প্রথমেই চাই জায়গা:
শীতকালীন শাক-সবজি ফলানোর জন্য প্রথমেই যেটা চাই, সেটা হল বেশ বড়সড় একটা জায়গা। বাড়ির সামনে কিংবা পিছনে বিশাল জায়গা থাকলে তো কথাই নেই। কিংবা না-থাকলেও ক্ষতি কীসের। বাড়িতে বড় ছাদ থাকলেও চলবে। কারণ আজকাল অনেকেই বাড়ির ছাদেও সবজি চাষ করে দারুণ টাকা রোজগার করছেন। এমনকী যাঁরা চাকরি ছেড়ে চাষবাসের দিকে ঝুঁকছেন, তাঁরা রীতিমতো বড় মাপের জমি কিনে তাতে অর্গ্যানিক ফার্মিংয়ের রাস্তা বেছে নিচ্ছেন। তবে চাষের জন্য পছন্দমতো জায়গা বেছে নেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এই অংশে যেন পর্যাপ্ত রোদ পড়ে। কারণ ঠান্ডার মরশুমে হওয়া শাক-সবজির জন্যও কিন্তু যথেষ্ট সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়ে থাকে। দেখে নেওয়া যাক, আমাদের দেশে কোন কোন শীতকালীন সবজি চাষ করে দারুণ আয় করা যাবে।
advertisement
আরও পড়ুন: ভুল ইউপিআই পেমেন্ট? চিন্তা নেই, দেখে নিন রিফান্ড পাওয়ার উপায়!
ক্য়াপসিকাম (বেলপেপার):
ক্যাপসিকাম বা বেলপেপার আবার সিমলা মির্চ নামেও পরিচিত। এটা সারা দেশেই পাওয়া যায়। লাল, সবুজ কিংবা হলুদ রঙের এই সবজি খাবারের স্বাদ তো বাড়িয়ে দেয়ই। আর শরীরের জন্যও তা উপকারী। ক্যাপসিকাম গাছ তৈরির আগে সিডিং ট্রে-তে বীজ প্রস্তুত করে নিতে হবে। এর চার সপ্তাহ পরেই তা মাটিতে রোপণ করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ক্যাপসিকাম গাছের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সূর্যরশ্মির প্রয়োজন হয়। সব কিছু ঠিক থাকলে ৭০ থেকে ৮০ দিন পরে ফসল তোলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: বছর শেষে বিভিন্ন গাড়ির উপরে পাওয়া যাচ্ছে আকর্ষণীয় ছাড়, এক নজরে দেখে নিন সমস্ত খুঁটিনাটি!
ফুলকপি:
বিভিন্ন রকম কপির মধ্যে ফুলকপি সত্যিই লোভনীয়। শীতকালে বাজারে রমরমিয়ে বিক্রিও হয়। রাঁধা যায় বিভিন্ন রকম পদও। বীজ থেকে চারা তৈরি হতে ৩০-৩৫ দিন সময় লাগে। সুস্থ চারাগাছ গুলিকে মাটিতে রোপণ করতে হবে। ফুলকপি চাষের জন্য কড়া রোদ অথচ ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। চারা লাগানোর ৮০ থেকে ৯০ দিন পর ফুলকপির সাদা অংশ তৈরি হয়। ফুলকপি চাষে কিছু সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হল তাড়াতাড়ি ফুল বেরিয়ে আসা অথবা ফুল বা সাদা অংশ না-তৈরি হওয়া। কখনও কখনও ওই সাদা অংশ আবার আকারে এতটাই ছোট হয় যে, তা খাওয়ার অবস্থায় থাকে না। এই পরিস্থিতি যাতে না-তৈরি হয়, তার জন্য প্রয়োজন উন্নত গুণমান সম্পন্ন বীজ, সঠিক মরশুম, ঠান্ডা এবং আর্দ্র আবহাওয়া।
পালং শাক:
শীত কাল মানেই তো পালং শাক। নানা রকম শীতের সবজি আর ডালের বড়ি দিয়ে এই সময় পালং শাক বড়ই উপাদেয়। আর এই শাকের পুষ্টিগুণও অসাধারণ। ফলে বাজারে এর চাহিদাও থাকে তুঙ্গে। আর খুব সহজেই ফলানো যায় পালং শাক। ঠান্ডা আবহাওয়া, কড়া রোদ এবং আংশিক ছায়া এই শাকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রস্তুত করা বীজ মাটিতে লাগাতে হয়। বীজ রোপণ করার ৩০ দিন পরে এই শাক তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। শুধুমাত্র ৩ গ্রাম বীজই প্রতি ১০০ বর্গফুট এলাকার জন্য যথেষ্ট।
পেঁয়াজ:
ভারতে শীতের মরশুমেই সাধারণত ফলানো হয় পেঁয়াজ। এই সময়টাতেই বাজারে পেঁয়াজকলি এবং স্প্রিং অনিয়নের আধিক্য চোখে পড়ে। আর এই পেঁয়াজ গাছ বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়ার। ঠান্ডার মরশুমে সিডবেডে বীজ রোপণ করতে হবে। চারা তৈরি হওয়ার এক মাস পরে তা মাটিতে রোপণ করতে হবে। গাছের জন্য কড়া রোদের প্রয়োজন হয়। আর নিয়মিত জলসেচনের ব্যবস্থা রাখাটাও জরুরি। গাছ রোপণ করার ৮০ থেকে ১০০ দিন পরে পেঁয়াজ তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। যদিও এটা নির্ভর করে পেঁয়াজের প্রজাতির উপর।
গাজর:
স্যালাড কিংবা স্যুপ বোধহয় গাজর ছাড়া অসম্পূর্ণ। আবার গাজরের হালুয়াও বড় উপাদেয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন আকারের নানা প্রজাতির গাজর পাওয়া যায়। বীজ রোপণের ৮০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই গাজর উৎপন্ন হয়। এই বিষয়টাও অবশ্য গাজরের প্রজাতির উপরেই নির্ভর করে। গাজর চাষের জন্য মাটি আলগা রাখাই ভাল। চাষে যাতে সমস্যা না-হয়, তার জন্য মাটিটাকে ভাল করে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
মটরশুঁটি:
বিনস শ্রেণীর মধ্যে পড়ে এই সবজি। শীতকালে টাটকা মটরশুঁটির চাহিদা বাজারে বেড়ে যায়। এই সবজি চাষের জন্য ঠান্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। এই সবজি সরাসরি মাটিতে রোপণ করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, মটরশুঁটির গাছ কিন্তু লতানো হয়। তাই এর জন্য মাচার মতো তৈরি করে নিতে হবে। বীজ বপনের ৮০ থেকে ৯০ দিন পরে ফসল কাটা যেতে পারে। তবে মাথায় রাখা জরুরি যে, মটরশুঁটির জন্য ফসফরাস এবং ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। প্রতি ১০০ বর্গফুট এলাকায় ৫০ গ্রাম মটরশুঁটি বীজ রোপণ করা যায়।