এখন হোম লোন নেওয়া পার্কে হাঁটার মতো সহজ মনে হতে পারে তবে সময় মতো পরিশোধের জন্য সতর্ক আর্থিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। হোম লোনের ইএমআই পরিশধে দেরি ঋণগ্রহীতাকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। হোম লোন মেটাতে দেরি হলে কী হয় এবং কীভাবে তার সমাধান সম্ভব, তার একটা তালিকা এখানে দেওয়া হল। বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন Bankbazaar.com-এর সিইও আদিল শেঠি (Adhil Shetty)।
advertisement
আরও পড়ুন: কত টাকা বদলাল সোনা ও রুপোর দাম? দেখে নিন ১০ গ্রামের লেটেস্ট রেট....
বিলম্বে জরিমানা এবং এনপিএ অ্যাকাউন্ট
পরপর তিন মাস ইএমআই পরিশোধে দেরি হলে সেটা ছোট ডিফল্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে ঋণদাতা টাকা মেটানোর কথা মনে করিয়ে অনুস্মারক পাঠাতে পারে। কিন্তু বিলম্ব বাড়লেই সমস্যা শুরু হয়। টাকা মেটাতে ৩ মাসের বেশি দেরিকে মেজর ডিফল্ট হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। ঋণদাতা আর্থিক সম্পদের সুরক্ষা ও পুনর্গঠন এবং নিরাপত্তা সুদের প্রয়োগ আইন ২০২২-এর অধীনে বকেয়া পুনরুদ্ধার করতে সম্পত্তি নিলাম করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
একটা ইএমআই দিতে দেরি হলে ঋণদাতা সাধারণত প্রথম যে পদক্ষেপটা করে সেটা হল জরিমানা আরোপ। এটা বকেয়া ইএমআই-এর উপর ১ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত হয় এবং ন্যূনতম নির্ধারিত পরিমাপের সাপেক্ষে। মেজর ডিফল্ট হলে ব্যাঙ্ক ঋণকে এনপিএ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে এবং তারপর বকেয়া ঋণ আদায়ে পদক্ষেপ শুরু করতে পারে। সাধারণত ব্যাঙ্কগুলি ঋণকে এনপিএ হিসেবে চিহ্নিত করার আগে একটা নোটিস পাঠায়। কখনও কখনও ব্যাঙ্কগুলি এনপিএ অ্যাকাউন্টগুলি থেকে তাদের অর্থ পুনরুদ্ধার করতে তৃতীয় পক্ষের এজেন্টদের যুক্ত করে, যা ঋণগ্রহীতাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। বলা হয়, ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতা উভয়ের স্বার্থেই বকেয়া পরিশোধের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তবে টাকা মেটাতে না পারলেও ঋণগ্রহীতার সম্মানজনক আচরণ প্রাপ্য। কোনও জবরদস্তি বা ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। তবে এনপিএ হলে ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতার সম্পর্কে খারাপ প্রভাব পড়ে। ঋণগ্রহীতা যদি একই ঋণদাতার থেকে অন্য কোনও ঋণ নিয়ে থাকেন, তবে সেই ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা স্বত্বেও এনপিএ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন।
আরও পড়ুন: Modi সরকারের কর্মীদের DA Hike-এর বিষয়ে সব থেকে বড় আপডেট! বাম্পার বেতন বৃদ্ধি
ক্রেডিট স্কোরের উপর প্রভাব
হোম লোনের ইএমআই-এর অনিয়মিত পরিশোধ ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঋণগ্রহীতা যদি প্রায়শই ইএমআই মিস করেন তাহলে ক্রেডিট স্কোর খুব নিচে নেমে যায়। আজকাল বেশিরভাগ ব্যাঙ্কই নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে তাদের ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান রেপো রেট এবং ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোরের উপর ভিত্তি করে রিস্ক প্রিমিয়ামের প্রযোজ্য সুদের হার পুনর্নবীকরণ করা হয়। সুতরাং কম ক্রেডিট স্কোর ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। মেজর ডিফল্ট হলে ব্যাঙ্ক ক্রেডিট ব্যুরোতে সেই অ্যাকাউন্টের নামে রিপোর্ট করে এবং এনপিএ ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট রিপোর্টে প্রতিফলিত হয়। এটা ঋণগ্রহীতার ঋণযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
