মেডিক্লেম বিমা কী?
মেডিক্লেম হল এক ধরনের বিমা পরিকল্পনা বা ইনস্যুরেন্স প্ল্যান। যা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচের সাপেক্ষে নির্দিষ্ট কিছু আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এটা মূলত একটা সাশ্রয়ী প্ল্যান, যা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরিকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মেটাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ মেডিক্লেম বিমার মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তির খরচের ক্ষেত্রে কভারেজ পাওয়া যায়। আর বাকি সমস্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ বহন করতে হয় রোগীর পরিবারকেই।
advertisement
স্বাস্থ্য বিমা বা হেলথ ইনস্যুরেন্স কী?
বিমা ধারক রোগীর সমস্ত মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল সংক্রান্ত খরচের ক্ষেত্রে কভারেজ দেয় স্বাস্থ্য বিমা। এই ধরনের খরচ বিমা ধারক যদি নিজের পকেট থেকে দেন, পরে তাঁকে সেই পরিমাণ টাকা রিইমবার্স করে বা মিটিয়ে দেয় স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানি। এটা মেডিক্লেম পলিসির থেকে একটু বেশিই দামি হয়।
আরও পড়ুন: আপনার শিশুর এই এলআইসি পলিসি আছে কি? করিয়ে রাখলে লাভ-ই লাভ!
মেডিক্লেম বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমার পার্থক্য:
অফার করা কভারেজ:
মেডিক্লেম প্ল্যানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তির খরচ, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত চিকিৎসার খরচ এবং আগে থেকেই বিদ্যমান কোনও রোগের জন্য পূর্ব নির্ধারিত সীমার খরচেরই কভারেজ দেওয়া হয়।
আর অন্য দিকে স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীন মেডিকেল কভারেজ, হাসপাতালে ভর্তির খরচ, প্রি-হসপিটালাইজেশন চার্জ, পোস্ট-হসপিটালাইজেশন চার্জ, অ্যাম্বুলেন্সের খরচ ইত্যাদি কভার করা হয়। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনার জেরে আয়ের মাধ্যম হারালেও স্বাস্থ্য বিমা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
অ্যাড অন কভার:
মেডিক্লেম বিমার ক্ষেত্রে কোনও রকম অ্যাড-অন কভার দেওয়া হয় না।
আবার উল্টো দিকে স্বাস্থ্য বিমায় কিন্তু এই সুবিধা পাওয়া যায়। আসলে এ-ক্ষেত্রে একাধিক অ্যাড-অন কভার প্রদান করা হয়ে থাকে। এর আওতায় পড়ে জটিল অসুস্থতা সংক্রান্ত কভার, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত কভার, মাতৃত্বকালীন কভার ইত্যাদি।
নমনীয়তা বা ফ্লেক্সিবিলিটি:
মেডিক্লেম বিমায় কভারেজের ক্ষেত্রে তেমন ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে না।
তবে স্বাস্থ্য বিমা পরিকল্পনায় থাকে ফ্লেক্সিবিলিটি। অর্থাৎ প্রয়োজন অনুযায়ী তা বাড়ানো কিংবা কমানো যেতে পারে। পলিসির মেয়াদ পরিবর্তন করে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারেন পলিসিধারকেরা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, দীর্ঘ মেয়াদী পলিসি আবার প্রিমিয়ামের উপর ডিসকাউন্ট বা ছাড়ও প্রদান করে থাকে।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে খরচে নজর! অর্থ নিয়ে হোক নতুন ভাবনা-চিন্তা! দেখে নিন কী করা উচিত!
জটিল অসুখ সংক্রান্ত কভার:
জটিল অসুখের ক্ষেত্রে কোনও রকম কভারেজ দেয় না মেডিক্লেম বিমা।
তবে আবার পলিসির উপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য বিমা প্রায় ৩০ রকমের জটিল অসুখের ক্ষেত্রে কভারেজ দেয়। তার মধ্যে অন্যতম ক্যানসার, স্ট্রোক, কিডনি ফেলিওর ইত্যাদি।
টাকার পরিমাণ:
মেডিক্লেমের বিমা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত কভারেজের পরিমাণ কখনওই ৫ লক্ষের বেশি হয় না।
স্বাস্থ্য বিমা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এই কভারেজের পরিমাণটা প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা থেকে ৬ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ক্লেম:
মেডিক্লেম পরিকল্পনার আওতায় এক জন পলিসিধারক একাধিক ক্লেম ফাইল করতে পারেন, যতক্ষণ না বিমাকৃত অর্থের পরিমাণ ছাপিয়ে না-যাচ্ছে।
আবার স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে যতক্ষণ না নিজের কভারেজের পরিমাণ ছাপিয়ে না-যাচ্ছে, ততক্ষণ ক্লেম ফাইল করতে পারেন বিমাকারী। জটিল অসুখ, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে করা ক্লেমে কভারেজের পরিমাণ হয় প্রচুর। কিন্তু গোটা পলিসি মেয়াদের মধ্যে এক বারই এই ক্লেম করতে পারেন পলিসিধারকেরা।
হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে:
মেডিক্লেম বিমার সুবিধা নেওয়ার জন্য বিমা ধারককে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
স্বাস্থ্য বিমা সংক্রান্ত সুবিধা লাভ করার জন্য বিমা ধারককে হাসপাতালে ভর্তি না-হলেও চলবে।
ভারতের মতো দেশে মেডিক্লেম পলিসি না স্বাস্থ্য বিমা পলিসি কেনা উচিত?
আয়কর আইনের ৮০ডি ধারার অধীনে মেডিক্লেম এবং স্বাস্থ্য বিমা - উভয় ক্ষেত্রেই কর সংক্রান্ত সুবিধা পাওয়া যায়। তবে স্বাস্থ্য বিমা নেওয়ার জন্যই সাধারণত পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিমা বিশেষজ্ঞরা। কারণ স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে একটা সর্বাঙ্গীন বিমা কভারেজ পাওয়া সম্ভব। তবে সেরা স্বাস্থ্য বিমা পরিকল্পনা বেছে নেওয়ার আগে দেশে সেরা স্বাস্থ্য বিমা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির বিষয়ে জেনে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
যদিও সকলের জন্য সেরা বিমা কোম্পানি অথবা সেরা মেডিক্লেম পরিকল্পনা হয় না। বিমা সংক্রান্ত চাহিদা এক-এক জনের ক্ষেত্রে এক-এক রকম হয়ে থাকে। আর একটা প্ল্যান সকলের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ঠিক সে-ভাবেই, একটি বিমা কোম্পানি এক জন গ্রাহকেকে তুষ্ট করতে পারলেও বাকিদের যে তুষ্ট করতে পারবেই, তেমন কোনও কথা নেই। আর সেই কারণেই গ্রাহকদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানির প্রদান করা স্বাস্থ্য বিমা পরিকল্পনা তুলনা করে দেখতে হবে। আর সেটা করা উচিত নিজেদের চাহিদা এবং প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে।