বাবা চাষি, মা গৃহবধূ। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত আদিবাসী পরিবারে জন্ম কবীন্দ্র হাঁসদার। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এবার ডব্লিউবিসিএস-এর এক্সিকিউটিভ পদে সফল হলেন বেলপাহাড়ির গাড়পাহাড় এলাকার বছর বত্রিশের এই যুবক। তবে এটিই তাঁর প্রথম চাকরি নয়। বর্তমানে তিনি ওদলচুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গ্রুপ-ডি পদে কর্মরত। সরকারি চাকরির সঙ্গে সঙ্গে দিনের পর দিন চলেছে ডব্লিউবিসিএস-এর প্রস্তুতি।
advertisement
তাঁর এই সাফল্যে যেমন খুশি পরিবার, তেমনই গর্বিত গোটা গ্রাম। কবীন্দ্র বলেন, “আমাদের গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়েই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। আমি চাই, তারা পড়াশোনার সুযোগ পাক। শিক্ষিত হলে তারা নিজেরাই নিজের জীবন গড়ে নিতে পারবে।” প্রাথমিক পড়াশোনা স্থানীয় বিদ্যালয়ে। এর পর ২০১৬ সালে কলকাতার নিউ আলিপুর কলেজে ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হন। স্নাতক ডিগ্রির পরে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন বিভাগের স্ক্রিনিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক বছরের প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৯ সালে গ্রুপ-ডি পদে যোগ দেন স্বাস্থ্য দফতরে। কিন্তু লক্ষ্য ছিল ডব্লিউবিসিএস।
চাকরির পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন প্রস্তুতি। ২০২২ সালে কোভিড পর্বেই দেন ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা। সম্প্রতি প্রকাশিত ফলাফলে এক্সিকিউটিভ পদে নির্বাচিত হন তিনি। একই এলাকার শাঁখাডাঙার রামজীবন হাঁসদা ৯ বছর আগে ডব্লিউবিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ১ ব্লকের বিডিও পদে কর্মরত। আগে ছিলেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে। রামজীবন হাঁসদা বলেন, ” স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের কাছে এই সাফল্য দৃষ্টান্ত। এখনও বেলপাহাড়ির বহু জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা আছে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাঁধা এখনও রয়ে গিয়েছে।”
বইপত্র, নেটওয়ার্ক-সবই দুর্লভ। আগে তো উচ্চমাধ্যমিক স্কুলই ছিল হাতে গোনা। এখন ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে ছবি। কবীন্দ্রর মতো মানুষ সেই পরিবর্তনের মুখ। কবীন্দ্রর বাবা বলেন ” ছেলের জন্য খুব গর্ব হচ্ছে। ও যেভাবে পরিশ্রম করেছে তাতে ও সফল । আমি চাই ও আগামীতে গরীব মানুষের কথা ভাববে এবং তাঁদের পাশে দাঁড়াবে।”
তন্ময় নন্দী