, রাজা চন্দ এই সিরিজটিকে সিনেমার মতো করেই শুট করেছেন—খুব শান্ত, খুঁটিনাটি বিষয়ে যত্নশীল এবং নতুন শুটিং অ্যাঙ্গেল নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন তিনি।
সুব্রত চরিত্র রানা বসু ঠাকুর। অভিনেতা বললেন, “এইরকম ধূসর চরিত্র খুব একটা করা হয়ে ওঠেনা। রাজা চন্দর পরিচালনায় কাজ করা ছিলো দারুণ অভিজ্ঞতা। আর পিতৃতান্ত্রিক পরিবেশের কর্মস্থানে, অমার্জিত ব্যবহার করা, অমৃতার এডিটর, এক দুশ্চরিত্র বসের চরিত্রায়ন করার প্রেক্ষিতে, আশা করি দর্শকদের সামনে রুঢ় বাস্তবের আয়না তুলে ধরবে। দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্রে বহু নারী এই প্রকারের ঘৃণ্য ব্যবহারের শিকার হয়ে থাকেন।”
এই সিরিজে তুলনামূলকভাবে দেরিতে যুক্ত হয়েছিলেন অলকারিয়া হাশমী। তাঁর কথায়, “প্রস্তুতির সময় খুব কম থাকলেও চিত্রনাট্যকার রুদ্রদীপ চন্দ এবং পরিচালক রাজার সহায়তায় চরিত্রটির জটিল স্তরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়েছে।”
প্রথমবার ক্লিকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে তিনি ইতিবাচক বলেই বর্ণনা করেছেন। শাওন চক্রবর্তীর সঙ্গে আগে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত একটি ছবিতে কাজ করার সুবাদে পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল, যা এই সিরিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয়কে সহজ করেছে।
সব মিলিয়ে, ‘কাটাকুটি ২’—একটি মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার, যেখানে অপরাধ, ট্রমা এবং বিচারব্যবস্থার জটিলতার পাশাপাশি উঠে আসবে একাধিক সমসাময়িক সামাজিক প্রশ্ন।
