রুপির ক্রমাগত পতন এবং এর কারণ
গত কয়েক মাসে রুপির (Rupee) ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা গিয়েছে। ১২ জানুয়ারি, ২০২২-এ এক মার্কিন ডলার পিছু ভারতীয় টাকার দাম দাঁড়িয়েছিল ৭৩.৭৭ টাকা। তারপর থেকে প্রায় ৫ টাকা পড়ে বুধবার তা দাঁড়িয়েছে ৭৮.৯৬ টাকায়। তবে ১২ জানুয়ারি থেকে যে ধারাবাহিক পতন হয়েছে তা বলা যায় না। ৮ মার্চের পর থেকে বাজার খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সে দিন এক জলারের দাম ছিল ৭৭.১৩ টাকা। ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেশ খানিকটা শক্তি অর্জন করে হতে শুরু করে। টাকার দাম ৭৫.২৩ স্পর্শ করে। কিন্তু এর পর থেকেই লাগাতার পতন হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় এবং একাধিকবার সর্বকালের সর্বনিম্ন ছুঁয়েছে সে।
advertisement
গত কয়েক মাসে ফরেন পোর্টফোলিও বিনিয়োগ (FPI) বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ক্রমাগত ডলার খুইয়েছে ভারতীয় বাজার। এর ফলেই পড়েছে টাকার দর। মনে করা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর আর্থিক নীতির কারণেই FPI ভারত থেকে তাদের অর্থ বের করে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের সাধারণ শক্তির কারণেও ভারতীয় মুদ্রার এই ব্যাপক পতন ঘটছে।
মেহতা ইক্যুইটিজের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (পণ্য) রাহুল কালান্তরি (Rahul Kalantri) বলেছেন, ‘মার্কিন ফেডারেলে তাদের জুলাই মাসের বৈঠকে আরও রেট বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করছে। তারই মধ্যে ডলার সূচক বেড়ে ১০৪ অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার ০.৫৫ শতাংশ লাভ নিয়ে তা ১০৪.২৭৩-এ স্থির হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানও বেশ হতাশাজনক এবং তা ডলারের নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরাকেই সমর্থন করছে।
সাধারণ জীবনে কী প্রভাব?
মুদ্রাস্ফীতি: ভারতীয় মু্দ্রার পতন সরাসরি ভাবে আমদানির উপর প্রভাব ফেলবে, তা ব্যয়বহুল হবে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে। ভারতে খুচর বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই সাত শতাংশের উপরে রয়েছে। এটি RBI-এর ২ থেকে ৬ শতাংশের ‘কমফোর্ট জোন’-এর বাইরে। আমদানির উপর নির্ভরশীলতার কারণে, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য (FMCG), ধাতু এবং পেট্রোলের মতো সম্পদ তলানি এসে ঠেকবে। অবশ্যম্ভাবী দামও বাড়বে। ভারতীয় মুদ্রার তুলনায় ডলারের দাম বাড়লে ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে বিদেশে পড়াশোনা বা ভ্রমণও।
বিনিয়োগ: উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের সামগ্রিক আয় প্রভাবিত হতে পারে। এ ছাড়াও, রুপির পতনের সঙ্গে সঙ্গেই আমদানি খাতেও ব্যয় বৃদ্ধি হয়। প্রভাব পড়ে আয়ের উপরেও। জিওজিৎ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ ভি কে বিজয়কুমার (V K Vijayakumar) বলেন, রুপির অবমূল্যায়নের ফলে রফতানি খাতে বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি (IT) কোম্পানিগুলির জন্য ভাল ফল দিতে পারে। ফার্মাসিটিক্যাল রফতানিকারক, বিশেষত কেমিক্যাল এবং টেক্সটাইলও লাভবান হবে।
সম্ভাবনা
রাহুল কালান্তরির দাবি, ‘এই সপ্তাহে ডলার সূচকে অস্থিরতা থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। তাতে ১০৩.২০ থেকে ১০৪.৭০ রেঞ্জে ব্যবসা হবে বলেই মনে হয়৷ দেশীয় বাজারে FII বিক্রি হয়ে যাওয়ায়ও ভারতীয় মুদ্রার উপর চাপ তৈরি করছে। অপরিশোধিত তেলের দামও বেড়েছে। WTI ব্যারেল প্রতি ১১২ ডলারের বেশি এবং ব্রেন্টের দাম ব্যারেল প্রতি ১১৬ ডলারের বেশি রয়েছে। এর ফলেই ভারতীয় মুদ্রার দাম ক্রমাগত নিম্নমুখী। আমাদের আশঙ্কা এ সপ্তাহে রুপি অস্থিরই থাকবে। এমনকী ৭৯.৩০ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।
