বর্তমান সময়ে পুরুষ এবং মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা মহিলাদের স্বনির্ভর করতে কখনো ছাগল, হাঁস, মুরগি চাষে উৎসাহী করেন, আবার কখনো বাড়িতে মাছ চাষ করে স্বনির্ভর হতে বার্তা দেন। তবে এইসবের বাইরেও মহিলাদের স্বনির্ভর হতে সাহায্য করছে জলের মধ্যে থাকা কচুরিপানা। কচুরিপানা, এই নামটি অন্তত গ্রামবাংলায় এমন কেউ যারা জানেন না। কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। মূলত এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। এটি পুরু, চকচকে এবং ডিম্বাকৃতির পাতাবিশিষ্ট। কচুরিপানা জলের উপরিপৃষ্ঠের ওপর ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
advertisement
তবে অনেকে ভাবেন কচুরিপানা জলাশয়ের এক এমন জিনিস যার কোনো কাজ নেই। অনেকেই পুকুর থেকে সেই কচুরিপানা সরিয়ে ফেলে দেন, ভাবেন হয়তো বেকার জলে জঞ্জাল সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আপনার মনের মধ্যে এ ধারণা থাকলে সেটি একদমই ভুল। এই কচুরিপানা থেকেই লক্ষ্মীলাভ করছে বীরভূম। কচুরিপানার তন্তু দিয়ে তৈরি বাড়ির ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিস এবার সাঁইথিয়া থেকে সারা দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। সাঁইথিয়ার ভগবতীপুর গ্রামে সে জন্য তৈরি হচ্ছে ‘কমন প্রোডাকশন সেন্টার’। রাজ্য ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্র বিভাগের উদ্যোগে ভগবতীপুরে তৈরি হচ্ছে সরকারি ভবন। বীরভূমের সাঁইথিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত আহমদপুর এলাকায় গেলেই আপনি পৌঁছে যাবেন এই বাড়ি। যেখানে প্রায় কুড়ি জন মহিলারা স্বনির্ভর হচ্ছেন কচুরিপানা থেকে বিভিন্ন বাড়ির সামগ্রী তৈরি করে।
জেলা শিল্প কেন্দ্রের সূত্রের খবর, ‘জমি চিহ্নিতকরণ হয়ে গিয়েছে। দফতর এর জন্য ১ কোটি ২১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে।’ ২০২১ সালে কচুরিপানা থেকে তন্তু বের করে নিত্যদিনের ব্যবহৃত সামগ্রী তৈরি করতে শুরু করে জেলা শিল্প কেন্দ্রের অধীনে থাকা মহিলারা। যা দিয়ে ফাইল র্যাক, ট্রে, ডাইরি-সহ নানা জিনিস তৈরি হয়।
রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, এর আগেও তন্তু দিয়ে তৈরি ক্লাস্টার পূর্বস্থলী ও কলকাতার কাছে একটি কেন্দ্রে পরিকাঠামো করে দিয়েছে সরকার। এবার আনন্দ দ্বিগুণ, কারণ নিজের জেলার প্রায় আনুমানিক ৩৫০-৪০০ মহিলা সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হবেন। পরোক্ষভাবে কাজে যোগ দেবে আরও ৪০০-৫০০ মহিলা। সব মিলিয়ে এই কাজ করে স্বনির্ভর হচ্ছেন মহিলারা। আর্থিক উপার্জন করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারছেন তারা। আর কার্যত তাতেই খুশির হাওয়া প্রত্যন্ত গ্রামের এই সমস্ত মহিলাদের। তাই এবার আপনি চাইলেও আপনার পুকুরে জন্মানো কচুরিপানা থেকে মাস গেলে বেশ মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে বাড়িতে ঢোকাতে পারবেন।
সৌভিক রায়