এই দু’টি স্কিমই অত্যন্ত নিরাপদ। মূলত গ্রামীণ অঞ্চল কিংবা মফস্বল এলাকার মানুষ এবং মধ্য ও নিম্ন আয়গোষ্ঠীর মানুষের কথা মাথায় রেখেই এই দুই স্কিম বানানো হয়েছে। তবে অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা এই দুই স্কিমের মধ্যে কোনটি বাছবেন, সেটা বুঝে উঠতে পারেন না। আসলে দুই স্কিমের সাদৃশ্যই বোধহয় বেশি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দু’টি স্কিম একে অপরের তুলনায় আলাদা। তা-হলে বিশদে জেনে নেওয়া যাক, এনএসসি এবং কেভিপি-র সমস্ত তথ্য।
advertisement
ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (National Savings Certificate) বা এনএসসি (NSC) কী?
ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট হল এমন একটি স্কিম, যা ছোট সেভিংস-কে সুসংহত করতে সাহায্য করে। ভারতীয় ডাক বিভাগের মাধ্যমে ভারত সরকার এই স্কিমটিকে চালনা করে থাকে। এই স্কিমটি আসলে ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটস (VIII Issue) স্কিম, ২০১৯ নামে পরিচিত। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বরের কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তি দ্বারা কভার করা হয়েছে এনএসসি-কে। ১৮৭৩-এর সরকারি সেভিংস প্রোমোশন অ্যাক্ট-এর অধীনে এটি চালিত হয়।
ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট-কে স্থায়ী আয়ের বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। আর এর সঙ্গে করের সুবিধাও রয়েছে। আর সবথেকে বড় কথা হল- গ্রামীণ এলাকার মানুষদের কথা মাথায় রেখেই এই স্কিম চালু করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মফস্বল এলাকার মানুষরাও এই স্কিমের সুবিধা পেতে পারেন। আসলে গ্রামাঞ্চল এবং মফস্বলের মানুষ যাতে পোস্ট অফিসে টাকা সঞ্চয় করতে পারেন, সেই কথা ভেবেই এই স্কিম আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ITR: এখনও পর্যন্ত জমা পড়েছে ৩ কোটি আইটিআর ফাইল; মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে সরকার কী বলছে?
কিষাণ বিকাশ পত্র (Kisan Vikas Patra) বা কেভিপি (KVP) কী?
কিষাণ বিকাশ পত্র একটি নিরাপদ এবং ঝুঁকিহীন বিনিয়োগের স্কিম। এটি কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় ডাক বিভাগের দ্বারা চালিত হয়ে থাকে। এই স্কিমের মাধ্যমে যে টাকা তোলা হয়, সেই টাকা কৃষকদের উন্নয়ন এবং কল্যাণমূলক কাজে লাগায় ভারত সরকার। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে, দেশের কৃষিকাজে উন্নয়নের অন্যতম মূল চাবিকাঠি হল কেভিপি স্কিম।
আরও পড়ুন: Gold Price In Kolkata: কলকাতায় ফের সস্তা সোনা! প্রতি গ্রামে আকর্ষণীয় দাম
সাধারণত নিম্ন এবং মধ্য আয় গোষ্ঠী এবং প্রধানত গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল এলাকার মানুষদের কথা ভেবেই কিষাণ বিকাশ পত্র স্কিমটি তৈরি করা হয়েছিল। নিঃসন্দেহেই গ্রাহকদের ভালো হারে সুদ প্রদান করার বিষয়টা নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এই সুদের হার মুদ্রাস্ফীতিকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। কেভিপি অ্যাকাউন্টকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - সিঙ্গল হোল্ডার টাইপ, জয়েন্ট টাইপ-এ এবং জয়েন্ট টাইপ-বি। শুধুমাত্র যে ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে, তিনিই বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে নন-
