প্রশ্ন উঠেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণেই কি বাংলায় আরও ধাক্কা খেল বিজেপি? বিজেপির কিছু নেতা দাবিও করেছেন এমনটাই। উত্তর খুঁজেছেন ত্রিবেদী সেন্টার ফর পলিটিকাল ডেটার বিশেষজ্ঞ গিল ভার্নিয়ার্স। রবিবার রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের দেওয়া শেষ তিন দফার নির্বাচনের প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনই একটি সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। গিল ভার্নিয়ার্স যে পর্যবেক্ষণগুলি জানিয়েছেন সেগুলি হল :
advertisement
১) আট দফা নির্বাচনের ভোটহারের নিরিখে প্রত্যেক দফাতেই বিজেপির থেকে এগিয়ে আছে তৃণমূল।
২) কিন্তু ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম দফায় দু'দলের ব্যবধান অত্যন্ত বেড়েছে।
৩) ষষ্ঠ দফায় তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৮ শতাংশ ভোট। বিজেপির ঝুলিতে ভোট গিয়েছে ৩৮.৪ শতাংশ।
৪) সপ্তম এবং অষ্টম দফায় যথাক্রমে ৫২ এবং ৫২.২ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল। সেই দু'দফায় বিজেপির ঝুলিতে ভোট গিয়েছে যথাক্রমে ৩২.৮ এবং ৩২.৩ শতাংশ ভোট।
৫) শেষ দু'দফায় দক্ষিণ এবং উত্তর কলকাতায় ভোট হয়েছে। যেখানে চিরাচরিতভাবে বিজেপি দুর্বল। তাই সেখানে বিজেপির ভোটের হার যে কমবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল।
তাত্পর্যপূর্ণভাবে এবার বিধানসভা ভোটে শেষ দু'দফার ভোট শুধু কলকাতায় হয়নি। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং পশ্চিম বর্ধমানেও হয়েছে। ফলে শুধুমাত্র কলকাতার কারণেই কি এত ভোটের ফারাক হতে পারে? গিলের পরিসংখ্যান বলছে, শেষ তিন দফায় রাজ্যের যে ৯টি জেলায় ভোট হয়েছে, তার মধ্যে কলকাতা পুরনিগম এলাকায় (কলকাতার ১১ টি আসন) তৃণমূলে ভোট পড়েছে ৬১.৭ শতাংশ। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ২৮.৫ শতাংশ ভোট। ফলে তৃণমূল এবং বিজেপির ভোটের ফারাক ৩৩.২ শতাংশ। রাজ্যে সেইসময় কলকাতায় করোনার প্রভাব সবথেকে বেশি। এছাড়াও মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম এবং উত্তর দিনাজপুরে দু'দলের ভোটের ফারাক যথেষ্ট বেশি আছে। বাকি জেলাগুলিতে অবশ্য মোটামুটি টক্কর হয়েছে। সেইসব তথ্য থেকে গিলের ধারণা, বিজেপি ভোট এবং করোনাভাইরাস- এই দুই-এর মধ্যে কিছুটা হলেও সম্পর্ক আছেই।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, শেষ তিন দফার ভোটের সময় দেশে লাগামহীনভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মৃতদেহ দাহের মর্মান্তিক ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতির জন্য বিজেপি সরকারকে তোপ দেগে যে প্রচার চালিয়েছে তৃণমূল, তা সম্ভবত কাজে দিয়েছে।
অন্যদিকে করোনার পরিস্থিতির মধ্যে অন্য দলগুলি আগেই রাজনৈতিক সভা বাতিল বা ছোটো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অথচ একেবারে শেষে সেই পথে হেঁটেছে বিজেপি। এমনকী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পরও বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সভায় বিধিভঙ্গ হয়েছে। যা জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে।
আবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, করোনার কারণেই গত ২৩ এপ্রিল বাংলায় এসে প্রস্তাবিত চারটি সভা করতে পারেননি নরেন্দ্র মোদি। করোনা সংক্রান্ত বৈঠকের পর ভার্চুয়ালি জনসভা করেছিলেন। বিজেপি নেতারা যে মোদি-ম্যাজিকে ভর করে শেষ দু'দফায় ভোট বাস্কে পদ্ম ফোটাতে চেয়েছিলেন সেই স্বপ্নও পূরণ হয়নি বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তবে অন্যদিকে, হার-জিতের এতো বড় ফারাকের পেছনে যে অন্য আরও অনেক ফ্যাক্টর কাজ করেছিল সেকথা অস্বীকার করতে পারছেন না রাজনৈতিক মহল থেকে নির্বাচনী বিশ্লেষক, কেউই।