চিকিৎসকের কাছে গেলে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করার আগে পালস, ব্লাড প্রেশার মাপা হয়। কেন? কারণ এগুলো একপ্রকার স্বাস্থ্যের মানদণ্ড। যা ‘অত্যাবশ্যক লক্ষণ’ হিসেবে দেখেন চিকিৎসকরা। এ থেকেই স্বাস্থ্যের সামগ্রিক ধারণা পেয়ে যান তাঁরা।
আর্থিক ক্ষেত্রেও অনেকটা সেরকম। শারীরিক লক্ষণের মতোই চার-পাঁচটি সর্বজনস্বীকৃত এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ আছে, যা থেকে কারও আর্থিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ণ করা যায়। এখানে তেমনই একটি ‘টুল’-এর সন্ধান দেওয়া হল। যার মাধ্যমে মাত্র ৫ মিনিটেরও কম সময়ে কোনও ব্যক্তির আর্থিক ক্ষমতা মূল্যায়ণ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, আর্থিক স্বাস্থ্যের (financial health) মূল্যায়ণের পাশাপাশি এর মাধ্যমে কৌশলগত আর্থিক পরিকল্পনার (financial planning) একটি রোডম্যাপও চোখের সামনে ফুটে উঠবে।
advertisement
আর্থিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ণের (Financial vitality score) পাঁচটি মাপকাঠি রয়েছে। সেগুলি হল, লিকুইডিটি অনুপাত, ঋণ অনুপাত, সঞ্চয় অনুপাত, নেট মূল্য অনুপাত এবং প্রাথমিক আয়ের অনুপাত।
আরও পড়ুন - এসির খোঁজ করছেন ? এক নজরে দেখে নিন ভারতের সেরা ৮টি এয়ার কন্ডিশনারের তালিকা
লিকুইডিটি অনুপাত (Liquidity ratio): জরুরি অবস্থার সময় কারও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কতটা মজবুত তা মাপা যায় এর সাহায্যে। বর্তমানে মহামারী, অর্থনৈতিক মন্দা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি, এবং আর্থিক বিপর্যয় ঘোর বাস্তবতা। তাই সেফটি নেট শুধুমাত্র আর্থিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। এটা মাপার ফর্মুলা হল - লিকুইডিটি অনুপাত = জরুরি অবস্থার জন্য মূলধন/মাসিক খরচ।
উদাহরণ: ধরা যাক মাসিক খরচ ৫০ হাজার টাকা। জরুরি অবস্থার জন্য মূলধন ১০ লাখ। লিকুইডিটির অনুপাত হল ২০।
ঋণ অনুপাত (Debt Ratio): এর সাহায্য একজন ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ তার দৈনন্দিন জীবনে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না তা বোঝা যায়। ঋণ অনুপাত বেশি হলে আর্থিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফর্মুলা হল - ঋণের অনুপাত = (সমস্ত ঋণের ইএমআই/মাসিক মোট বেতনের যোগফল) * ১০০।
উদাহরণ: ধরা যাক কাউকে মাসে ২০ হাজার টাকা হোম লোন এবং ১০ হাজার টাকা কার লোন মেটাতে হয়। তাঁর মাসিক আয় ৩ লাখ। তাহলে তার ঋণ অনুপাত হল ৩০০০০/ ৩০০০০০ বা ১০ শতাংশ।
সঞ্চয় অনুপাত (Savings ratio): এর সাহায্যে কোনও ব্যক্তির মোট আয় থেকে সঞ্চয়ের হার বোঝা যায়। মোটা অঙ্কের অবসরকালীন মূলধন নিয়ে চাকরি জীবন শেষ করা মানেই যে তিনি বিশাল টাকা বেতন পেতেন তা মোটেই নয়, বরং তিনি সঞ্চয়ী ছিলেন।এর ফরমুলা হল - সঞ্চয় অনুপাত = [{মোট মাসিক সঞ্চয় ১ / মোট মাসিক আয়} * ১০০]
উদাহরণ: কারও মাসিক আয় ৩ লাখ এবং সঞ্চয় ৬০ হাজার টাকা হলে তাঁর সঞ্চয়ের অনুপাত মোট আয়ের ২০ শতাংশ।
আরও পড়ুন - বিনা খরচে বাড়িতে ইন্টারনেটের স্পিড বাড়াতে চান ? দেখে নিন সহজ উপায়
নেট মূল্য অনুপাত (Net worth Ratio): এই অনুপাত একজন ব্যক্তির আয় এবং বয়স বিবেচনা করে তার আর্থিক নেট মূল্য নির্ণয় করতে সাহায্য করে।এর ফরমুলা হল - নেট মূল্য (পর্যাপ্ততা) অনুপাত = [{প্রকৃত মোট মূল্য / প্রত্যাশিত নিট মূল্য} * ১০০]
উদাহরণ: যদি একজন ব্যক্তির মোট সম্পত্তি ৮০ লক্ষ টাকা হয় এবং তার দায়বদ্ধতার যোগফল ২০ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে প্রকৃত সম্পদ ৬০ লক্ষ টাকা। এখানে ধরে নেওয়া হয়েছে যে ব্যক্তির বয়স ৪০ বছর, এবং বার্ষিক আয় ২৫ লক্ষ টাকা।
প্রাথমিক আয়ের অনুপাত (Primary Income Ratio): এর মাধ্যমে বিভিন্ন সম্পত্তি থেকে আয় (ভাড়া), বিনিয়োগ থেকে আয় (লভ্যাংশ/সুদ, মূলধন লাভ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফর্মুলা হল - প্রাথমিক আয়ের অনুপাত = [{প্রাথমিক আয়/মোট আয়}* ১০০]
উদাহরণ: ধরা যাক মোট আয় ৩০ লাখ এবং প্রাথমিক উৎস থেকে আয় ২৮ লাখ। তাহলে প্রাথমিক আয়ের অনুপাত হবে ৯৩ শতাংশ।