একসময় গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠোনে দেখা যেত নারকেল গাছ। কিন্তু বর্তমানে সেই দৃশ্য বিরল। বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা কারণে রাজ্যে নারকেল চাষের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। দক্ষিণ ভারতের মতো নারকেল বাগান এখন পশ্চিমবঙ্গে আর নেই বললেই চলে। এর পেছনে কেউ প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রভাব, কেউ বা মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনকে দায়ী করছেন। ফলে নারকেল চাষ রক্ষা ও সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: অবসর গ্রহণের পর Emergency Fund হিসেবে আপনার কত টাকা রাখা উচিত?
এই প্রেক্ষিতে নারকেল উন্নয়ন পর্ষদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর এই পর্ষদ কৃষকদের মধ্যে নারকেল চারা বিতরণ করে থাকেন এবং বিভিন্ন কর্মশালা ও সচেতনতা শিবিরের মাধ্যমে কৃষকদের নারকেল চাষে উৎসাহিত করেন। মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে নারকেল গাছ প্রতিপালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও এর বহুমুখী উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের উদ্দেশে বলেন, নারকেল শুধুমাত্র খাদ্য ও পানীয় নয়, এর গাছ ও পাতা গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তাই কৃষকদের আরও বেশি করে নারকেল চাষে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
দিনভর চলা এই কর্মসূচি থেকে কৃষকদের কাছে বার্তা পৌঁছায়— সঠিক পরিচর্যা ও সচেতনতার মাধ্যমে আবারও রাজ্যে নারকেল গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি সম্ভব। নারকেল উন্নয়ন পর্ষদ জানিয়েছে, আগামী দিনে তারা চারা বিতরণ কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করবে, যাতে বাংলায় পুনরায় নারকেল চাষের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা যায়।
আরও পড়ুন: ফসলি জমি কেটে ফেলে পুকুর করে বিকল্প চাষ! কি এমন চাষ করছেন মালদহের চাষিরা?
এদিন উপস্থিত থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন জানান, নারকেল শুধু ফল হিসেবে বিক্রি নয় নারকেল চাষ করে উপকারিতা রয়েছে একাধিক। প্রথমত নারকেলের সম্পূর্ণ অংশটাই ভীষণ মূল্যবান। নারকেলের খোল দিয়ে কোকোপিট থেকে শুরু করে একাধিক সার ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি হয়ে থাকে। এরপর ভেতরের সাদা অংশটি দিয়ে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল এছাড়াও নারকেলের দুধ চড়া দামে বিক্রি করতে পারবেন কৃষকেরা। যার গুণাবলীও রয়েছে ভীষণ। এছাড়াও বাড়ির গৃহস্থালির কাজকর্মের একাধিক জিনিসপত্র বানানো যায় নারকেল গাছের পাতা দিয়ে যার মধ্যে অন্যতম ঝাঁটা কিংবা বারণ।
এছাড়াও উপস্থিত থাকা অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় কৃষকদের প্রশ্ন থাকে নারকেল চাষ করার জন্য সরকার থেকে প্রয়োজনীয় সার মিলবে কিনা। সরকার কৃষকদের কথা শুনেছে। বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে তবে সরাসরি টাকা হাতে পাবেন না তারা পাবেন প্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রী। কৃষকদের জন্য ৪২ হাজার টাকা প্রতি হেক্টর বরাদ্দ রয়েছে নারকেল চাষের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ বোঝানো হচ্ছে এখানে গাছ প্রতি 240 টাকা সাবসিটি গাছগুলিকে পরিচর্যা করার জন্য। তবে সেই টাকা প্রযোজ্য চারা গাছের জন্য নয় কমপক্ষে পাঁচ বছরের উর্ধ্বে যেই নারকেল গাছের বয়স সেই গাছের জন্যেই এই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে কৃষকদের জন্যে।
এছাড়াও নারকেলের সামগ্রী উৎপাদনের বিভিন্ন কারখানা কেউ যদি খুলতে চান কারখানার আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মেশিন ইত্যাদি সমস্ত খরচের ৫০ শতাংশ ও সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা এই নারকেল পরিষদের বোর্ড সেই খরচের ভার বহন করবেন বলেও জানান তারা।
মৈনাক দেবনাথ