বড়পর্দায় প্রথম বার, শোলাঙ্কি, এই ছবি তৈরির যাত্রায় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এটা একটা দারুণ জার্নি। তার কারণ, আমি কাজ শুরু করেছিল ২০১৩ সালে। একটা একটা করে কাজ করেছি। আমি খুব একটা প্ল্যান করে জীবনটা বাঁধিনি কোনওদিনই, এ ক্ষেত্রেও কোনও পরিকল্পনা ছিল না। মানে আমি একটার পর একটা কাজ সাজাইনি। তবে ছোটবেলা থেকে সিনেমা দেখে বড় হয়েছি। মনে হয়েছিল, কোনও দিন যদি বড় পর্দায় কাজ করতে পারি, তাহলে ভাল হবে। সেটা প্রায় কাজ শুরু আট বছর হল, প্রথম ছবি। মারাত্মক একটা উত্তেজনা আছে। সেই স্ক্রিপ্ট শোনা থেকে শুরু করে, তার শ্যুটিং, ডাবি, এডিট, গান, সবটা মিলিয়ে শুক্রবার তার একটা পর্বের শেষ। এক বছরের প্রায় একটা জার্নি। আমি উত্তেজনায় আছি, আশায় আছি, টেনশনে আছি, সব মিলিয়ে আর কী।
advertisement
এখন পরিকল্পনা কী?
আমার কাছে আজীবনই ফরম্যাটটার থেকে বিষয়বস্তুটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ থেকেছে। এখন অবশ্যই আমি কাজে মন দিতে চাই। এটা একটা ছবি মুক্তি পেয়েছে। তাই কাজে মন দেওয়া ছাড়া আপাতত কিচ্ছু করার ইচ্ছা আমার নেই।
আবার হুট করে ছুটি চেয়ে বসবেন না তো?
সেট হতে পারে আমি বলছি না। কিন্তু আমি জীবনটাকে নিয়মে বাঁধতে চাই না। কিন্তু এমন তো আগে হয়েছে। মানে ছুটি নিয়েছি। আর আমার কথা হল, কিছুদিন ছুটি নিতে ইচ্ছা করলে আমি নেব না? আমারই তো জীবন।
আপনি তো এখন বং ক্রাশ! ছুটি চাইলেই দিচ্ছে কে!
এটা তো দারুণ বিষয়। আমি আর কী বলব। এ সব হবে আমি তো কিছু ভাবিনি।
অনেকে তো এসব ভেবে নিয়ে নিজের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়, মানে অনেক কিছু মেন্টেন করে। আপনি করেন?
না না, আমি ওগুলো করি না বলেই হয়ত লোকে আমাকে এতটা পছন্দ করে। মানুষ ভালবাসে ওই কারণেই। আমার এটাই মনে হয়। আমি চিরকালই একটু নিজের মতো থাকতে ভালবাসি। আমার মনে হয়, সেটাই রয়ে গিয়েছে। যাঁরা আমাকে পছন্দ করেন, আমাকে ভালবাসেন, ওটার জন্যই ভালবাসেন। আমি নিজের কোনওকিছুই পাল্টাতে চাই না।
ছাত্রজীবনে চুটিয়ে রাজনীতি করেছেন? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম প্রার্থী ছিলেন! তারপর কী হল?
কী হল মানে, জীবনের মোড়টা একটু ঘুরে গেল আর কী। ছাত্র জীবনে একটা বিশাল আবেগ কাজ করে তো, তাই ছাত্র রাজনীতিটা যে ভাবে করেছি, করেছি। কিন্তু পরবর্তীকালেও আমার রাজনীতিটা থেকে আমি সরে আসিনি। হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন, আমি সক্রিয় রাজনীতিতে নেই, কিন্তু আমি ভীষণই রাজনৈতিক মানুষ। আমাকে কোনও ছাতায় বা মঞ্চে দেখা যায় না মানে এই নয় যে আমার জীবনটা রাজনীতির বাইরে। এটাই আমায় রাজনীতি শিখিয়েছে যে রাজনীতি বাদ দিয়ে তো জীবন নয়।
সোজা কথা, আপনি এখনও বামপন্থীই আছেন?
