গত বছরেও করোনা ছিল। তারপরেও নানা বিধি মেনে দুর্গাপুজো হয়েছিল। সব বিধি মেনে ঠাকুর দেখেছিল পুজোপ্রেমি আম বাঙালি। এ বার অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। শহর থেকে শহরতলির মৃত্যুমিছিলে সব আনন্দ ধুয়েমুছে গিয়েছে। বহু ক্লাব তাঁদের সদস্যকে হারিয়ে। বহু ক্লাবের সদস্যরা তাঁদের নিজেদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে দু;সহ পরিস্থিতি। এমতাবস্থায় শহরের একাধিক ক্লাব কর্তাদের দাবি, "মা তো তাঁর সময়ে আসবেনই আমাদের কাছে। পুজো তাই হবে। কিন্তু একেবারেই তাতে কোনও জৌলুস থাকবে না। নিষ্ঠাভরে শুধু মাকে ডাকব আমরা, যাতে পৃথিবীর দ্রুত রোগমুক্তি ঘটে।"
advertisement
শহরের নামী পুজো কমিটিগুলিকে করোনা মোকাবিলায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো শহরে বেশিরভাগ কমিটি কোনও না কোনও ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এমনকি ক্লাব থেকে টিকা দেওয়ার বিষয়েও চলছে ভাবনা। যেমন ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক, ত্রিধারা সম্মেলনী, শিব মন্দির, বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে থিম পুজো বন্ধ করে সাধারণ প্যান্ডেলে করেই হবে মাতৃবন্দনা। এমনকি কোনও প্রতিযোগিতাতেও এ বারে অংশ নেবে না ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক।
শহরের বিগ বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক। প্রায় কোটি টাকা বাজেটের এই পুজো এ বারে হবে একেবারে সাধারণভাবে। বাজেটের পুরো অঙ্কই করোনা মোকাবিলায় ব্যবহার করা হবে। শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত বিনা পারিশ্রমিকে মণ্ডপ এবং প্রতিমা সাজাবেন। কর্মকর্তাদের অন্যতম সঞ্জয় মজুমদার বলেন, "সমাজে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করব আমরা। মানুষকে করোনার নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে পুজোর বাজেট থেকেই সেই টাকা ব্যয় করা হবে। টিকা নেওয়ার জন্য আমাদের কাছে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। খুব তাড়াতাড়িও এই কাজ শুরু হবে।"
ত্রিধারার মিডিয়া কো-অর্ডিনেটার গার্গী মুখোপাধ্যায় বলেন, "এ বারে আমাদের ৭৫ বছর। অনেক প্ল্যান ছিল। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে কারও মন ভাল নেই। এখন বাড়িতে বাড়িতে করোনা থাবা বসিয়েছে। তাই যতটুকু না করলে নয়, ততটুকু করেই পুজো হবে।'' হাতিবাগান সর্বজনীনের অন্যতম অন্যতম কর্মকর্তা শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, "পুজো নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে আগামী কী পরিস্থিতি হবে, তার ওপরেই নির্ভর করছে সবটা। তবে যেটুকু যা হবে, সবটাই হবে করোনা বিধি মেনে"। কোনও রকমেই সারা হবে এ বারের পুজো, এমনটাই জানিয়েছেন বালিগঞ্জ কালচারালের অন্যতম কর্মকর্তা তথা প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু। তিনি বলেন, "বহু মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। কাজ চলছে। আমরাও নানা ভাবনা চিন্তা করেছি। খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।"