জেনে নেওয়া যাক, আসন্ন বাজেট থেকে করদাতারা কী কী প্রত্যাশা করছেন। এর পাশাপাশি তাঁরা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেটা নিয়েও আলোচনা করতে হবে।
কর ছাড়ের সীমা বাড়ানো: নতুন এবং পুরনো আয়কর ব্যবস্থার অধীনে বার্ষিক আয়কর ছাড়ের সীমা ২.৫ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ যাঁদের আয় ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, তাঁদের কর প্রদানের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। এই স্ল্যাবের উর্ধ্বে যাঁদের আয় ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, তাঁদের ৫ শতাংশ কর প্রদান করতে হয়। শেষ বার এই ছাড়ের সীমা পরিবর্তন করা হয়েছিল ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষেই। গত বছরের মার্চ মাসে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়ানো হয়েছিল। যা ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের তুলনায় সবথেকে বেশি বলে রেকর্ড গড়েছে।
advertisement
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি হয়েছিল। আসন্ন বাজেট থেকে তাই করদাতাদের প্রত্যাশা, নতুন কর ব্যবস্থার অধীনে আয়করের ক্ষেত্রে ছাড় বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা উচিত সরকারের। এটা কয়েকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে ফলদায়ক। গ্রাহকদের হাতে নিষ্পত্তিযোগ্য আয় বৃদ্ধি করা। প্রত্যেকের বিনিয়োগের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। কার্যকরী করের হার হ্রাস। অর্থনৈতিক বিকাশ বৃদ্ধি করা। পেশাদারদের জন্য অনুমানমূলক কর প্রকল্পের অধীনে করের হার কমানো।
৪৪এডিএ ধারার অধীনে অনুমানমূলক কর প্রকল্প বা প্রিজামপ্টিভ ট্যাক্সেশন স্কিম আসলে নির্দিষ্ট পেশাদারদের জন্য প্রাপ্ত উপকার। যার মোট প্রাপ্ত বার্ষিক অর্থের পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। আর রাজস্বের ৫০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয় মানুষকে। যার সাধ্য সকলের থাকে না। আসন্ন বাজেটে করদাতাদের প্রত্যাশা হল - কর আইনের অধীনে একটা সঙ্গতি আনা। আর সংশোধনীর মাধ্যমে এই হার নামিয়ে আনতে হবে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে। পেশাদারদের উপর করের বোঝা কমাতে হবে।
গৃহ ঋণের ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি: প্রতি অর্থবর্ষে নিজস্ব মালিকানাধীন একটি সম্পত্তির উপর সর্বোচ্চ যে করের ছাড় দাবি করা যায়, তার পরিমাণ হল বার্ষিক ২ লক্ষ টাকা। যদিও গত ৫ বছরে দেশে সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে ৬ থেকে ৭ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি দেখেছে আমাদের দেশ।
আসন্ন বাজেট থেকে করদাতাদের প্রত্যাশা হল - বাড়ির বর্তমান মূল্যের ব্যান্ডের উপর লক্ষ্য রেখে ২৪(বি) ধারার আওতায় হাউজিং লোনের উপর ২ লক্ষ টাকার ট্যাক্স সেভিং ক্যাপ বাড়াতে হবে। সম্পত্তির দাম নির্বিশেষে এই সীমা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকা করা উচিত।
৮০সি ধারার অধীনে ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি: ৮০সি ধারার অধীনে ছাড় হল সব থেকে সাধারণ ট্যাক্স সেভিং অ্যাভিনিউ, যার সুবিধা সাধারণত করদাতারা পেয়ে থাকেন। এই ধারার আওতায় রয়েছে পিপিএফ/ইপিএফ, এলএসএস, এনএসসি, এনপিএস, এসএসওয়াই এবং আরও নানা কিছু। ২০১৪ সালে ৮০সি ধারার অধীনে অধিকাংশ ছাড়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে আজকাল জীবনধারণের খরচ যা বেড়েই চলেছে, তাতে এই সীমা এক অথবা দুই বারের করেই শেষ হয়ে যায়।ফলে ৮০সি ধারার অধীনে আরও কর সাশ্রয়ের সুযোগ থাকে না।
বাজেট থেকে করদাতাদের প্রত্যাশা- ৮০সি ধারার অধীনে সর্বোচ্চ ছাড়ের সীমা কম করে ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো উচিত। কর সাশ্রয়ী বিকল্পের উপর বিনিয়োগ করার জন্য মানুষকে উৎসাহ দিতে হবে। নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি থেকে মুক্তি। কার্যকরী কর সাশ্রয়ে সাহায্য।
৮০টিটিএ ধারার অধীনে ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি: এই ধারার অধীনে সেভিং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপর সুদের জন্য বার্ষিক ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় মঞ্জুর করা হয়েছে। সমস্ত প্রজন্মের মানুষই বোধহয় পোস্ট অফিস কিংবা ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখতে পছন্দ করেন। সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা বিনিয়োগ করার উপকারিতা হল সেই টাকা যে কোনও সময় ব্যবহার করা যায়।
আসন্ন বাজেটে তাই করদাতাদের প্রত্যাশা হল, এর প্রথম সীমায় পরিবর্তন আসেনি। এর পাশাপাশি সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের হার খুবই কম। তাই ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদের আয়ের উপর আরোপ করা কর অপসারণ করা হোক। ছোট করদাতাদের উপর করের বোঝা কমানো হোক। এই ধরনের সুদ প্রদানকারী বিনিয়োগের উপর জোর দেওয়ার জন্য করদাতাদের উৎসাহিত করা উচিত।
আরও পড়ুন, আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎ এই ৭ জনের কাঁধে, জানেন কি কারা তৈরি করছেন দেশের বাজেট?
আরও পড়ুন, বাড়ি-ফ্ল্যাট-জমি কিনলে মিলবে সুবিধা? বাজেট ঘিরে বাড়ছে প্রত্যাশা
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের সীমা বৃদ্ধি: বর্তমান আয়কর ব্যবস্থা অনুযায়ী, এক জন বেতনভোগী ব্যক্তি তাঁর বেতন হিসেবে আয় থেকে ৫০ হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন দাবি করতে পারেন। তার জন্য অবশ্য কোনও ডিক্লারেশন অথবা খরচের প্রমাণপত্র পেশ করতে হয় না।
আসন্ন বাজেটে করদাতাদের প্রত্যাশা হল মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি এবং হাইব্রিড ওয়ার্ক মডেলে কাজ হতে থাকার জন্য ব্যয় বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতিতে স্ট্যান্ডা ডিডাকশন লিমিট বাড়ানো খুবই দরকার।