TRENDING:

Food Delivery For Covid Patients : কলকাতার কোভিড আক্রান্ত পরিবারের চরম বিপদে 'অচেনা বন্ধু'! চিনে নিন ওঁদের...

Last Updated:

'কোভিড-ওয়ারিয়র' (Covid Warrior) ওঁরাও! অন্তত সেই পরিবারগুলোর কাছে, যাঁরা ওঁদের জন্যই আজ দু-বেলা খাওয়ার পাচ্ছেন (Covid Food Delivery)। আনাড়ি হাতে বানানো পরিপাটি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে ভাত-ডাল-আলু- পোস্তর সঙ্গে থাকছে সহমর্মিতা আর এক অকালের 'বন্ধুতা'!

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
করোনা আক্রান্ত পরিবারে ফুড ডেলিভারির হদিস...
করোনা আক্রান্ত পরিবারে ফুড ডেলিভারির হদিস...
advertisement

সময়টা এই মৃত্যু সর্বস্ব, অসুখ সর্বস্ব, 'করোনা কাল' (Covid-19 Pandemic)। আর ফোন কল?

ফোনের ও প্রান্তে যে মেয়েটির নার্ভাস গলা তাঁকে জীবনে কখনও দেখেনি শ্রাবস্তী। কোনও সূত্রে ফোন নম্বর পেয়ে ফোন করেছে সে। দিল্লিতে আটকে রয়েছে মেয়েটি। কোভিড (Corona virus) পজিটিভ। দুদিন আগে মারা গিয়েছেন মা। বাবা কলকাতার বাড়িতে সম্পূর্ণ একা। একটু সাহায্য (Covid Help Kolkata) হাতড়াতে থাকা গলা বলল, "কিছু করে কি সাহায্য করা যায় বাবাকে? একটু খাবার পৌঁছে দেওয়া যাবে কোনও ভাবে?"

advertisement

এছাড়াও ফোন আসছে অবিরাম। বিদেশে থাকা চেনা এবং অচেনা মানুষ-জনের থেকেও। গতকালই ফোন করেছিলেন এমনই একজন। কলকাতার বাড়িতে আটকে আছেন কোভিড আক্রান্ত মা-বাবা। অত দূরে বসে চিন্তায় বিনিদ্র রাত্রিযাপন ছেলের। বৃদ্ধ মা-বাবার খাওয়ারের ব্যবস্থা কীভাবে করবেন, কে পাশে দাঁড়াবে, বুঝতে পারছিলেন না। নিজের তো হাত-পা বাঁধা। তাই ফোন করেছেন একটু সাহায্যের আশায়।

advertisement

শ্রাবস্তী ঘোষইন্ডিপেন্ডেন্ট পারফর্মারছবি : ফেসবুক

শ্রাবস্তীর সকাল থেকে রাত, ফোন বাজছে মুহুর্মুহু কোথাও অক্সিজেনের হাহাকার, কোথাও বেড পাচ্ছেন না অসুস্থ পরিজন। শ্রাবস্তীর সকাল থেকে রাত, ফোন বাজছে মুহুর্মুহু। এই অসহায় মানুষগুলোকে যেভাবে যতটা সম্ভব সাহায্য করতে গিয়েই মাথায় এসেছিল কথাটা। অক্সিজেন বা বেড না পারলেও খাওয়ারের জোগাড়টা তো কিছু মানুষের জন্য করাই যাই। আর তার থেকেই করোনা পেসেন্ট ও তাঁদের পরিবারের জন্য ফ্রি হোম ডেলিভারির ভাবনা।