হ্যাঁ, আমি বামপন্থাতেই বিশ্বাস করি। কিন্তু কোনও দল করি না, কোনও দলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমার রাজনীতিটা আমার ব্যক্তিগত জার্নি। কোনও দলের মধ্যে আমি পড়ি না। আমি রাজনীতির ছাত্রী, আমার মধ্যে রাজনীতিটা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, এটাও সত্যি, আমি বামপন্থায় বিশ্বাস করি, ডানপন্থায় বিশ্বাস করি না, এটাই স্বাভাবিক। তবে কোনও দলের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।
থিয়েটারের কাজ শুরু করেও বন্ধ করলেন কেন?
করছি না বলা ভুল। আমি যখন থিয়েটার করতে শুরু করলাম, তার আগে আমি সুযোগ পাইনি। কাজটা যেভাবে আমার জীবনে শুরু হয়েছিল, যতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম আমি, তাতে থিয়েটার করতে পারিনি। কারণ থিয়েটারের জন্য একটা সময় লাগে নির্দিষ্ট। সেই সময়টা আমি প্রথম দিকে পাইনি। আমি যখন থিয়েটার করতে শুরু করলাম, তারপর প্যানডেমিকে সব বন্ধ হয়ে গেল। একটা ছোট্ট থিয়েটারের দল, প্যানডেমিকের জন্য সবটা বন্ধ, তারা নিজেরা উঠে দাঁড়িয়ে কাজ করতে একটা চাপ থাকে। একটা অর্থনৈতিক কাজ করাও কঠিন। শুরু করেছে দল। নতুন নাটক আনছে, সময় পেলে আবার কাজ করব।
এই মায়াবী চাঁদের রাতের কথা না বললে তো সাক্ষাৎকার সম্পূর্ণ হবে না, আপনার ভাবনাটা একটু বলবেন।
এই গানের শ্যুটিং পার্টটা আমার সঙ্গে জড়িত ছিল। এটা শ্যুট হয়েছিল শেষের দিকে। আমি শ্যুটিংয়ের দিনই বলেছিলাম, গানটা এমন চমৎকার যে মানুষের মনে ধরবেই। কারণ, গানের কথাগুলো খুব সহজ ও সুরটা ভীষণ আকর্ষণীয়। হলও তাই। এই মায়াবী চাঁদের রাতে কার্যত মুখে মুখে ফিরছে মানুষের। পরের আরও যে দু'টো গান আছে, সেগুলোও। রংমশালও আমার ভীষণ প্রিয় একটা গান। আর এই মায়াবী চাঁদের রাতের শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা বলতে গেলে, ওটা শিডিউলের শেষের দিকে শ্যুটিং করা হয়েছিল। তখন আমরা প্রায় একটা পরিবারের মতো হয়ে উঠেছি। আমরা ছাদে শ্যুট করেছিলাম, পার্টি দৃশ্য। মনে হচ্ছিল সত্যিই আমরা পার্টিতেই আছি।
শোলাঙ্কি আপনি ফেসবুকে নেই কেন? আগে তো ছিলেন।
প্রথম কথা আমার ফেসবুক প্রোফাইলটা লকড প্রোফাইল ছিল। পার্সোনালি না চিনলে তাঁরা আমার ফেসবুকে নেই। তার পর আমার মনে হল যে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার, তাঁদের সঙ্গে এমনিই যোগাযোগ আছে। আলাদা করে ফেসবুকে থেকে কী হবে। আর আমি একটু বোরও হয়ে গিয়েছি। বোর্ডাম কাটলে ফিরব হয়ত।
একটা প্রশ্ন না করে পারছি না, আপনার নামের বানান নিয়ে নানা বিভ্রাট চোখে পড়ে, নামের মানে কী আপনার?
এটার একটা গল্প আছে। আমার নামের বানান প্রথমত তালব্য শ দিয়ে, মানে শোলাঙ্কি। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজকাহিনী, সেখানে অবন ঠাকুর বাপ্পাদিত্য ও শোলাঙ্কি রাজকুমারীর একটি গল্প লিখেছিলেন। গুজরাতের রাজবংশের রাজকুমারী শোলাঙ্কি, সেই থেকে বাবা নাম রেখেছিল।
প্রথম বড়পর্দায় ছবি! কী ভাবছেন?
আমার মন বলছে সকলের ভীষণ ভাল লাগবে। সবাই দেখতে যাবেন আশা করি। আমার মন বলছে, সকলেরই ভীষণ ভাল লাগবে।