#কলকাতা: গোটা বিশ্ব জুড়ে যখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আরও থাবা বসাচ্ছে, প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ভারতবর্ষ বা পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়। আতঙ্ক প্রতি মুহূর্তে আরও বেশি করে চেপে বসছে। সেই ২৪ মার্চ থেকে সারা দেশ ঘরবন্দী। প্রাণঘাতী নোবেল করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বেশিরভাগ মানুষই রাস্তায় বেরোচ্ছে না। তবু এই কঠিন অস্থির সময়েও কিছু মানুষ জীবন বাজি রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এরা ঘরবন্দী না থেকে প্রতিদিন ভোরে উঠে ছুটে যাচ্ছে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে।
advertisement
অভিষেক তেওয়ারি, ৩৬ বছর বয়স। বেলেঘাটা রাসমণি বাজারে বাড়ি। বছর দুয়েক হল বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে সাত মাসের ছোট কন্যা সন্তান। নিম্নবিত্ত পরিবারের অভিষেক বেসরকারি সংস্থার সেলসম্যান। অভিষেকের আয়েই গোটা পরিবারের সংসার চলে। কিন্তু স্বপ্ন অনেক অভিষেকের। ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। যবে থেকে এ রাজ্যে নোবেল করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছে, তখন থেকে আর ফুরসত নেই অভিষেকের।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল, শিয়ালদহ এন আর এস হাসপাতাল, টালিগঞ্জ এম আর বাঙুর হাসপাতাল, এসএসকেএম হাসপাতাল, কলকাতা মেডিকেল কলেজ, শিয়ালদহ এন আর এস হাসপাতাল, পার্ক সার্কাস ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, বেলগাছিয়ার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফুলবাগান বি সি রায় শিশু হাসপাতাল সর্বত্রই চরকিপাক খাচ্ছে অভিষেকের বাহন মোটরবাইক।
লকডাউন এর আগে থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন জায়গা থেকে চেয়েচিন্তে মাস্ক জোগাড় আর তার সঙ্গে বিভিন্ন দোকান থেকে জলের জার জোগাড় করা। অফিস সামলে সকাল থেকে বেলা পর্যন্তস আবার সন্ধ্যের পর থেকে রাত অব্দি বিভিন্ন হসপিটাল ঘুরে ঘুরে যে সমস্ত পুলিশকর্মীরা কাজ করছেন, তাঁদের মাস্ক বিতরণ করছেন অভিষেক। তার সঙ্গে বিশুদ্ধ পানীয় জলও পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় গোটা দিন রাত এক করে অভিষেক ছুটে বেড়াচ্ছেন।
নিজের জমানো টাকা আর তার সঙ্গে অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীর সাহায্যে তরতর করে দৌড়াচ্ছে অভিষেকের বাইক। প্রতিদিন বহু পুলিশকর্মী উপকৃত হচ্ছে অভিষেকের কর্মকাণ্ডে। আর তার এই কাজে নিজের পরিবারকেও পাশে পেয়েছেন অভিষেক। সাত মাসের ছোট বাচ্চাকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী গোটা সংসার সামাল দিচ্ছেন। পাশাপাশি এখন থেকে বাড়িতেই কাপড় কেটে মাস্ক তৈরি করছেন, যাতে অভিষেকের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়। এই ধরণের মানুষরা যদি আমাদের করোনা হিরো না হয়, তবে তা হবে আমাদের লজ্জা।