বর্ধমানের কার্জন গেট থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত সোজা রাস্তা মহারাজা বিজয় চাঁদ রোড। সংক্ষেপে বি সি রোড। গরম বাড়তেই ফুটপাত দখল করে বসে যায় পোশাকের পসরা। দুশো টাকার তাঁতের শাড়ি থেকে দেড়শো টাকার কুর্তি, চুড়িদার, পাঞ্জাবি থেকে টি শার্ট, জিন্সের প্যান্ট থেকে লেগিংস, জেগিংস, বিছানার চাদর থেকে বালিশের ওয়ার, চা ছাঁকনি, কাপ ডিস, হাওয়াই চপ্পল, হাই হিল কি নেই সেখানে। ক্যালেন্ডার দেখার প্রয়োজন পড়ে না, বি সি রোডে পা দিলেই বোঝা যেত চৈত্র এসেছে।
advertisement
এবার সেই কোলাহল উধাও। শুনশান চারপাশ। কোনও পসরা নেই, হকারদের হাঁকাহাঁকি নেই। রাস্তা কত্ত চওড়া। অথচ সেই রাস্তায় হাঁটার লোক নেই। সৌজন্যে করোনা ভাইরাস। লক ডাউন। আলোয় আলোয় যে রাস্তা রাতেও দিনের থেকেও বেশি আলোকিত থাকতো সন্ধে নামলেই যেন ঘোর অমাবস্যার আঁধার ঘনিয়ে আসছে সেখানে। চাপ চাপ অন্ধকার যেন বলতে চাইছে, তফাত যাও। তফাত যাও। অন্ধকার দেখে কার্জনগেট টপকে বিসি রোডে ঢোকার বদলে বাড়ি মুখো হচ্ছেন অনেকেই।
তবু কেউ কেউ পুলিশের জেরা মুখে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও এলেন আজ চৈত্র সংক্রান্তিতে। তাদেরই একজন তরুণ দাস। সেলের মাসে তাঁর বেশিরভাগ সময় এই বিসিরোডেই কাটে। রেডিমেড কুর্তি বিক্রি করতেন। এবার দেড় লাখ টাকার পোশাক কিনেছিলেন ফাল্গুনে। ইচ্ছে ছিল তা বিক্রি হয়ে গেলে আবার আনবেন। ঘরে বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে আছে সব। সংসার চলছে কোনও রকমে। বলছিলেন, অন্যবার কত কালবৈশাখী হয়। ঝড় উঠলেই আমরা প্রাণপণে সব গোটাতে শুরু করি। এবার সেলও নেই। কালবৈশাখীও নেই।
শাড়ি জামা কাপড় জুতো- কিচ্ছু নেই। লাইন দিয়ে শয়ে শয়ে দোকান শাটার বন্ধ। তারই মধ্যে সেল হীন বিসিরোডে সময়ের সাক্ষী হয়ে ঝুলে থাকল কিছু মাস্ক। লাল নীল হলুদ সবুজ। এক টুকরো কাপড়। চার দিকে চারটে কাপড়ের দড়ি। দাম মাত্র দশ টাকা। মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবাই গৃহবন্দি। যেন ঘুমিয়ে রয়েছে শহর। রঙিন মাস্ক সেই সময়ের হয়ে কথা বলছে নীরবে। বলতে চাইছে, আপাতত শুধু প্রাণে বাঁচার লড়াই। জীবন যুদ্ধে জিততে হলে আরও অনেক পথ পার হতে হবে।
Saradindu Ghosh