advertisement

সময় নষ্ট করেনি শ্রাবস্তী। নষ্ট করার মত সময় নেই যে আর! পাশে দঁড়িয়েছেন শ্রাবস্তীর এই যুদ্ধের বড় সৈনিক, মা অজন্তা ঘোষ। পেশায় সরকারি চাকুরে অজন্তা এখন মূলত বাড়িতেই। কাজে যেতে হয় সপ্তাহে দু'দিন। বাকি সময়টা কোভিড আক্রান্ত বিপদগ্রস্থ মানুষগুলোর জন্য হাত-খুন্তি ধরছেন অজন্তা। উত্তর কলকাতার বাগবাজার, শোভাবাজার, হাতিবাগান, আহিরিটোলা, খান্না ও উল্টোডাঙা এলাকায় আপাতত বাড়িতে বানানো খাওয়ার পৌঁছে দিচ্ছেন শ্রাবস্তী ও তাঁর বন্ধুরা। শুধুমাত্র সেই পরিবারদের জন্য যাঁরা হোম আইসোলেশন ঘরবন্দি। অনেক পরিকল্পনা না করেই ফেসবুক পোস্টটি দিয়েছেন শ্রাবস্তী।

advertisement

সারাদিনের চেষ্টার পর রাত প্রায় পৌনে এগারোটায় ফোনে পাওয়া গেল ওঁকে। বললেন, "১৫ জনের রান্নার কথা ভেবেই পা রেখেছিলাম কাজে। তবে প্রথমদিনের শেষেই সংখ্যাটা হয়ে গিয়েছে প্রায় দ্বিগুন। একটা নির্দিষ্ট এলাকায় ডেলিভারি করতে পারব বলেছিলাম। এখন সেই সীমাও ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমন সব ফোন। এতো অসহায় মানুষ। না বলা যায়?"

তবে ঘাবড়াচ্ছেন না শ্রাবস্তী। লম্বা শ্বাস নিয়ে যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাবেন। কারণ শ্রাবস্তী জানেন বাকিদের যুদ্ধটা আরও কঠিন। লড়াইটা আরও শক্ত।

যোগাযযোগ করতে চাইলে রইল নম্বর :

শ্রাবস্তী ঘোষ

ফোন : ৮৯০২৭০৩৬৮৬

একইভাবে দক্ষিণ কলকাতাতে এগিয়ে এসেছেন হর্ষ কেডিয়া ও অঙ্কুর বানসাল। ফ্রি ফুড ডেলিভারি করছেন কোভিড পজিটিভ রোগী ও তাঁদের পরিবারের জন্য। গত তিন-চারদিন যাবৎ এই কর্মযজ্ঞে নেমেছেন দুই বন্ধু। কঠিন সময়ে এই শহরের বিপদে থাকা মানুষের বন্ধু হতে চেয়েছেন ওঁরাও। কোনও ধর্মের তাগিদে নয়, ভাষার তাগিদে নয়, জাতির তাগিদে নয়, শুধুমাত্র এই শহর আর এখানকার মানুষের প্রতি ভালোবাসার তাগিদে এই কাজে নেমেছেন ওঁরা। অনেক সাত-পাঁচ না ভেবেই।

হর্ষের স্পষ্ট কথা "কতদিন পারব জানি না। কিন্তু ঈশ্বর চাইলে যতদিন প্রয়োজন এই বিপদের দিনে মানুষের পাশে থাকতে চাই। যতটা সম্ভব সাহায্য করতে চাই সেই পরিবারগুলোর যাঁদের ৫ জন সদস্যের পাঁচ জনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। খাওয়ার আনার কেউ নেই। কিংবা সেই পরিবারের যাঁদের প্রতিবেশীরাও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন এই অসময়ের সময়ে।

ঘরোয়া ডাল-রুটি-ভাত-সবজি...ছবি : ডায়েট ফিক্স ও শ্রাবস্তী

আপাতত দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর, চেতলা, টালিগঞ্জ, কালীঘাট , হরিদেবপুর ও বেহালা অঞ্চলে কোভিড আক্রান্তদের বাড়িতে বানানো খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন হর্ষ আর অংকুর। ২৪ ঘণ্টা আগে ফোন করে বুক করতে পারেন লাঞ্চ বা ডিনার। সাধারণ ঘরোয়া ডাল-রুটি-ভাত-সবজি--- এইসবই। কিন্তু যাঁরা এই ভাইরাসের মুখে পড়েছেন বা পরিবারের কেউ বা বন্ধু বান্ধব এর সঙ্গে ফাইট করছেন, তাঁরা জানেন, এইটুকু সাহায্যই কতটা জরুরি হয়ে পরে হোম আইসোলেশন।

