আবার কখনও কখনও এই সময়সীমা বাড়ানো হয়। বিগত দুই অর্থবর্ষেই অতিমারীর কারণে করদাতাদের এই সুবিধা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়সীমা বেড়ে গিয়েছে বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আসলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি ও সমস্যা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাঞ্ছনীয়। এমনটাই বলছেন ব্যাঙ্কবাজার (BANKBAZAAR)-এর সিইও আদিল শেঠি (ADHIL SHETTY)।
advertisement
আরও পড়ুন: মোবাইলের মতো বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে একাধিক সংস্থা, আজ লোকসভায় বিল পেশ
আয়কর রিটার্ন বা আইটিআর (ITR) হল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। যেখানে করদাতার আয় এবং একটি অর্থবর্ষে তিনি কত টাকা কর দিচ্ছেন, তার হিসেব থাকে। আর নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়সীমার পর আইটিআর দাখিল করা হলে তাকে ‘বিলেটেড রিটার্ন’ (Belated Return) বলা হয়।
এবার দেখে নেওয়া যাক, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আইটিআর দাখিল না-করলে করদাতা কী কী সমস্যার মুখে পড়বেন!
আরও পড়ুন: পিএম কিষাণের লভ্যার্থীদের জন্য বাম্পার খবর! বড় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর Tweet
জুটতে পারে শাস্তি:
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার অর্থ হচ্ছে কর সংক্রান্ত বিষয়ে করদাতা বেশ অনুগত রয়েছেন, সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে আইটিআর দাখিল করার ক্ষেত্রে শেষ দিন যদি পেরিয়ে যায়, সে-ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা করার কোনও কিছু নেই। কারণ এখনও পর্যন্ত হাতে সময় রয়েছে। অর্থাৎ করদাতা আইটিআর দাখিল করার জন্য চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবেন। তবে সে-ক্ষেত্রে করদাতাকে শাস্তি স্বরূপ জরিমানা দিতে হবে। যদি করদাতার করযোগ্য আয় বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তা-হলে তাঁকে ৫০০০ টাকার জরিমানা দিতে হবে। আবার যে-সব করদাতার করযোগ্য আয় বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাঁদের ১০০০ টাকা জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। এর পাশাপাশি, ২৩৪এফ ধারা অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কোনও কর যদি পরিশোধ করা না-থাকে, তা-হলে তার উপরে যে সুদ হয়, সেই সুদও জরিমানার সঙ্গে দিতে হবে। তবে যাঁরা বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষের কম হওয়া সত্ত্বেও ডকুমেন্টেশনের উদ্দেশ্যে এখনও আয়কর রিটার্ন ফাইল করছেন, তাঁদের কোনও শাস্তি কিংবা জরিমানা করা হবে না।
সুদ প্রদান বা ইন্টারেস্ট পেমেন্ট:
নির্ধারিত শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর আয়কর রিটার্ন দাখিল করলে করদাতাকে বকেয়া পরিমাণের উপর ১ শতাংশ সুদ দিতে হবে। ৩১ জুলাই থেকে পূর্ববর্তী ভাবে সুদ-সহ বকেয়া পরিমাণ পরিশোধ করতে হবে। আর শেষ দিন বা নির্ধারিত মেয়াদ পেরোলেই সুদের গণনা শুরু হয়। অর্থাৎ আইটিআর দাখিল করতে যত দেরি হবে, তত বেশি টাকা করদাতাকে সুদের আকারে পরিশোধ করতে হবে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আইটিআর দাখিল করা উচিত।
আরও পড়ুন: দেশে চালু হল Akasa Air! নতুন উড়ান সংস্থার পরিষেবা কেমন? টিকিটের দাম থেকে রুট...
করদাতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হতে পারে:
আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে দেরি হলে কিংবা তা দাখিল করতে না-পারলে আয়কর দফতর করদাতাকে আইনি নোটিস পাঠাতে পারে। আর এই প্রসঙ্গে করদাতার ব্যাখ্যায় যদি আয়কর দফতর সন্তুষ্ট না-হয়, তা-হলে তারা আইনি কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ করতে পারে।
করদাতা এই সব সুবিধা হারাবেন:
সময়ে আইটিআর দাখিল করার অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে তাতে দেরি হলে করদাতা সেই সব সুবিধা হারাতে পারেন। ধরা যাক, এক জন করদাতা অদূর ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তা-হলে সে-ক্ষেত্রে তাঁর আগের বছরের আইটিআর-এর প্রয়োজন হতে পারে। কারণ আয় সংক্রান্ত তথ্য এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই করে দেখতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই করদাতার আগের বছরের আইটিআর চাইতে পারেন। সময়ের মধ্যে আইটিআর দাখিল করলে করদাতা সংশ্লিষ্ট অর্থবর্ষে তাঁর ক্ষতির খতিয়ান ঘোষণা করার সুবিধা পাবেন। সেই সঙ্গে রিটার্ন ফাইল করার সময় করদাতা ক্ষতি মকুব ক্লেম করতে পারেন। অথবা পরের অর্থবর্ষেও সেই বিষয়টিকে যোগ করা যেতে পারে। এখানেই শেষ নয়, ভিসার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন আয়কর রিটার্ন। কারণ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেই সব দেশের দূতাবাস করদাতার আইটিআর স্টেটমেন্ট চাইতে পারে। এর মাধ্যমে তারা ওই ব্যক্তির আয় এবং চাকরিবাকরির বিষয়ে ধারণা পেতে পারে। এ-ছাড়াও আইটিআর দাখিলের মাধ্যমে ট্যাক্স রিফান্ডও চাওয়া যেতে পারে। তাই আদিল শেঠির পরামর্শ, কোনও ব্যক্তির বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকার কম হলেও এই সব সুবিধা পাওয়ার জন্য তাঁর অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করা উচিত।