সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সদ্যোজাতের ছবিও শেয়ার করেছেন প্রয়াত চিকিৎসকের স্ত্রী ফু জুইজি৷
চিনের যে আটজন চিকিৎসক প্রথমবার অন্যান্য চিকিৎসকদের করোনা সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন, তাঁদের হেফাজতে নিয়েছিল সেদেশের পুলিশ৷ এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লি৷ ডিসেম্বর মাসে ইউহানে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরই প্রথম বিষয়টি অন্যান্য চিকিৎসকদের নজরে আনেন লি৷
advertisement
চাইনিজ মেসেজিং অ্যাপ WeChat-এ মেডিক্যাল স্কুলের প্রাক্তনীদের গ্রুপে প্রথমবার এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন লি৷ সেখানে তিনি জানান, সামুদ্রিক খাবারের স্থানীয় একটি বাজারের সাতজনের শরীরে SARS-এর মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে এবং তাঁদের হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে৷
লি বিশদে ব্যাখ্যা করে লেখেন, একটি টেস্ট রিপোর্ট দেখে তাঁর মনে হয়েছে করোনা ভাইরাস গোত্রের কোনও জীবাণুই এই অসুস্থতার কারণ৷ ২০০৩ সালে চিন সহ গোটা বিশ্বে যার জেরে জটিল শ্বাসকষ্ট জনিত অসুস্থতার কারণে মোট ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি বন্ধুদের লেখেন, তাঁরা যেন প্রিয়জনদের সাবধানে রাখেন৷ কিন্তু তাঁর এই মেসেজ কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়৷ ছড়িয়ে পড়ে স্ক্রিনশট৷ এমন কি, ওই চিকিৎসকদের নাম দিয়েই ছড়িয়ে পড়ে তাঁর লেখা সমস্ত মেসেজ৷
সিএনএন-কে পরে লি বলেন, 'আমি যখন এই মেসেজগুলি ছড়িয়ে পড়তে দেখি, তখনই বুঝতে পারি যে বিষয়টি হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে এবং সম্ভবত আমাকে শাস্তি পেতে হবে৷' এর পরই গুজব ছড়ানোর অভিযোগে লি-কে অভিযুক্ত করে ইউহান পুলিশ৷ করোনা সংক্রমণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করার জন্য লি সহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে নিশানা করে চিনের পুলিশ৷
কিন্তু করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে লি-এর মৃত্যুর পরই চিনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে৷ রোগের প্রাদুর্ভাব, শিল্প ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, আর্থিক তছরূপ, প্রতিবাদী এবং স্বাধীনমনস্ক সাংবাদিকদের শাস্তি দেওয়ার মতো ঘটনার তথ্য চাপা দেওয়ার যে অভিযোগ চিন সরকার এবং তাঁদের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বার বার ওঠে, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়৷
যদিও লি-এর মৃত্যুর পরই ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে ওই চিকিৎসককে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে ভুল স্বীকার করে নেয় চিন সরকার৷ সাধারণত চিনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগই সহজে স্বীকার করে না৷