বিনিয়োগের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে শেয়ার বাজার। নতুন বছরে বাজার কেমন যাবে, কোন জিনিস বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে সেই সম্পর্কে খোঁজখবর রাখাটাও জরুরি। সতীশ বলছেন, ‘বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তারপরেও ২০২২-এর তুলনায় শেয়ার বাজারে দৃষ্টিভঙ্গী যথেষ্ট ভাল থাকবে। তবে উচ্চ সুদের হার এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় অর্থনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে’।
advertisement
আরও পড়ুন: স্পোর্টি লুকের ছোঁয়া নিয়ে ভারতে আসছে মারুতির নতুন মিনি SUV, ২০২৩ মাতাবে কি এই গাড়ি-ই?
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন মুদ্রাস্ফীতির পতন এবং হাকি থেকে নিরপেক্ষ মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন বাজারের প্রবণতার জন্য বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে একটি বাউন্স অভ্যন্তরীণ বাজারকে কম পারফরম্যান্স সত্ত্বেও ইতিবাচক রিটার্ন দিতে সহায়তা করবে। প্রিমিয়াম মূল্যায়ন এবং আয় হ্রাসের ফলে, ভারত অন্যান্য ইএম-এর তুলনায় কম পারফর্ম করবে বলেও মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে দ্বিগুণ হয়েছে টাকা! এই পাঁচটি স্টক থেকে প্রচুর লাভ করেছেন মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমাররাও!
এমন চললে সেনসেক্স, নিফটিতে ডবল ডিজিট রিটার্ন আশা না করাই ভাল। তবে স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদে দেশীয় স্টক মার্কেটে বার্ষিক ৫ থেকে ১০ শতাংশ রিটার্ন হেসে-খেলে আসবে বলে মনে করছেন সতীশ। তাঁর কথায়, ‘রিটার্ন উন্নত এবং উদীয়মান বাজারের কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করে। উচ্চ সুদের কারণে রিস্ক অফ স্ট্র্যাটেজিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সেটা কতটা কার্যকর হবে সময়ই বলবে। তবে স্টক এবং সেক্টর নির্দিষ্ট বাছাই করলে ভালো ফলের সম্ভাবনা রয়েছে’।
মন্দার আশঙ্কাও অবশ্য রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও পর্যন্ত থামেনি। শেয়ার বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। নতুন বছরে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো নতুন কিছু হাজির হবে না তো! অনেকেই ভাবছেন এই কথা। সতীশ বলছেন, বাজারে মন্দার আশঙ্কা আছে। সেটা গভীর হলে বিপদ। বন্ডের ফলন এবং সুদের হার যেগুলো এখন বেশি তা থেকে মাঝামাঝি আয় আশা করা যেতেই পারে। কিন্তু যদি এটা সারা বছর বেশি থাকে তাহলে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। করোনা ফের বাড়ছে। চিন যদি সামলাতে না পারে তাহলে ফের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জিনিসপত্রের দামও কমবে না।
শেয়ার বাজারে এই বছরও কয়েকটি লার্জ এবং মিডক্যাপ বিনিয়োগকারীদের দুহাত ভরিয়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে ভ্যালু স্টকই ২০২৩-র থিম হতে চলেছে। সতীশের কথায়, ন্যায্য মূল্যায়ন, স্থির উপার্জন এবং একটি শক্তিশালী চাহিদার দৃশ্যকল্প হবে কাটিং প্যারামিটার। এফএমসিজি, নন ডুরাবেল, পাওয়ার, ফার্মা এবং আইটি সেক্টরের মতো স্থিতিশীল এবং প্রতিরক্ষার স্টকই নিরাপদ। ভাল রিটার্নও দিতে পারে। তাঁর পরামর্শ, ‘পকেটে বিনিয়োগ করুন যা আন্তর্জাতিক পণ্যের মূল্য হ্রাস থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যটন, ভ্রমণ, বাণিজ্য, মিডিয়া একত্রীকরণ এবং অনলাইন সাবস্ক্রিপশন এবং অফলাইন পদচারণা বৃদ্ধির কারণে আতিথেয়তা, বিনোদন এবং মিডিয়ার প্রতি আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে’। স্টকের একটি তালিকাও দিয়েছেন সতীশ। তাঁর মতে এইচইউএল, পাওয়ার গ্রিড, এইচডিএফসি লাইফ, জাইডাস লাইফসায়েন্স, টেক মহিন্দ্রা, টাটা কনজিউমার, সিম্ফনি, ওএনজিসি, বিপিসিএল এবং ইন্দ্রপ্রস্থ গ্যাসে বাজি ধরলে ভাল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ তো গেল স্টকের কথা। নতুন বছরে বিনিয়োগকারীদের কী করা উচিত? সতীশ বলছেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী হলে ভাল স্টক ধরে রাখুন। যতই ওঠানামা করুক না কেন। আর এসআইপি-র মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে চালিয়ে যান। বন্ধ করবেন না। ইক্যুইটি এবং ঋণে ৬০/৪০ অনুপাতই বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ। এতে ঝুঁকি কম। পোর্টফোলিওতে বৈচিত্রও থাকে। নতুন বছরে গার্হস্থ্য-ভিত্তিক সেক্টরগুলিতে ফোকাস করা যেতে পারে, লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। অস্থিরতা থাকবে। কিন্তু ভয়ে বিক্রি করে দেওয়া চলবে না। সুদের ফলন বৃদ্ধির কারণে ২০২৩-২৪ সালে ঋণপত্র থেকে ভাল রিটার্ন আশা করা যেতে পারে’। তবে আইপিও-র বাজার খুব একটা ভাল নয়। সেটাই স্বীকার করে নিয়েছেন সতীশ। তাই এক্ষেত্রেও বুঝে শুনে বিনিয়োগ করা উচিত।