স্থানান্তর প্রত্যাখ্যান এবং নতুন লোন
হোম লোন অন্য কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করতে চাইলে, দুর্বল ঋণ পরিশোধের ইতিহাসের কারণে নতুন ঋণদাতা সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এই ধরণের ঋণগ্রহীতারা ব্যক্তিগত ঋণ, কার লোন ইত্যাদির মতো নতুন ঋণ পেতেও অসুবিধায় পড়তে পারেন।
আরও পড়ুন: শীঘ্রই পরিবর্তন হবে পেনশনের নিয়ম? ৭৩ লক্ষ পেনশনভোগীর জীবনকে সহজ করবে এই পদক্ষেপ
কীভাবে হোম লোন ইএমআই-এর দেরিতে পেমেন্ট এড়াতে হয়
যদি হাতে টাকা কম থাকে তাহলে ইএমআই পরিশোধের জন্য বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছ থেকে ধার নেওয়া যায়। ঋণের ইএমআই পরিশোধের আরেকটি বিকল্প হল, ফিক্সড ডিপোজিট বা জীবন বিমা পলিসির বিপরীতে ওভারড্রাফট নেওয়া। যাইহোক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে অবশ্যই ওভারড্রাফটের টাকা কিংবা বন্ধু বা আত্মীয়ের থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে।
কিন্তু হাতে কবে টাকা আসবে বুঝতে না পারলে ফিক্সড ডিপোজিট বা লিকুইড ফান্ডের মতো কম সুদের বিনিয়োগ ভাঙাতে হবে। এছাড়া হোম লোন ডিফল্ট এড়াতে টাকার বন্দোবস্ত করতে পিএফ বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ যেমন পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড ভাঙানোর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
আর্থিক পুনরুদ্ধার অসম্ভব মনে হলে গুরুতর আর্থিক পদক্ষেপ করতে হয় যেমন বাড়ি বিক্রি করা কিংবা টাকা বাঁচাতে ছোট বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে স্থানান্তর হয়ে যাওয়া। ঋণ খেলাপি হওয়া থেকে বাঁচতে সোনা, গাড়ি ইত্যাদি অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করার কথাও ভাবা যায়।
এছাড়া স্বল্প সময়ের জন্য ইএমআই কভার করতে লোন ইনস্যুরেন্স প্ল্যান কেনা যায়। কিছু ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দেওয়ার সময়ই এই বিমা প্ল্যান প্রদান করে। চাকরি হারালে বা আয়ের অস্থায়ী ক্ষতির কারণে ইএমআই দিতে অক্ষম হলে এই বিমা কাজে আসে।
প্রতিকূল আর্থিক পরিস্থিতিতেও যাতে সময় মতো ঋণের ইএমআই মেটানো যায় তার জন্য জরুরি তহবিল তৈরি করতে হয়। লোন নেওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনাই ইএমআই মিস হওয়া আটকাতে পারে। পরিশোধের ক্ষমতা অনুযায়ী ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি ইএমআই কম রাখার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নেওয়া যায়। ইএমআই শুরুর আগে নিজেকে আর্থিকভাবে প্রস্তুত করতে মোরাটোরিয়াম পিরিয়ড বেছে নেওয়া যায়।
একইসঙ্গে ঋণদাতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা এবং সমাধান খুঁজে বের করার পরামর্শও দেওয়া হয়। ঋণগ্রহীতার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ঋণদাতা ঋণ পুনর্গঠন, মোরাটোরিয়ামের সময়কাল এবং নিয়ম অনুযায়ী সুদের হার হ্রাস করতে পারেন।