রইল হর্ষ ও অংকুরের  প্রচেষ্টার হদিস। যোগাযোগের নম্বরও।

ডে আওয়ার বিট #dayourbit

+৯১৮৬৯৭৪৪৯৩৫০/+৯১৯৮১১৫৬০৫৬১

সুরজিৎ আর ঈপ্সিতার প্রচেষ্টা অবশ্য আগের বছর প্যানডামিকেই শুরু। ২০১৮ থেকে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় থাকা সুরজিৎ রাউতের ব্যবসা বড়সড় ধাক্কা খায় গত বছর অতিমারীতে। এক সময় আই টি চাকুরে, পরে রান্না ভালবেসে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আসা সুরজিৎ-এর মাথায় চিন্তার ভাঁজ। বন্ধু ও একসময়ের ক্যায়েন্ট ঈপ্সিতা ভান্ডারী পাশে এসে দাঁড়ায়। করোনা নিয়ে আতঙ্ক তখন শহর জুড়ে। বন্ধু বান্ধবের বাইরে থেকে ফোন করছেন। অসুস্থ মা-বাবার সব সময়ের দেখভালের লোক আসা বন্ধ। সামান্য খাবারটাও পাওয়া দুস্কর। পাউরুটি খেয়ে থাকছেন দিনের পর দিন। নাড়িয়ে দিচ্ছিল সময়টা।

সুরজিৎ ও ঈপ্সিতাছবি : ডায়েট ফিক্স

পরিস্থিতি বিচার করে সুরজিত চালু করলেন 'ডায়েট ফিক্স'। সঙ্গে জুড়ে গেলেন পেশাগতভাবে ব্র্যান্ডিং কম্যুনিকেশনের সঙ্গে যুক্ত ঈপ্সিতা। কভিড ও নন-কভিড সব ধরণের মানুষের জন্যই ফুড ডেলিভারি করছেন ওঁরা। ঘরের ডাল-ভাত, ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ মেনেই, অসুস্থতা থাকলে সেসব বিবেচনা করেই খাওয়ার পাঠান ওঁরা। দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে খাওয়ার পাঠাচ্ছে  'ডায়েট ফিক্স'। যতটা সম্ভব কম খরচে।

রইল ফোন নম্বর :

ডায়েট ফিক্স +91 86972 88960/9831307464

এই করোনাকাল নিয়ে কোনওদিন কোনও মহাকাব্য লেখা হলে হয়ত নাম থাকবে না এই মানুষগুলোর। হয়ত কালের নিয়মেই ধুলো জমবে এই ছোট্ট ও জরুরি চেষ্টা গুলোর গায়ে। তবু ওঁরাও 'কোভিড-ওয়ারিয়র'! অন্তত সেই পরিবারগুলোর কাছে, যাঁরা ওঁদের জন্যই আজ দু-বেলা খাওয়ার পাচ্ছেন। আনাড়ি হাতে বানানো পরিপাটি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে ভাত-ডাল-আলু- পোস্তর সঙ্গে থাকছে সহমর্মিতা আর এক অকালের 'বন্ধুতা'!

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
মেদিনীপুরের 'সবুজ নায়ক'! এই বনাঞ্চল বাঁচিয়েছে বহু মানুষের প্রাণ
আরও দেখুন

সংযুক্তা সরকার

বাংলা খবর/ খবর/করোনা ভাইরাস/
Food Delivery For Covid Patients : কলকাতার কোভিড আক্রান্ত পরিবারের চরম বিপদে 'অচেনা বন্ধু'! চিনে নিন ওঁদের...
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল