মিক্সিং (Mix-and-Match) ডোজ - এর অর্থ কী?
একই রোগের টিকা যদি ভিন্ন সংস্থার থেকে গ্রহণ করা হয় তখন তাকে মিক্সিং ডোজ বলা হবে। যেমন ধরুন, প্রথম ডোজে নেওয়া হল Pfizer-এর টিকা এবং দ্বিতীয় ডোজে নেওয়া হল Moderna টিকা। অথবা ধরুন প্রথম ডোজ নেওয়া হল AstraZeneca ভ্যাকসিন এবং দ্বিতীয় ডোজে নেওয়া হল Moderna ভ্যাকসিন । এই প্রক্রিয়ায় টিকা নেওয়ার পদ্ধতিকে বলে মিক্সিং ডোজ।
advertisement
এতে কী রকম প্রভাব পড়তে পারে?
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, যেহেতু এটা একটি স্পাইক প্রোটিন, যা মূলত সাধারণ মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উপর আঘাত হানে এবং তা দুর্বল করে দেয়, তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ভবিষ্যতে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। এতে স্পাইক প্রোটিনের গঠনগত পরিবর্তন হলেও তা শরীরে আক্রমণ করতে পারে না।
Pfizer এবং Moderna টিকাটি খুব অল্প পরিমাণে mRNA দ্বারা গঠন করা হয়েছে। যা SARS-CoV-2 স্পাইক প্রোটিনের একটি জেনেটিক উপাদান। টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এই উপাদানটি শরীরে ঢুকলে তা ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করবে। এর ফলে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে এবং কোভিড ১৯-এর আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে ।
চিন্তার বিষয়গুলি কী কী?
এখন প্রশ্ন হল এই মিক্স ম্যাচ প্রক্রিয়া কতটা নিরাপদ? এবং আদৌ কি তা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সমর্থ হচ্ছে? পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করার আগে এবিষয়ে আরও পড়াশোনার দরকার । যেমন, Covaxin-এর আগে Covishield দিলে কি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়বে?
এনিয়ে রীতিমতো গবেষণা চালাচ্ছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন (Coalition for Epidemic Preparedness Innovations) নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা মূলত মিক্সিং এবং ম্যাচিং প্রক্রিয়ার উপর বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছে। তাদের ধারণা প্রতিটি ভ্যাকসিনের নিজেস্ব সেল্ফ লাইফ থাকে। সেক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ায় কোনও প্রভাব পড়বে কি না, সেটা চিন্তার ব্যাপার। তাছাড়া সেগুলি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী বেশ কিছু ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এবং কাজ না-ও হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?
এবিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organisation) মুখ্য বিজ্ঞানী ড. সৌম্য স্বামীনাথন জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন মিক্স করে প্রয়োগ করলে তা দেশের জন্য মঙ্গল হতে পারে। সম্প্রতি একটি Zoom মিটিংয়ে তিনি বলেন, “ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে তা ভালো ফল দিচ্ছে। মূলত যে সব দেশ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দিয়েছেন এবং সেখানকার নাগরিকরা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন সেই সব দেশে ভিন্ন সংস্থার টিকা দেওয়া যেতে পারে।”
ফিলাডেলফিয়ার চিলড্রেন হাসপাতালের ভ্যাকসিন এডুকেশন সেন্টারের (Vaccine Education Center ) ডিরেক্টর জানিয়েছেন, ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার টিকা নিলে তা দীর্ঘকালীন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সমর্থ হবে। একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, কোভিড রোগীদের যাতে হাসপাতালে ভর্তি হতে না হয় অথবা যাতে মৃত্যু না হয় তার জন্যই কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন।
ভিন্ন ভিন্ন টিকাকরণ নিয়ে বিশ্বের অবস্থান কোথায়?
গত এপ্রিল মাস থেকে চিনা বিজ্ঞানীরা ক্যান সিনো বায়োলজি এবং চংকুইন জিফি বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টের ভ্যাকসিন মিক্স করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। কানাডাতেও এই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে প্রথম ডোজ AstraZeneca এবং দ্বিতীয় ডোজ Pfizer বা Moderna ভ্যাকসিন দেওয়া হতে পারে।
ফ্রান্সের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, ৫৫ বছরের নিচে যাঁরা AstraZeneca-র প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে তথাকথিত RNA ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।
এর আগে কি ভ্যাকসিন মিক্স করা হয়েছে?
ভ্যাকসিন মিক্স ও ম্যাচ করার প্রক্রিয়া কয়েক দশক ধরে টেস্ট করা হচ্ছে। মূলত ইবোলা প্রতিরোধের জন্য এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। ভারতেও রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে।
