স্কুল ঘরের পাশেই রান্নাঘর। মাঝখানের একটি দেওয়াল। খোলা জানালা দিয়ে দলা পাকানো ধোয়া ঢুকছে ক্লাস ঘরে। ক্লাস ঘরে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকারা বুঝতে পারল এতে যে মিড ডে মিলের রান্না শুরু হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ‘খড়ি'(কাঠকুটো) দিয়ে উনুন জ্বালিয়েছে। সঙ্গে দোসর মশলা কশানোর গন্ধ। আর দুই-এর প্রভাবে ফতাপুকুর লোয়ার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে পড়ুয়ারা কাসছে। এই ছবি প্রায়ই দেখা যায়। এ ছাড়াও রান্নাঘর, ডাইনিং স্পেস অপরিচ্ছন্ন, খাবারের পরিমাণ ও গুণগতমান নিম্নমানের। খাবারের জায়গায় আলো ও পাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। মিড ডে মিলে ডাল শুধুমাত্র একদিন শুক্রবার দেওয়া হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শনে যান ৯ এপ্রিল ২০২৫। এবং পরিদর্শনের পর রিপোর্ট দেয় মুখ্যসচিবের কাছে।
advertisement
সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট স্কুল ছাড়াও আশপাশের আরও বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখেন কমিশনের প্রতিনিধি দল। এবং সেই স্কুলগুলিরও প্রাথমিক কী অবস্থা, তা মুখ্য সচিবের কাছে জানিয়েছেন কমিশন। দেখা গিয়েছে, গুদামঘর অপরিচ্ছন্ন, চাল, ডাল অন্যান্য সামগ্রী যেখানে মজুত করা হয়েছে, তা খোলা রয়েছে। যাতে পোকামাকড় পড়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জলপাইগুড়ির একাধিক স্কুলে গ্যাসের ব্যবহারের বদলে কাঠের জালে রান্নার প্রচলন রয়েছে, তার অভিযোগ এসেছে।
আরও পড়ুন– উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে বসবে ? বড় ঘোষণা সংসদের
কমিশনের পক্ষ থেকে মুখ্য সচিবের কাছে জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন স্কুলের মিড ডে মিল থেকে পরিকাঠামো নিয়ে যে অভিযোগ এসছে তার বৃদ্ধিতে এ বার ব্যবস্থা নিল সরকার। এর ভিত্তিতে মিড ডে মিলের তরফ থেকে রাজ্যের সমস্ত স্কুলগুলিকে বেঁধে দিল নির্দিষ্ট গাইডলাইন। সেখানে বলা হয়েছে-
*মিড ডে মিলে ডাল শুধু শুক্রবারে পরিবেশন নয়। অন্য দিনগুলিতেও তা পরিবেশন করতে হবে।
*সমস্ত স্কুলের ডাইনিং স্পেস সঠিক ভাবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
*খাবারের জায়গা বা ডাইনিং স্পেসে পর্যাপ্ত আলো এবং পাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সমগ্র শিক্ষা মিশনের এক কর্তা জানান, এ ছাড়াও স্কুল জেলা পরিদর্শক (ডিআই)-দের নজরদারি বৃদ্ধির কথাও জানান হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় কাঠের জালে রান্না করার অভিযোগ সামনে এসেছে তা থাকলে তা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার কথা জানানো হয়েছে।
এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে জলপাইগুড়ির স্কুলটিতে ৬৫ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। বিদ্যালয়ের অনুমোদিত শিক্ষক সংখ্যা একজন প্রধান শিক্ষক-সহ মোট ৬ জন। পাঁচজন সহকারি শিক্ষকের মধ্যে একজন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত। ফলে একজন শিক্ষককে একসঙ্গে দু’টি শ্রেণীতে পড়াতে হচ্ছে।