সকালটুকু বাড়িতে ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের যত্ন-আত্তি, ওষুধ খাওয়ানো। তারপরেই নীলরঙা স্কুটিতে চেপে তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়ছেন গড়ের মাঠের আদরের ঝুমাদি। কেন জানেন? পাড়ার মেয়ে এনাক্ষীকে দু'চাকার পিছনে বসিয়ে হাসপাতলে পৌঁছে দিতে। পরিষ্কার হল না তো?
বেহালা জয়শ্রী পার্কের এনাক্ষী রায় পেশায় নার্স। কাজ করেন দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে। লকডাউনের কারণে রাস্তায় বাস-ট্যাক্সি অ-মিল। অথচ এই সময়টাতে ঘরেও বসে থাকা যায় না! নার্স এনাক্ষীর মুশকিল আসান পাড়ার মেয়ে ভারতীয় ফুটবলের একসময়ের পোস্টার গার্ল কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার। করোনা বিপর্যয়ের দিনগুলোয় রোজ সকালে হাসপাতালের সিস্টার এনাক্ষী-কে আট কিলোমিটার দূরের কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ভারতীয় মহিলা ফুটবলের পরিচিত মুখ কুন্তলা।
advertisement
কর্মব্যস্ত জীবনে কে আর আজকাল এত টা করে! কুন্তলারা করেন! জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দীর্ঘদিন দেশের প্রতিনিধিত্ব করা মেয়েটা বলছিলেন,"সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সমাজে সব থেকে বেশি দরকার ডাক্তার আর নার্সদের। লকডাউনের কারণে এনাক্ষীর মতো নার্সরা বাড়িতে বসে থাকলে ক্ষতিটা আমাদেরই। তাই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারিনি। ডাক্তার, নার্সদের এখন যে আমাদের বড় দরকার।"কুন্তলার সহমর্মিতা আর আন্তরিকতায় মুগ্ধ এনাক্ষীও বলছিলেন,"কুন্তলারা আছেন বলেই আজও থমকে যায়নি সমাজ। হারিয়ে যায়নি মানবিকতা।"
বিশ্বকাপের আসরে দেশের জার্সিতে অস্ট্রেলিয়া, কেনিয়ার মেয়েদের সামলানোর চ্যালেঞ্জটা ছিল অন্যরকম। লকডাউনের কঠিন সময়ে ফি-সকালের লড়াইটাই বা কম কোথায়! কুন্তলারা আছেন বলেই তো কলকাতা আজও কল্লোলিনী। চারপাশে এত অন্ধকার, অন্তরায়ের মাঝে আগামীর আশা, অনুপ্রেরণা তো এই মুখগুলোই।
PARADIP GHOSH