গত বছর জুলাই মাসে করোনা অতিমারির মধ্যেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে উত্তর চব্বিশ পরগণার ইছাপুরের বাসিন্দা শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়৷ বুক ধড়ফড় এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয় তাঁর৷ অভিযোগ, শুভ্রজিৎকে প্রথমে বেলঘড়িয়ার কাছে মিডল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু সেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি পরীক্ষা করে দাবি করা হয়, সে করোনায় আক্রান্ত৷ এর পর ভর্তি না করিয়েই শুভ্রজিৎকে অন্য হাসপাতােল রেফার করা হয়৷
advertisement
শেষ পর্যন্ত শুভ্রজিৎকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয় তাঁর পরিবার৷ আগের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শুভ্রজিৎ করোনা আক্রান্ত বলে লিখে দেওয়ায় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও াতাকে ভর্তি নিতে টালবাহানা করে৷ ১৬ অগাস্ট শুভ্রজিতের আরটি পিসিআর টেস্ট করা হয়৷ কিন্তু সেই রিপোর্টই এতদিন পাননি তার বাবা-মা৷
এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে টানাপোড়েনের মধ্যেই শুভ্রজিতের মৃত্যু হয়৷ উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোলে দেখা শুভ্রজিৎ ৭৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছ৷ কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও শুভ্রজিতের সত্যিই করোনা হয়েছিল কি না, তা জানতে পারেনি মেধাবী ছাত্রের পরিবারটি৷ ওই রিপোর্ট পেতে আদালতের দ্বারস্থও হতে হয় তাঁদের৷ তথ্যের অধিকার আইনেও রিপোর্ট দেখার আর্জি জানানো হয়৷ শেষ পর্যন্ত এ দিন বেলঘড়িয়া থানার তরফে শুভ্রজিতের পরিবারের হাতে মেডিক্যা্ল কলেজে করা করোনা পরীক্ষার সেই রিপোর্ট তুলে দওয়া হয়৷ সেখানেই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, শুভ্রজিতের আদৌ করোনা হয়নি৷
শুভ্রজিতের এই করোনা রিপোর্ট দেখে শুভ্রজিতের বাবা মায়ের যন্ত্রণা আরও বেড়েছে৷ তাঁরা এখনও মনে করেন, যথাযথ সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে নিশ্চয়ই বেঁচে যেত শুভ্রজিৎ৷ তবে করোনা রিপোর্ট পেতে কেন এক বছর সময় লাগল, তার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন শুভ্রজিতের বাবা-মা৷
শুভ্রজিতের বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'গত বছর জুলাই মাসে আমার ছেলে মারা গিয়েছিল৷ তার পর এক বছর সময় লাগল রিপোর্ট পেতে৷ আমরা তখন বার বার বলেছিলাম যে ওর করোনা হয়নি৷ ওর করোনা হলে আমাদের কেন একবারও করোনার পরীক্ষা করা হল না? কারণ আমরা তো ওর বাবা-মা৷ যে ডাক্তার দু' মিনিটে কিছু না দেখেই কাগজে লিখে দিল যে ও করোনায় আক্রান্ত,তার চিকিৎসক হওয়ার যোগ্যতাই নেই৷'
ছেলের শোকে চোখের জল ফেলতে ফেলতে শুভ্রজিতের মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'মা ডাকটা এখন আমার কাছে অতীত৷ বড় বড় আইনজীবীরা আমার পাশে না দাঁড়ালে এই লড়াই করতে পারতাম না৷ সুূবিচার পেতে যতদূর যেতে হয় যাবো৷'