রেসিডেন্ট বিনিয়োগকারী, এইচইউএফ, অংশীদার ফার্ম অথবা দেশি কিংবা বিদেশি কোম্পানি কিন্তু কিষাণ বিকাশ পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে না।
ন্য়াশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বা এনএসসি-র মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
- ১০০ টাকার গুণিতকে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা জমা রেখে এই স্কিমে বিনিয়োগ শুরু করা যেতে পারে। তবে এর সর্বোচ্চ আমানত বা ডিপোজিটের পরিমাণের কোনও সীমা-পরিসীমা নেই।
- ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে যে নিয়ম হয়েছে, সেই অনুসারে বার্ষিক চক্রবৃদ্ধির সুদের হার ৬.৮০ শতাংশ এবং মেয়াদ পূর্তির সময় তা দেওয়া হয়। ১০০০ টাকা বিনিয়োগ করলে ৫ বছর মেয়াদের লক-ইন পিরিয়ডে তার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩৮৯.৪৯ টাকা।
- প্রতি ত্রৈমাসিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India)-র সঙ্গে আলোচনা করে ভারত সরকার সুদের হার নিয়ন্ত্রণ এবং ঘোষণা করে।
- ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট স্কিমের লক-ইন পিরিয়ড হয় ৫ বছর। অর্থাৎ মেয়াদ পূর্তির তারিখের আগে এই স্কিম থেকে টাকা তোলা যাবে না। তবে কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্তির আগেই বিনিয়োগের টাকা তোলা সম্ভব। যদি অ্যাকাউন্টধারীর মৃত্যু হয়, সে-ক্ষেত্রে মেয়াদ ফুরোনোর আগেই তোলা যাবে টাকা। এ-ছাড়া আদালতের আদেশেও টাকা তুলে নেওয়া যায়।
- এক জন স্থায়ী বাসিন্দা অন্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে যৌথ ভাবে মোট ৩টি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক কারওর নামেও খোলা যায় অ্যাকাউন্ট। কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের নামে অভিভাবকরাও খুলতে পারেন এই অ্যাকাউন্ট।
- এনএসসি-তে বিনিয়োগ করার জন্য কেওয়াইসি (KYC) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা করা জরুরি। আর কেওয়াইসি করতে প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার-আইডি, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদির কপি জমা দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
কিষাণ বিকাশ পত্র বা কেভিপি-র মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
- ১০০ টাকার গুণিতকে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা জমা রেখে এই স্কিমে বিনিয়োগ শুরু করা যেতে পারে। তবে এর সর্বোচ্চ আমানত বা ডিপোজিটের পরিমাণের কোনও সীমা-পরিসীমা নেই।
- ১২৪ মাস বা ১০ বছর ৪ মাসে এই বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
- এই স্কিমের আওতায় গ্রাহকরা একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
- টাকা জমা করার দিনের হিসেব অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রকের ধার্য করা মেয়াদেই আমানত ম্যাচিওর হবে।
- এক জন স্থায়ী বসবাসকারী নিজে একা কিংবা অন্য কারওর সঙ্গে যৌথ ভাবে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের নামে অভিভাবকরাও খুলতে পারেন এই অ্যাকাউন্ট। এমনকী শিশুর বয়স ১০ বছর হয়ে গেলে সে তার নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এ-ছাড়া মানসিক ভারসাম্যহীন কোনও গ্রাহকের নামেও তাঁর হয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে।
- কিষাণ বিকাশ পত্রকে বন্ধক কিংবা হস্তান্তর হিসেবেও গণ্য করতে পারেন গ্রাহকরা। এর জন্য গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে নির্দিষ্ট আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। সেই সঙ্গে দাখিল করতে হবে বন্ধকগ্রহীতার স্বীকৃতির চিঠি।
