বিনিয়োগের কাল: ফিক্সড ডিপোজিট এককালীন। অর্থাৎ থোক টাকা নির্দিষ্টি মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। সুদের হারও সেই সময়ই নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। একবার বিনিয়োগের পর নির্বাচিত মেয়াদের জন্য তা লক করা থাকবে। এই সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকৃত পরিমাণে কোনও সংযোজন করা যাবে না। লক ইন পিরিয়ড জুড়ে পূর্ব নির্ধারিত হারে সুদ জমা পড়বে। এখন গ্রাহক যদি বিনিয়োগ বাড়াতে চান তাহলে নতুন আরেকটা ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। একটা এফডি-তে বিনিয়োগের কোনও উর্ধসীমা নেই। অন্য দিকে, রেকারিং ডিপোজিটে মাসিক, ত্রৈমাসিক বা ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করা যায়। এটা ম্যানুয়ালি (অনলাইন বা অফলাইন) কিংবা পছন্দের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অটো ডেবিটের মাধ্যমে করা যেতে পারে। মাসিক ন্যূনতম ১০০ টাকা দিয়ে রেকারিং ডিপোজিট খোলা যায়। সর্বোচ্চ বিনিয়োগের কোনও উর্ধসীমা নেই।
advertisement
আরও পড়ুন: কোটি কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে এসেছে টাকা, আপনার ব্যালেন্স চেক করেছেন
মেয়াদ: ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ সাধারণত ৭ দিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। যাই হোক, দীর্ঘ মেয়াদের এফডি-তে উচ্চ হারে সুদ পাওয়া যায়। অন্য দিকে, রেকারিং ডিপোজিটে সর্বনিম্ন মেয়াদ ৬ মাস। সর্বোচ্চ ১০ বছর।
সুদের হার: ফিক্সড ডিপোজিটে দুধরণের সুদ প্রদানের বিকল্প রয়েছে। কম্যুলেটিভ এবং নন কম্যুলেটিভ। কম্যুলেটিভ সুদের হারে, ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মূল পরিমাণ এবং সঞ্চিত সুদ একসঙ্গে দেওয়া হয়। আর নন কম্যুলেটিভ সুদ মাসিক, ত্রৈমাসিক কিংবা ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে দেওয়া হয়। সেটা কীরকম?
আরও পড়ুন: কালীপুজো ও দীপাবলিতে বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক, সমস্যা হতে পারে ক্যাশ পেতে
ধরা যাক একজন বিনিয়োগকারী ৫ বছরের মেয়াদের জন্য ৭ শতাংশ সুদে ১০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। টিডিএস-এর পরে, ম্যাচুরিটির পরিমাণ হবে ১৩.৬৮ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্ক ৫ বছরে ৪০৮৮৮ টাকার টিডিএস কেটে নেয়। ব্যাঙ্ক টিডিএস হিসাবে যে পরিমাণ টাকা কাটে তার উপর আমানতকারী চক্রবৃদ্ধির সুবিধা নিতে পারে না। একটি আর্থিক বছরে সুদের আয় ৫০০০ টাকার বেশি হলে কোম্পানির আমানতের ক্ষেত্রে টিডিএস কেটে নেওয়া হয়।
রেকারিং ডিপোজিটে স্বল্প মেয়াদি সুদের সুবিধে পাওয়া যায় না। আরডি-র মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পূর্বনির্দিষ্ট হারে সুদ দেওয়া হয়। বিনিয়োগকারী সুদ সহ পুরো টাকা একসঙ্গে পান।
আয়কর: রেকারিং ডিপোজিট এবং ফিক্সড ডিপোজিটে করছাড়ের বিশেষ কোনও সুবিধে মেলে না। তবে ৫ বছরের লক ইন পিরিয়ড-সহ কিছু ট্যাক্স সেভিংস এফডি রয়েছে। তাতে বিনিয়োগ করলে আয়কর আইনের ৮০সি-র অধীনে করছাড়ের সুবিধে মেলে। অন্য দিকে, রেকারিং ডিপোজিটে কর ছাড়ের কোনও সুবিধে নেই।
ফিক্সড ডিপোজিট এককালীন বিনিয়োগ। তাই এতে রেকারিং ডিপোজিটের চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। কারণ এতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের সুবিধেও মেলে। কিন্তু এফডিতে বিনিয়োগ করতে হলে এককালীন মোটা অঙ্কের টাকাও থাকতে হবে। যাঁরা অল্প অল্প বিনিয়োগ করে মোটা অঙ্কের ফান্ড তৈরি করতে চান তাঁদের জন্য রেকারিং ডিপোজিট আদর্শ। এতে এককালীন রিটার্ন মিলবে, সঙ্গে জমা করা টাকার সুদও। মাথায় রাখতে হবে, এফডিতে একবারই টাকা দিতে হয়, কিন্তু আরডিতে তা নয়। একবার এফডিতে টাকা দিলেই বিনিয়োগকারীর কাজ শেষ। আরডি-তে একটি ব্যবধানে টাকা দিতে হয়, বিনিয়োগকারী যদি কিস্তি পরিশোধ করতে না পারেন, তাহলে ব্যাঙ্ক তাঁর অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিতে পারে। তাই বিনিয়োগ করার আগে কত টাকা আছে, বিনিয়োগের লক্ষ্য কী সে সব বুঝে নিতে হবে।
বিভিন্ন রকমের সুবিধের জন্যই বিনিয়োগকারীদের কাছে আরডি এবং এফডি এত জনপ্রিয়। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি থেকে বাঁচতে চাইলে এই দুই মাধ্যমে বিনিয়োগ সঠিক সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। এর কারণ হল সুদের পরিমাণের উপর ধার্য করা ট্যাক্স - বার্ষিক সুদের উপর ১০ শতাংশ টিডিএস ৪০,০০০ টাকার বেশি (প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ৫০,০০০ টাকা), বিনিয়োগকারীর রিটার্ন আরও কমিয়ে দেয়। মাথায় রাখতে হবে বিনিয়োগকারী যদি নিরাপদ এবং নিশ্চিত রিটার্ন খোঁজেন তবে এই দুটি মাধ্যমই সেরা বিকল্প।