দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিণামে বেশ কয়েকটি চিনা ইলেকট্রনিক উপাদান প্রস্তুতকারক সস্থা ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিতে পারে। এই পদক্ষেপের ফলে ভারতে ফোন, টিভি এবং যন্ত্রপাতির মতো ইলেকট্রনিক পণ্য আরও সাশ্রয়ী হয়ে উঠতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাহিদা বাড়ানোর জন্য ভারতীয় ইলেকট্রনিক্স নির্মাতারা খরচ সাশ্রয়ের কিছু অংশ ভোক্তাদের কাছে হস্তান্তর করার কথা বিবেচনা করছে বলে জানা গিয়েছে। মানে সহজ, লাভের পুরোটাই তারা নিজেদের কাছে রাখবে না, সামগ্রীর দাম কমিয়ে গ্রাহকদেরও সুবিধা দেবে।
advertisement
এই প্রসঙ্গে একবার চিন এবং আমেরিকার শুল্ক তর্জা দেখে নেওয়া যেতে পারে এক নজরে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বড় ঘোষণা করেছেন এবং ৭৫টি দেশের জন্য ৯০ দিনের জন্য পারস্পরিক শুল্ক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা করেছেন। তিনি চিনের উপর পারস্পরিক শুল্ক তাৎক্ষণিকভাবে ১২৫ শতাংশে বৃদ্ধি করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প চিনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে আমেরিকা এখন চিন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১২৫% শুল্ক আরোপ করবে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। ট্রাম্প বলেন, চিন বিশ্ববাজারের সঙ্গে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা আর সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, এখন সেই যুগ শেষ যখন চিন আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের সুবিধা নিত। আমেরিকা এখন তার স্বার্থ রক্ষা করবে।
ইতিপূর্বে চিন ঘোষণা করেছিল যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক ৩৪% থেকে বাড়িয়ে ৮৪% করবে। চিনের এই পদক্ষেপের পর, আমেরিকাও পাল্টা জবাবে চিন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা করেছে। আমেরিকার মতে, চিন ইতিমধ্যেই তার পণ্যের উপর ৬৭ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করত। যার জবাবে আমেরিকা প্রথমে চিনের উপর ২০ শতাংশ এবং পরে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর জবাবে চিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা করে। এর পর আমেরিকা ইতিমধ্যে বিদ্যমান ৫৪ শতাংশ শুল্কের উপরে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে প্রতিক্রিয়া জানায়। অর্থাৎ চিনা পণ্যের উপর মোট ১০৪ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। চিনও চুপ করে থাকেনি এবং অতিরিক্ত শুল্ক ৩৪ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশে উন্নীত করে। এখন আমেরিকা চতুর্থবারের মতো চিনের বিরুদ্ধে শুল্ক বৃদ্ধি আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তা ১২৫ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা করেছে। এবার দেখার চিনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে!
তবে এ হেন অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতীয় সংস্থাগুলো লাভবান হতে পারে। উচ্চ শুল্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনা রপ্তানি চাপের মধ্যে থাকায় চিনের নির্মাতাদের কাছে মজুত উদ্বৃত্ত হয়ে পড়বে, যা দাম কম করার পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। “এটি ভারতীয় আমদানিকারকদের জন্য যন্ত্রাংশের দাম পুনর্বিবেচনার সুযোগ উন্মুক্ত করবে”, গোদরেজ এন্টারপ্রাইজেস গ্রুপের অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবসার প্রধান কমল নন্দী সংবাদমাধ্যমটিকে এ কথা বলেন।
অন্যদিকে, সুপার প্লাস্ট্রোনিক্সের সিইও অবনীত সিং মারওয়া দ্য ইকোনমিক টাইমসকে বলেন যে অতিরিক্ত সরবরাহের ফলে চিনা সংস্থাগুলির মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “যেহেতু ভারতীয় সংস্থাগুলি মে-জুন থেকে নতুন অর্ডার দেবে, তাই আলোচনার মাধ্যমে কিছু ছাড় গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে”। ২৮ মার্চ ভারত সরকার প্যাসিভ ইলেকট্রনিক উপাদানের জন্য ২২,৯১৯ কোটি টাকার উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা (PLI) প্রকল্প অনুমোদন করার পর পরই এই দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে্, যে প্রকল্পের লক্ষ্য দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং আমদানির উপর নির্ভরতা কমানো।