- মেয়াদ ফুরোনোর আগে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতেই কেভিপি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা সম্ভব। এক জন কিংবা সমস্ত অ্যাকাউন্টধারীর মৃত্যু, আদালতের নির্দেশ প্রভৃতি পরিস্থিতিতেই বন্ধ করা যেতে পারে কেভিপি অ্যাকাউন্ট। টাকা জমা করার ২ বছর ৬ মাস পরেও টাকা তুলে নিতে পারেন গ্রাহক।
- সম্প্রতি বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি সুদের হার ৬.৯০ শতাংশ।
এনএসসি এবং কেভিপি স্কিমের তুলনা:
ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট এবং কিষাণ বিকাশ পত্র স্কিমের বহু সাদৃশ্য রয়েছে। এর পাশাপাশি এই দুই স্কিমের কিছু ফারাকও রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক, সেই পার্থক্য।
মেয়াদ কাল:
এনএসসি স্কিমের মেয়াদ কাল ৫ বছর। সেখানে কেভিপি স্কিমের মেয়াদ কাল ১০ বছর ৪ মাস।
সুদের হার:
এনএসসি স্কিমের সুদের হার ৬.৮ শতাংশ। সেখানে কেভিপি স্কিমের সুদের হার ৬.৯ শতাংশ।
৮০সি ধারার আওতায় ট্যাক্স ডিডাকশন:
১৯৬১ সালের আয়কর আইনের ৮০সি ধারার অধীনে এনএসসি স্কিমে পাওয়া যাবে করের সুবিধা। তবে কেভিপি স্কিমে কর সংক্রান্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে না।
মেয়াদ পূর্তির আগেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে:
এনএসসি স্কিমের লক-ইন পিরিয়ড ৫ বছর। আবার অন্য দিকে, কেভিপি স্কিম ২.৫ বছর পর বন্ধ করে দেওয়া যাবে।
ন্য়াশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বনাম কিষাণ বিকাশ পত্র: কাদের জন্য কোনটা ভালো?
নিরাপদ এবং ঝুঁকিহীন আয়ের পথ হিসেবে কিষাণ বিকাশ পত্র এবং ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট উভয় স্কিমই দুর্দান্ত এবং জনপ্রিয়ও বটে। এই দুইয়ের সুদের হার প্রায় একই রকম। তাই অনেকেই বিনিয়োগের জন্য কোন স্কিমটা বেছে নেবেন, সেটা বুঝে উঠতে পারেন না।
বিনিয়োগকারী ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট স্কিম কখন বেছে নিতে পারেন?
- আয়কর আইন বা ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্টের আওতায় বিনিয়োগকারী যদি কর বাঁচাতে চান, তা-হলে তিনি এই স্কিমটি বেছে নিতে পারেন >
- বিনিয়োগকারী যদি ৫ বছরের বেশি সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে না-চান, তা-হলে এনএসসি স্কিমটি তাঁর জন্য আদর্শ।
- বিনিয়োগকারী যদি ৫ বছরের লক-ইন পিরিয়ডের বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তা-হলেই তাঁর এই স্কিমটি বেছে নেওয়া উচিত।
বিনিয়োগকারী কিষাণ বিকাশ পত্র স্কিম কখন বেছে নিতে পারেন?
- বিনিয়োগকারী যখন কোনও নিশ্চিত বিনিয়োগের মাধ্যম খুঁজছেন, তখনই তাঁদের কিষাণ বিকাশ পত্র স্কিমটি বেছে নেওয়া উচিত। কারণ এই স্কিমের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি থাকে না। মেয়াদ পূর্তির পরে দ্বিগুণ রিটার্নও নিশ্চিত ভাবে পেয়ে যান বিনিয়োগকারীরা।
- চাইলে বিনিয়োগকারী তুলনামূলক ভাবে ছোট লক-ইন পিরিয়ড বেছে নিতে পারেন। এনএসসি-তে যেমন ৫ বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকে, তার পরিবর্তে কেভিপি-তে ২.৫ বছরের অপেক্ষাকৃত ছোট লক-ইন পিরিয়ড বেছে নেওয়া যেতে পারে। আবার বিভিন্ন এমার্জেন্সি কভার করার জন্য এনএসসি স্কিমের তুলনায় কেভিপি স্কিম উচ্চ লিক্যুইডিটি প্রদান করে থাকে।